শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ও পরিতৃপ্ত ঘুম একান্ত প্রয়োজন। ব্যস্ত দিনের ক্লান্তি দূর করে ঘুম। সারা দিনের পরিশ্রমের পর নির্বিঘ্ন ঘুম দিতে পারে প্রশান্তি। সঠিক ঘুম না হলে মনের ওপর চাপ পড়ে। বিষণ্নতা ও ক্লান্তি ভর করে। একপর্যায়ে দেখা দেয় বড় ধরনের রোগব্যাধি। তাই প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
কোনো ব্যক্তির যদি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কম ঘুম হয়, তাহলে তাঁকে মেডিকেলের ভাষায় ইনসমনিয়া বলে। ইনসমনিয়া হচ্ছে একটি অনিদ্রাজনিত রোগ বা একধরনের স্লিপিং ডিজঅর্ডার, যাতে ঘুমের পরিমাণ অথবা ঘুমের গুণগত মান যেকোনো একটি বা উভয়টিতেই সমস্যা থাকে।
ইনসমনিয়া মূলত দুই ধরনের
* প্রাইমারি ইনসমনিয়া, যার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
* সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া। ইনসমনিয়া যখন অন্য কোনো কারণে, অর্থাৎ কোনো মানসিক বা শারীরিক রোগের কারণে হয়। যেমন—
১। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি, টেনশন ইত্যাদি।
২। বিষণ্নতা রোগ বা ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার।
৩। শুচিবায়ু বা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)।
৪। মাদকাসক্তিসহ অন্য আসক্তি। যেমন ইন্টারনেট বা ফেসবুক আসক্তি ইত্যাদি।
৫। গুরুতর মানসিক ব্যাধি বা মেজর সাকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার। যেমন সিজোফ্রেনিয়া, ডিলিউশনাল ডিজঅর্ডার, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।
৬। কিছু শারীরিক অসুস্থতা। যেমন অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ, বাতব্যথাজনিত রোগ, ক্যানসার ইত্যাদি। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায়ও অনেক মায়েদেরও ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
ইনসমনিয়া থেকে মুক্তির উপায়
যে রোগীদের ঘুম সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস ও ধারণা থাকে। প্রথমেই আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে–
* কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) একটি কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি। এ ছাড়া রয়েছে স্লিপ রেসট্রিকশন থেরাপি এবং রিল্যাক্সেশন থেরাপি।
* সন্ধ্যার পর চা–কফির মতো উত্তেজকজাতীয় খাবার বা পানিও পরিহার করতে হবে।
* রাতের খাবার রাত ৯-১০টার মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। রাতের বেলা ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
* প্রতি রাতে একই সময় ঘুমাতে হবে এবং সকালে একই সময় ঘুম থেকে উঠতে হবে।
* বিছানা শুধু ঘুম বা বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতে হবে। বিছানায় শুয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
* যদি ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে, তবে বিছানা ছেড়ে উঠে হাঁটাহাঁটি বা মেডিটেশনের মতো স্বস্তিদায়ক কাজ করা যেতে পারে।
* যত দেরিতেই ঘুম আসুক না কেন, সকালে পূর্বনির্ধারিত একই সময় ঘুম থেকে উঠলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
* ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোসল করা যেতে পারে।
বিভিন্ন রকম সাইকোথেরাপি যখন পরিপূর্ণভাবে কাজ না করবে বা ব্যর্থ হবে, তখন ফার্মাকোথেরাপি বা ওষুধ প্রয়োজন হবে। সে জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ছবি: পেকজেলস ডট কম