সহজ এই তিন উপকরণে আপনার অন্ত্র হবে নতুনের মতো কার্যকর
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে আপনার অন্ত্র পরিষ্কার রাখা দরকার? অন্ত্র এমন একটি অঙ্গ, যেখানে আপনার সব খাবার রান্না হয়। আমরা কিচেন পরিষ্কার রাখার জন্য কত কিছুই না করি। কিন্তু নিজের শরীরের ভেতরে যে কিচেন রয়েছে, তা পরিষ্কার করার কথা চিন্তা করি না। অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে কী ঘটে, তা জানলে আজই আপনি নিজের অন্ত্র পরিষ্কারের উপায় খুঁজবেন।

অন্ত্র পরিষ্কার রাখা দরকার
অন্ত্র পরিষ্কার রাখা দরকার

শরীরে অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি কেবল অস্বস্তিকর নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে যেসব সমস্যা হতে পারে
• কোষ্ঠকাঠিন্য: এটি অন্ত্র পরিষ্কার না থাকার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। মলত্যাগ কম হওয়া, মল শক্ত হওয়া ও পেট ফোলা অনুভূতি হওয়া।
• পেট ফোলা ও গ্যাস: অন্ত্রে খাবার পরিপূর্ণভাবে হজম না হলে পেট ফুলে ওঠে এবং গ্যাস তৈরি হয়। এতে অস্বস্তি, বমি বমি ভাব ও পেটের ব্যথা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

• পুষ্টির ঘাটতি: অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে শরীরের পুষ্টি উপাদানগুলো যথাযথভাবে শোষিত হয় না। এর ফলে দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া ও অন্যান্য পুষ্টি ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
• ত্বকের সমস্যা: অন্ত্রের স্বাস্থ্য ত্বকের স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে ত্বকে ফুসকুড়ি, একজিমা ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস: অন্ত্রে পচন ঘটলে দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস তৈরি হয়, যা মুখ দিয়ে বের হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাসের কারণ হতে পারে।
• মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া: অন্ত্রকে মস্তিষ্কের দ্বিতীয় মস্তিষ্ক বলা হয়। অন্ত্রের স্বাস্থ্য মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে মনোযোগ কমে যাওয়া, মেজাজ খারাপ হওয়া ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
• দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা: দীর্ঘদিন অন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে কোলন ক্যানসার, ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD) ও অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

অন্ত্র পরিষ্কারের প্রাকৃতিক উপায়

অন্ত্র পরিষ্কার করার একটি সহজ ও প্রাকৃতিক উপায় হলো লেবু, গাজর ও কমলা। তিন দিনের ডিটক্স রেসিপিটি অন্ত্রকে পরিষ্কারে নতুন করে দেবে। এই উপাদানগুলো পুষ্টিতে ভরপুর, যা টক্সিন বের করে দিতে, হজমে সহায়তা করতে এবং অন্ত্র ও যকৃতের স্বাস্থ্য, শক্তি ও কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মাত্র তিন দিন পরে আপনি হালকা আরও শক্তিমান বোধ করবেন এবং আপনার শরীর চাঙা হয়ে উঠবে!

কেন এই উপাদান কাজ করে

• লেবু: লেবু একটি শক্তিশালী ডিটক্সিফায়ার, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। এটি অন্ত্রের কার্যকারিতাকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। এর প্রাকৃতিক অ্যাসিড বর্জ্য ভেঙে হজমে সহায়তা করে।
• গাজর: গাজরে ফাইবার থাকে, যা অন্ত্র পরিষ্কার করতে ও নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে। এগুলোতে বিটা-ক্যারোটিনও রয়েছে, যা অন্ত্র থেকে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করে।
• কমলা: কমলা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এতে প্রাকৃতিক শর্করা থেকে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কমলার ফাইবার স্বাস্থ্যকর হজম সহজ করে।

উপকরণ

১টা লেবুর রস
১টা বড় গাজর (খোসা ছাড়ানো ও কাটা)
১টা কমলার রস
১ গ্লাস পানি

প্রণালি

ব্লেন্ডারে ১টি লেবুর রস ও ১টি কমলার রস নিন। এর সঙ্গে গাজরের টুকরা দিয়ে ব্লেন্ড করুন। মসৃণ হওয়া পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন। এরপর এক গ্লাস পানি দিয়ে আবার ব্লেন্ড করুন। এবার প্রস্তুত হয়ে গেল অন্ত্র পরিষ্কার করার ডিটক্স ড্রিংকস।

সেবনের পদ্ধতি

সেরা ফলাফলের জন্য সকালে খালি পেটে এই ডিটক্স মিশ্রণটি পান করুন। সকালে প্রথমবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পর আবার এই মিশ্রণ দ্বিতীয়বার বানিয়ে পুনরায় পান করুন, দুপুরের আগে পানি ছাড়া আর কিছু খাবেন না। দুপুর থেকে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। এভাবে তিন দিন করতে হবে।

এটি কীভাবে সাহায্য করে


প্রথম দিন: লেবু ও কমলার রস বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে ও হজমের উন্নতি করতে কাজ শুরু করার সঙ্গে আপনি আরও বেশি উজ্জীবিত বোধ করতে শুরু করবেন।
দ্বিতীয় দিন: গাজর থেকে পাওয়া ফাইবার আপনার অন্ত্র পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে, নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি প্রচার করবে ও বর্জ্য পরিষ্কার করবে।
তৃতীয় দিন: আপনার লিভার পুনরুজ্জীবিত বোধ করবে এবং আপনার শরীর সতেজ ও ডিটক্সিফায়েড হবে।

অন্ত্র পরিষ্কার রাখার জন্য যা মনে রাখতে হবে

এই তিন দিন প্রসেস করা খাবার, বেকারির খাবার, মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সারা দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মানসিক চাপ অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই যোগ, ধ্যান বা অন্য কোনো শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন।
সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য সকালের নাশতায় এই মিশ্রণ দুই গ্লাস এক ঘণ্টা পরপর দুবার পান করুন। স্বাভাবিক যে নাশতা খান, তা তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখুন। মাত্র তিন দিন পর আপনার অন্ত্র ও লিভার নতুনের মতো হয়ে যাবে। আপনাকে সতেজ ও স্বাস্থ্যকর লাগবে!
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

ছবি: পেকেজলসডটকম

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন