ইনস্টাগ্রামে ক্রিস্টিনার অনুসারী চার লাখেরও বেশি। কিছুদিন আগে এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে তিনি জানান, শুধুমাত্র চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়েই পাঁচ মাসে ৭ কেজি ওজন কমেছে তার। পোস্টটিতে রিঅ্যাকশনও এসেছে প্রায় ৪০ হাজার। বলা যায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার এই গল্প অনেকের জন্য অনুপ্রেরণাও হয়ে উঠেছে। বিশেষ ভাবে যারা সহজ এবং কার্যকর উপায়ে ওজন কমাতে চান তাদের জন্য।
ক্রিস্টিনা জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন সকালে চ্যাটজিপিটি-কে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠাতেন। এই মেসেজে তিনি জানতে চাইতেন, সারা দিন তিনি কী খাবেন বা আজ কি খেয়েছেন এবং তার কত ক্যালরি গ্রহণ করা প্রয়োজন। চ্যাটজিপিটি তার খাদ্যের ক্যালরি এবং পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করে একটি খাদ্যতালিকা বা প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে দিত। যাতে তিনি সহজেই বুঝতে পারতেন তার কি খেতে হবে বা খাদ্যাভ্যাসে কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন। এমনকি কখনো কখনো তিনি তার ফ্রিজের ছবি পাঠিয়ে চ্যাটজিপিটি-র কাছে খাবারের পরামর্শও চেয়েছেন, আজ তিনি কি খাবেন।
ক্রিস্টিনা বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ মনে হয়েছে। মাথায় ক্যালরি গণনা করার দরকার হয়নি, কোনো চাপ ছিল না। আমি যখন আমার ক্যালরির লক্ষ্যে পৌঁছে যেতাম, তখনই খাওয়া বন্ধ করতাম। এটি কখনোই ডায়েটের মতো মনে হয়নি, আর এটিই সফলতার মূল কারণ।”
ক্রিস্টিনার এই পদ্ধতি ইনস্টাগ্রামে ২০ লাখেরও বেশি ভিউ পেয়েছে এবং শত শত মন্তব্যে মানুষ তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ এআই-এর এই সুবিধাজনক ব্যবহারের প্রশংসা করেছেন। আবার কেউ কেউ এর পরিবেশগত প্রভাব এবং এআই-এর ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “আমি আমার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ডায়েটের জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছি। এবং এটি আমার জন্য গেম-চেঞ্জার হয়েছে। আমি ইতিমধ্যে ১০ পাউন্ড কমিয়েছি এবং আমার ইনসুলিন সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি।”
ক্রিস্টিনা একমাত্র নন যিনি ওজন কমানোর জন্য এআই-এর উপর নির্ভর করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত একজন ব্রিটিশ নারী চার্লি বলেছেন, তিনি ১,৮০০ ক্যালরির ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে চ্যাটজিপিটি-র সাহায্য নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে আমার খাবারগুলো একসঙ্গে সাজাতে হবে। চ্যাটজিপিটি আমাকে প্রতিদিনের সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিয়েছে, প্রতিটি খাবারের ক্যালরি বিশ্লেষণসহ।”
এছাড়া, গ্লাসগোর ইলিধ ওয়েলস নামে আরেকজন ব্যক্তি ১,২০০ ক্যালরির ডায়েট প্ল্যানের জন্য চ্যাটজিপিটি-র পরামর্শ নিয়েছেন, যা তার পছন্দের খাবারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
যদিও এআই ওজন কমানোর জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এটি পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। এআই-এর পরামর্শ সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। এবং এটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা বা খাদ্যাভ্যাসের সূক্ষ্ম দিকগুলো বিবেচনা নাও করতে পারে। তাই, কোনো ডায়েট বা ফিটনেস প্ল্যান শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিস্টিনার গল্প প্রমাণ করে যে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরও সহজ করতে পারে, তবে এটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এবং সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। তার এই সাফল্য অনেককে নিজেদের ফিটনেস লক্ষ্য অর্জনের জন্য এআই-এর সম্ভাবনা খুঁজতে উৎসাহিত করতে পারে।