সকালে ১৫ মিনিটের অতিরিক্ত ঘুম যেভাবে বৃদ্ধি করতে পারে তরুণদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বর্তমান সময়ে তরুণদের জন্য যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব। রাত জেগে পড়াশোনা, কাজ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো এখন যেন আজকালের তরুণদের প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। কখন যে রাত কেটে গিয়ে ভোর হয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। আর সকাল হওয়া মাত্রই তো আবার ছোটাছুটি শুরু হয় স্কুল, কলেজ কিংবা টিউশনির দিকে; যা প্রতিনিয়ত শরীর ও মস্তিষ্ককে বঞ্চিত করছে একটি ভালো মানের ঘুমের সুযোগ থেকে। আর এটি অজান্তেই তাদের শরীর ও মনের জন্য ডেকে আনছে বড় বিপদ। কারণ, ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য নয়, বরং এটি আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরের কার্যকারিতা বজায় রাখার অন্যতম প্রধান উপায়।

সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাজ্যের এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ এক তথ্য। গবেষণাটি ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৩ হাজার ২২২ জন কিশোর-কিশোরীর ওপর পরিচালিত হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলটি দৈনিক গড়ে ঘুমায় ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট, দ্বিতীয় দলটি দৈনিক গড়ে ঘুমায় ৭ ঘণ্টা ২১ মিনিট এবং তৃতীয় দলটি দৈনিক গড়ে ঘুমায় ৭ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। মাত্র ১৫ মিনিট ঘুমের পার্থক্যেই পরিলক্ষিত হয় উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু পরিবর্তন। সবচেয়ে বেশি ঘুমানো দলটির ব্রেইন স্ক্যান করে তারপর বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের মস্তিষ্কের গঠন তুলনামূলক বড় এবং নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগ আরও মজবুত ও কার্যকর।

শুধু তা–ই নয়, বেশি ঘুমানো এই দলের হৃৎস্পন্দনের হার কম, যা মানসিক স্থিতি ও শরীরের সুস্থতারই ইঙ্গিত দেয়। পাশাপাশি পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা, জটিল বিষয় বুঝতে পারা এবং সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় তাঁরা এগিয়ে ছিল। গবেষকেরা বলছেন, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেকে পুনরায় রিচার্জ করার সুযোগ পায়; যা শেখার প্রক্রিয়া, স্মৃতি গঠন এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। এই ঘুম হতে হবে টানা, গভীর এবং নিরবচ্ছিন্ন—অর্থাৎ ঘন ঘন ব্যাহত হওয়া চলবে না। শুধু কিশোর-কিশোরী নয়, তরুণ ও তরুণীদের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখা, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ঘুমের ভূমিকা অসামান্য।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ঘুমের সময় শরীরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ হয়, যা শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়; বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, হাড়ের গঠন এবং বিপাকক্রিয়ার সঙ্গেও সরাসরি জড়িত। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এসব প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে, যার ফলে সহজেই ক্লান্তি আসে, মনোযোগে ঘাটতি তৈরি হয় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

বিশেষ করে তরুণদের জন্য ঘুমের ঘাটতি মানেই শুধু শারীরিক ক্লান্তি নয়, বরং এটি তাঁদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে একটি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই বয়সীদের উচিত রাতে ঘুমকে গুরুত্ব দেওয়া, নির্ধারিত সময়ে শুয়ে পড়া এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে দিন শুরুর আগে কয়েক মিনিট অতিরিক্ত ঘুমিয়ে নেওয়া— এই অভ্যাসগুলোই তরুণদের জীবনে আনতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব।

তাই শুধু সকালে উঠে ক্লান্ত শরীর নিয়ে দিনের কাজ শুরু না করে, যদি সম্ভব হয় অন্তত ১৫ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমান। এই সামান্য ঘুমই আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে অনেক গুণ। জীবনযাত্রায় এমন ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তনই এনে দিতে পারে বড়সড় সুফল। অতএব সুস্থ থাকতে, মনোযোগ ধরে রাখতে ও নিজের সেরাটি পেতে হলে ঘুমের কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন