শরীরকে সুস্থ, নীরোগ এবং শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ ঠিক রাখতে হাঁটার বিকল্প নেই। মাত্র ৩০ মিনিট টানা হাঁটলে শরীরের প্রায় ২০০ ক্যালরি খরচ হয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটি করলে পায়ের শেপ বা গঠন ঠিক থাকে। পেট এবং পায়ের পেশির টোন ঠিক থাকে। ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপ ঠিক রাখে। তা ছাড়া হৃদ্যন্ত্রের সক্রিয়তা বাড়ায়। যাঁরা হার্ট ও ডায়াবেটিসের রোগী, তাঁদেরকে ডাক্তারের দেওয়া প্রয়োজনীয় ওষুধগুলোর মধ্যে অন্যতম ওষুধ এই হাঁটাহাঁটি।
হাঁটা সবচেয়ে সহজ ব্যায়ামের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও প্রতিদিনের ব্যস্ততায় কিছু সময় হাঁটার জন্য ব্যয় করা সচরাচর সবার হয়ে ওঠে না। কাজের মধ্যে ছোট ব্রেক নিয়ে কিছু সময় তাই হাঁটাহাঁটি করলে কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধিসহ মানসিক কর্মদক্ষতার বৃদ্ধি ঘটে। ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিদিন ১১ মিনিট দ্রুত হাঁটাহাঁটি করলে মানুষের প্রিম্যাচিওর ডেথ রেট বা অকালমৃত্যুর হার কমে যায়। প্রতিদিন কিছু সময় বের করে দ্রুতগতিতে টানা সামনের দিকে সোজা হয়ে হাঁটাহাঁটি করলে মিলবে অনেক সমস্যার সমাধান।
যাঁরা প্রতিদিন নানা ব্যস্ততায় জর্জরিত, তাঁদের জন্য প্রতিদিন টানা মাত্র ১১ মিনিট দ্রুত হাঁটলে পাওয়া যাবে এই ১১টি উপকার।
যাঁরা শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে চান, তাঁদের জন্য হাঁটা অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন ১১ মিনিট টানা হাঁটলে শরীরের অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট কমে যায়।
যাঁরা ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য সময় করে হাঁটা তাঁদের চিন্তার মনন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ চিন্তাভাবনার আরও অনেক পথ উন্মুক্ত করতে সাহায্য করে। কিছু হরমোন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় জানা যায়, হাঁটা কিংবা শারীরিক শ্রম, যেমন সাইক্লিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
হাঁটাহাঁটি স্ট্রেস কমাতেও খুবই কার্যকর। ১১ মিনিটের হাঁটাহাঁটি ছোট ব্যায়ামের কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে নার্ভ বা স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে। এর ফলে এনডরফিন নিওরোট্রান্সমিটার রিলিজ হয়, যা শরীরের স্ট্রেস কমায়।
কার্ডিওলজিস্টদের মতে, হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া ঠিক রাখতে একটি সেরা ব্যায়াম হচ্ছে প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা। হাঁটাহাঁটি করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ফলে ফুসফুসের অক্সিজেনের ধারণক্ষমতা বাড়ে। ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি রক্তে সঞ্চালিত হয়। এতে হার্টের সমস্যা কমে যায়।
প্রতিদিন দ্রুতগতিতে হাঁটার পাশাপাশি সাধারণ গতিতে হাঁটার এই কম্বিনেশন আর্থ্রাইটিসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগ থেকে বাঁচাতে বিরাট গুরুত্ব বহন করে। তা ছাড়া যাঁদের মাসেল পেইন, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা আছে, তাঁদের জন্য প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ১১ মিনিট টানা দ্রুত হাঁটলে হাঁটুর কার্টিলেজের সংকোচন–প্রসারণ হয়। সাইনোভিয়াল ফ্লুয়িডের সঞ্চারণ বাড়ে; যা হাঁটুর কার্টিলেজে অক্সিজেন সরবরাহ করে এর গঠন ঠিক রাখে।
মুড খারাপ থাকলে বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে এলে মনে উৎফুল্ল ভাব চলে আসে। হাঁটাহাঁটি শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়ায়। তাই কোনো মানসিক চাপে থাকলে বাইরে কিছুক্ষণ হেঁটে এলে মনের পরিবর্তন হবে এবং মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। পরে কাজে মনোযোগ দিতেও সুবিধা হবে।
একজন মানুষ টানা এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করলে প্রায় ৩০০ ক্যালরি খরচ হয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটি শরীরের অপকারী ফ্যাট কমায়। এই ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকলে পরবর্তী সময়ে হার্টে রোগ বাসা বাঁধে। তাই সুস্থভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি একটি সহজ ওষুধ।
যাঁদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য হাঁটাহাঁটি অত্যন্ত প্রয়োজন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু সময় টানা জোরে হেঁটে এলেই শরীর ক্লান্ত হয়ে যাবে, পরবর্তী সময়ে ঘুমিয়ে যেতে পারবেন তাড়াতাড়ি। প্রতিদিন ১১ মিনিট জোরে হাঁটলে রাতের ঘুম ভালো হবে। আর উদ্ভট দুঃস্বপ্ন দেখার প্রভাব কমে যায়।
প্রতিদিন ১১ মিনিট দ্রুত হাঁটলে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। তা ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীদের হাঁটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ।
যাঁদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা হজমজনিত সমস্যা আছে, তাঁদের প্রতিদিন কিছু সময় দ্রুতগতিতে হাঁটা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখা এবং রক্তে গ্লুকোজের সাম্যাবস্থা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন ১১ মিনিট দ্রুত হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। তা ছাড়া নতুন ব্রেন সেল তৈরিতে হাঁটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
দৈনন্দিন মানসিক ও শারীরিক চাপ সহ্য করতে হলেও শরীরকে উৎফুল্ল রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য প্রতিদিনের রুটিনে অত্যন্ত এই ১১ মিনিট যুক্ত করতেই পারেন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়া, ঘুমের পাশাপাশি পর্যাপ্ত হাঁটাহাঁটিও অত্যন্ত প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, বেটার হেলথ চ্যানেল
ছবি: পেকেজলসডটকম