সুপারফুড ট্রেন্ড: সি মস, অ্যাডাপ্টোজেনিক চা ও ফারমেন্টেড ফুড
শেয়ার করুন
ফলো করুন

স্বাস্থ্য ও পুষ্টিজগৎ দ্রুত পরিবর্তনশীল। ২০২৫ জুড়েই সুপারফুডের দুনিয়ায় ছিল বৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া পুষ্টিগুণ, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো এবং মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। এ তিনটি বিষয়কে সামনে রেখেই এ বছর কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও পানীয় বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সি মস, অ্যাডাপ্টোজেনিক চা এবং ফারমেন্টেড ফুড।

সি মস: সমুদ্র থেকে পাওয়া পুষ্টির ভান্ডার

সি মস, যা আইরিশ মস নামেও পরিচিত একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল। একে অনেকেই ‘সমুদ্রের মাল্টিভিটামিন’ বলে থাকেন। এর জনপ্রিয়তা বাড়ার মূল কারণ, এর বিস্তৃত পুষ্টিগুণ। সি মসে আছে ভিটামিন ‘এ’,‘ সি’, ‘ই’ এবং ‘বি’ গ্রুপের একাধিক ভিটামিন। পাশাপাশি এতে থাকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অসংখ্য খনিজ উপাদান, যার মধ্যে আয়োডিন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম উল্লেখযোগ্য। পেশি গঠনে সহায়ক অ্যামিনো অ্যাসিড এবং শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমাতে কার্যকর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টও এতে বিদ্যমান। পুষ্টিবিদদের মতে, সি মস থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। জেল, গুঁড়া বা ক্যাপসুল আকারে এটি সহজেই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা যায়।

অ্যাডাপ্টোজেনিক চা: মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার প্রাকৃতিক উপায়

বর্তমান জীবনে মানসিক চাপ একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাডাপ্টোজেনিক চা ২০২৫ সালের অন্যতম আলোচিত পানীয়। অশ্বগন্ধা চা কিংবা রেইশি মাশরুম দিয়ে তৈরি এই চা–গুলো শরীরকে মানসিক ও শারীরিক চাপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। এই চায়ের প্রধান গুণগুলোর মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ কমানো, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো ও স্থায়ী শক্তি প্রদান। এতে ক্যাফেইনের মতো হঠাৎ শক্তি কমে যাওয়ার সমস্যা নেই। শত শত বছর ধরে প্রাচীন চিকিৎসাব্যবস্থায় ব্যবহৃত এই ভেষজ উপাদানগুলো এখন আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই পানীয় হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ফারমেন্টেড খাবার: অন্ত্রের স্বাস্থ্যে নতুন বিপ্লব

অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফারমেন্টেড খাবারের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। কিমচি, কেফির, সাওয়ার ক্রাউট কিংবা কম্বুচার মতো খাবারগুলো এখন ২০২৫ সালের স্বাস্থ্যচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই খাবারগুলো প্রোবায়োটিক গুণে ভরপুর, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ অন্ত্র মানেই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা। পাশাপাশি ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় খাবারের ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়। টক-মিষ্টি ও ঝাঁজালো স্বাদের জন্য এসব খাবার খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনে এবং দীর্ঘ মেয়াদে সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।

প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যচর্চার দিকে ঝোঁক

২০২৫ সালের সুপারফুড ট্রেন্ডগুলো দেখাচ্ছে, মানুষ এখন চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যচর্চার দিকেই বেশি মনোযোগী। খনিজসমৃদ্ধ সি মস, মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক অ্যাডাপ্টোজেনিক চা এবং অন্ত্রবান্ধব ফারমেন্টেড খাবার—এ তিনটি ধারা মিলেই এ বছরের স্বাস্থ্যচর্চাকে আরও প্রাকৃতিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলেছে। তবে পুষ্টিবিদেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, একক কোনো খাবার সুস্থতার একমাত্র চাবিকাঠি নয়। সুষম ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গেই এসব সুপারফুড যুক্ত করলে তবেই পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ উপকার।

ছবি: এআই

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন