পরিবারের সবার সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আর ভালো থাকার পেছনে মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন মা আসলে কেমন আছেন? সব কিছুর মাঝে এ ব্যাপারটি যেন এক প্রকার অবহেলায় রয়ে যায়। পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে, সকলের পরিচর্যা করে জীবন কাটিয়ে দেন মা। তাই শুধু মা দিবসে উইশ করার মধ্য দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ না করে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রত্যেক মায়েরই করা উচিত। আর সে দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। কারণ মায়েরা সহজে নিজের প্রয়োজনের কথা বলেন না আর ভাবেনও না।
বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা
বছরে একবার পূর্ণাংগ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে তা মায়ের যেকোনো সুপ্ত বা লক্ষণবিহীন রোগ দ্রুত শনাক্ত করতে বেশ কার্যকরী হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করে এসব রোগ শনাক্ত করা যেতে পারে। যেমন, রক্তচাপ, বিএমআই, ওয়েট পরিমাপ, ব্লাড টেস্ট (সিবিসি, লিপিড প্রোফাইল, গ্লুকোজ)। এসব পরীক্ষা করে আগে থেকে সাবধান হলে বড় বড় রোগও রুখে দেওয়া যায়। এ টেস্টগুলো ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানিমিয়া মতো রোগকে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে সক্ষম।
গাইনোকোলজিক্যাল ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরীক্ষা
একজন মহিলার জন্মের পর থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার প্রজনন স্বাস্থ্য। নিয়মিত গাইনোকলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া তার সুস্বাস্থের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এসব পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে,
প্যাপ স্মিয়ার (প্রতি ৩ বছরে) গর্ভাশয় ক্যান্সারের পরীক্ষা করার জন্য
যে কোনো অস্বাভাবিকতা খুঁজে বের করতে পেশী পরীক্ষণ
স্তন পরীক্ষণ বা মেমোগ্রাফি (বিশেষ করে ৪০ বছর পর) স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য
এসব পরীক্ষা বিভিন্ন প্রজনন স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বা স্ত্রীরোগ মোকাবেলায় বেশ কার্যকর।
বোন ডেনসিটি বা হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা
নারীদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশেষত একাধিক সন্তান জন্মদান বা মেনোপজের পর উল্লেখযোগ্যভাবে হাড় ক্ষয় হতে পারে। এ বয়সে তারা হাড়ের অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ফাঁপা হয়ে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এই অবস্থা হাড়কে ভঙ্গুর ও দুর্বল করে তোলে। যদি আপনার মায়ের বয়স চল্লিশের বেশি হয় আর শরীরের ব্যথার অনুভূতি থাকে তবে এ বোন ডেনসিটি টেস্ট করানো উত্তম।
থাইরয়েড পরীক্ষা
হাইপো বা হাইপার থাইরয়েডিজম বর্তমানে নারীদের মধ্যে খুব সাধারণ একটি রোগে পরিনত হয়েছে। কিন্তু হালকা উপসর্গের কারণে এ রোগটি প্রায়ই অনির্ণীত থেকে যাচ্ছে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (বিশেষ করে থাইরয়েড গ্রন্থির) অনেক নারীরই থাকে। এর কারনে নারীদের মধ্যে ক্লান্তি, মুড সুইং বা অস্বাভাবিক ওজন পরিবর্তনের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা আপনার মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একধাপ এগিয়ে রাখায় কার্যকর হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা
মায়েদের স্বাস্থ্যে বিষন্নতা বা দুশ্চিন্তা একটি দীর্ঘমেয়াদি খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের নিয়মিত পরিচর্যা আপনার মায়ের জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ হতে পারে। এটি আপনার মায়ের সঙ্গে ভালো বন্ডিং তৈরি করতেও বেশ কার্যকর।
পরিবার যদি সৌরজগত হয়, তবে মা হচ্ছেন সূর্য। সারা জীবন ধরে তিনি আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য সবটুকু করে আসছেন। তাই মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো কোনো বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন। তাই শুধু মা দিবসে উইশ করার মধ্যে নিজের ভালোবাসা সীমাবদ্ধ না রেখে মাকে নিয়ে করিয়ে আনুন এই পরীক্ষাগুলো। এটিই হতে পারে আপনার মায়ের জন্য মা দিবসের সেরা উপহার।
সূত্র: নিউজ১৮ ডট কম
ছবি: ইন্সটাগ্রাম