ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ত্বক, ইমিউন সিস্টেম ও নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক রাখে। ভিটামিন এ আমাদের বৃদ্ধি, বিকাশ, ইমিউন ফাংশন ও প্রজননের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন এ কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন এ হার্ট, ফুসফুস, কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তবে এই ভিটামিন আমাদের কতটুকু গ্রহণ করতে হবে কিংবা বেশি বা কম গ্রহণ করলে কী হতে পারে, কোথায় মিলবে ভিটামিন এ—এসব বিষয় মাথায় থাকলে আমাদের ভুল কম হবে।
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ কেবল প্রাণিজ খাদ্যে উপস্থিত থাকে এবং এর প্রোভিটামিন ক্যারোটিনয়েড উদ্ভিদে পাওয়া যায়। ভিটামিন এ মানব কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ক্ষতিকারক রোগজীবাণু ধ্বংসকারী শ্বেত রক্তকণিকা সক্রিয় করে ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে।
ভিটামিন এ ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য পরজীবীর সংক্রমণ ঘটিয়ে শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্ট, অন্ত্রের ট্র্যাক্ট ও মূত্রনালির পৃষ্ঠের আস্তরণের অঞ্চলগুলোর গঠন ও সুরক্ষা করে থাকে। ভিটামিন এ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রতিবন্ধক হিসেবে ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনকে কাজ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ–কে অ্যান্টিক্সেরোফথ্যালমিক ফ্যাক্টর বা উজ্জ্বল চোখের ভিটামিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রেটিনল হলো রক্তে ভিটামিন এ–এর প্রধান সক্রিয় রূপ। রেটিনাইল পামিটেট হলো ভিটামিনের স্টোরেজ ফর্ম।
• প্রাণিজ উৎস: মাছের তেল, ডিমের কুসুম, দুধ, দই ইত্যাদি। প্রি–ফর্মড ভিটামিন এ মাংস, মাছ ও দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া যায়।
• উদ্ভিজ্জ উৎস: গাজর, শিম, পালংশাক, মিষ্টি আলু, টমেটো ইত্যাদি। বিটা-ক্যারোটিন হলো একটি প্রোভিটামিন বা ভিটামিন এ-এর একটি অগ্রদূত, যা উদ্ভিদে পাওয়া যায়। বিশেষ করে গাঢ় রঙের ফল, শাকসবজি ও তৈলাক্ত ফল। বিটা-ক্যারোটিন নিজেই একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, তবে শরীর এটিকে প্রয়োজন অনুসারে ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করতে পারে।
ভিটামিন এ শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর অতিরিক্ত মাত্রাও ক্ষতিকর হতে পারে।
• দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: বিড়ম্বনার বিষয় হলেও অতিরিক্ত ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি দৃষ্টিকে ঝাপসা করে তুলতে পারে, রাতকানা রোগের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কর্নিয়ার ক্ষতিও করতে পারে।
• হাড়ের সমস্যা: অতিরিক্ত ভিটামিন এ হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
• লিভারের সমস্যা: ভিটামিন এ লিভারে জমে থাকতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
• ত্বকের সমস্যা: ত্বকে খুশকি, চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
• মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব: অতিরিক্ত ভিটামিন এ মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও অন্যান্য পাকস্থলীর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
• শিশুদের ক্ষেত্রে: শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভিটামিন এ হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত করে, লিভারের ক্ষতি করে এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
যেসব কারণে অতিরিক্ত ভিটামিন এ খাওয়া উচিত নয়
• সুষম খাদ্য: আমাদের দৈনন্দিন খাবার থেকেই আমরা যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ পেয়ে থাকি।
• অতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরের জন্য ক্ষতিকর: অতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরে জমে থাকতে পারে এবং বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
• সাপ্লিমেন্টের অতিরিক্ত মাত্রা: ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার সময় সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভিটামিন এ-এর অভাবের ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
• দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: ভিটামিন এ-এর অভাব রাতকানা রোগের একটি প্রধান কারণ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ভিটামিন এ-এর অভাব থাকলে কর্নিয়ার আলসার ও অন্ধত্বও হতে পারে।
• ত্বকের সমস্যা: ভিটামিন এ ত্বকের কোষকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে শুষ্ক ত্বক, খুশকি ও একজিমা হতে পারে।
• ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া: ভিটামিন এ আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এর অভাব সংক্রমণের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।
• বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া: শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ-এর অভাব বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং শারীরিক বিকাশকে প্রভাবিত করে।
• অন্যান্য সমস্যা: ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্যান্য সমস্যা, যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি, হৃদ্রোগ ও কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩ বছর পর্যন্ত: প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম
৪-৮ বছর: প্রতিদিন ৯০০ মাইক্রোগ্রাম
৯-১৩ বছর: প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ মাইক্রোগ্রাম
১৪-১৮ বছর: প্রতিদিন ২ হাজার ৮০০ মাইক্রোগ্রাম
১৯+ বছর: প্রতিদিন ৩ হাজার মাইক্রোগ্রাম
মনে রাখবেন, ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ও কম ভিটামিন এ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কম হলেও চোখের ক্ষতি, বেশি হলেও চোখের ক্ষতি। তাই ভিটামিন গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিমাপ জেনে খাবেন। ভিটামিন মানেই শক্তি নয়, বেশি খেয়ে ক্ষতিও হতে পারে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: পেকজেলসডটকম