প্রচণ্ড এই গরমে আমরা তরমুজ খাব, এটাই স্বাভাবিক। অপরিপক্ব তরমুজের রং সাদা থেকে লাল করার জন্য বা স্বাদে মিষ্টি করার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করে। আর এতে হতে পারে মারাত্মক সব ক্ষতি।
কৃত্রিমভাবে তরমুজের রং লাল করতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ (বাইক্সিন বা রেড ডাই-২) আর মিষ্টি করতে (সোডিয়াম সাইক্লোমেট) ও স্যাকারিন (১০: ১ হারে) ব্যবহৃত হয়। এসব পদার্থ পানিতে গুলে ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা হয়ে থাকে। সাধারণ চিনির চেয়ে সোডিয়াম সাইক্লোমেট ৩০ থেকে ৫০ গুণ এবং স্যাকারিন ৫০০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি মিষ্টি।
এছাড়া অনেক সময় অসময়ে দ্রুত তরমুজ উৎপাদনে নানা ধরনের রাসায়নিক হরমোন ব্যবহার হয়, যা শরীরের জন্য শুধু ভয়ংকর নয়, এতে মানুষের শরীরে হরমোনের চরিত্র বদলে দিতে পারে। এমন কি প্যাংক্রিয়াস, থাইরয়েড ও পিনিয়ালের মতো হরমোন গ্লান্ডগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে এসব হরমোন।
কৃত্রিম উদ্ভিদ বৃদ্ধিকারী হরমোন বা উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক (PGRs) হলো এমন রাসায়নিক পদার্থ, যা প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত উদ্ভিদ হরমোনের প্রভাব অনুকরণ করে, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশকে পরিবর্তন করে। এমন কয়েকটি হলো, কাইনেটিন, ড্যামিনোজাইড ও GA3–এর মতো সিন্থেটিক গিবেরেলিন। এগুলো এমন রাসায়নিক পদার্থ, যা সংশ্লেষিত হয় বা গাঁজনপ্রক্রিয়া থেকে উদ্ভূত। এসব রাসায়নিক পদার্থকে ডিজাইন করা হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভূত উদ্ভিদ হরমোনের ক্রিয়া অনুকরণ করার জন্য। এসব আবার ফাইটোহরমোন নামেও পরিচিত। কৃত্রিম পিজিআরগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে; এর মধ্যে আছে ফুল ফোটানো, ফলের আকার বৃদ্ধি, ফসলের ফলন উন্নত করা এবং চাপ সহনশীলতা বৃদ্ধি করা।
এবার চলুন দেখি এই বাইক্সিন ডাই, রেড ডাই-২, স্যাকারিন বা সোডিয়াম সাইক্লোমেট খেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে আমাদের শরীরে।
সোডিয়াম সাইক্লোমেট
দীর্ঘদিন এ বিষ খেলে মানুষের প্রদাহ হতে বাধ্য। এ ছাড়া আরও হতে পারে-
· ব্লাডার (মূত্রথলি) ক্যানসার;
· টিউমার;
· পুরুষত্ব নষ্ট হওয়া;
· উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া;
·নারীদের ব্রেস্ট ক্যানসার হতে পারে।
স্যাকারিন
দীর্ঘদিন স্যাকারিন খেলে যা যা ক্ষতি হতে বাধ্য-
· অস্থিরতা, বিশেষত হাত ও পা কাঁপা বা রেস্টলেস লেগ অর হ্যান্ড সিনড্রোম;
· মাথা ও পেশিতে ব্যথা অনুভূত হওয়া;
বাইক্সিন ডাই
· কিডনি প্রদাহ বাড়তে পারে এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
·ব্লাডার বা মূত্রথলিতে পাথর হতে পারে;
·রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে;
·অনিদ্রা হতে পারে এবং
·শরীরের বিভিন্ন অংশে এলার্জি দেখা দিতে পারে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময়কেন্দ্র
ছবি: পেকজেলস ডট কম