
রাতের ঘুম নিয়ে আলোচনা আসলে আমরা সচরাচর ভাবি, পর্যাপ্ত ঘুম হলেই হলো। কত ঘণ্টা ঘুমালে ভালো, কখন ঘুমানো উচিত, বা কখন ঘুম থেকে উঠলে শরীর চনমনে থাকে ইত্যাদিও কিন্তু ভাবতে হবে। কিন্তু নতুন একটি গবেষণা বলছে, এগুলো তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটেই,তবে আরেকটি বিষয় রয়েছে, যা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই।

আর সেই ছোট্ট অভ্যাসটিই হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে আর হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আর গবেষণার ফলাফল থেকে বহু বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে শীতকালে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
স্লিপ অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠা অর্থাৎ ঘুমের ক্ষেত্রে একই রুটিন বজায় রাখা হৃদস্বাস্থ্যে খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জার্নালটিতে প্রকাশিত এই গবেষণায় স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ককে দুই সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাঁদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার নির্দেশ দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীরা কত ঘণ্টা ঘুমাবেন এটি নিয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। কিন্তু ঘুমানোর সময় যেন একই হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়।

এই ছোট্ট পরিবর্তনই মাত্র দুই সপ্তাহে রক্তচাপে পরিমাপযোগ্য উন্নতি ঘটায়। গবেষকরা বলছেন, এই ফলাফল একেবারেই তুচ্ছ করার মতো নয়। কারণ এতে খাদ্যাভ্যাস বদলানো, নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করা বা বড় ধরনের জীবনযাপনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়ছে না। শুধু ঘুমের সময় ঠিক রেখেই হৃদস্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আনা সম্ভব হয়ে উঠছে। পাশাপশি এটি এমন একটি পরিবর্তন, যার জন্য কোনো খরচ নেই, কোনো যন্ত্রপাতি লাগে না এমনকি খুব বেশি পরিশ্রমও প্রয়োজন হয় না।
সার্কাডিয়ান রিদম ও রক্তচাপের সম্পর্ক
ঘুমের সময় একই থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীণ জৈবিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম স্থিতিশীল থাকে। আর এই রিদম মেলাটোনিন ও কর্টিসলের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যা ঘুমের গভীরতা, ঘুম থেকে ওঠা এবং রক্তচাপের ওঠানামাকে প্রভাবিত করে।

আর অনিয়মিত ঘুম যেমন সপ্তাহান্তে দেরি করে ঘুমানো, রাত জাগা বা বারবার ঘুমানোর সময় পরিবর্তন করা, এই রিদমকে বিঘ্নিত করে। এমনকি স্বল্পমাত্রার অনিয়মও হৃদস্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যা এই গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। যদিও গবেষণাটি ছোট আকারের এবং এতে কোনো নিয়ন্ত্রণ গোষ্ঠী ব্যবহার করা হয়নি, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয় যে ঘুমের সময় ঠিক রাখা দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ ও হৃদস্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে পারে।
নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরির সহজ উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট কিছু অভ্যাসই ঘুমের সময়কে স্থিতিশীল রাখতে পারে।
রোজ একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।এমনকি সপ্তাহান্তেও একই রুটিন মানতে হবে।
সকালে অন্তত আধাঘণ্টা সূর্যালোকে থাকতে হবে। এটি সার্কাডিয়ান রিদমকে শক্তিশালী করে।
নিজের জন্য নির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত একটি ঘুমানোর সময় ঠিক করতে হবে।

ঘুমানোর আগে মনকে প্রশান্ত রাখতে হালকা স্ট্রেচিং, বই পড়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যায়।
সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন নেওয়া কমানো এবং স্ক্রিন-টাইম হ্রাস করুন।
শোবার ঘরে ঘুমদায়ক পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি।
সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ, হার্ট ফাউন্ডেশন নিজিল্যান্ড
ছবি: এআই ও পেকজেলস