হুট করে কোনো খাবারের ক্রেভিং হচ্ছে? মনে হচ্ছে সেই খাবারটি তখনই না খেলে কোনোভাবেই আপনার ভালো লাগবে না? আপনার হয়তো মনে হতে পারে, ক্রেভিং মানে কেবল খাবারটা খেতে ইচ্ছে করছে। আসলে ক্রেভিং হচ্ছে শরীরের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যম। মানে আপনি কেমন আছেন, সেটি বোঝা যাবে ক্রেভিংয়ের মাধ্যমে। আপনার শরীরে যদি কোনো ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি থাকে, সেটা বোঝা যাবে। চলুন, তাহলে জেনে নিই কোন খাবারের ক্রেভিং কোন নিউট্রিশনাল ইমব্যালেন্সকে নির্দেশ করছে।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই প্রায়ই চকলেট ক্রেভিং হয়। এই ক্রেভিং হলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ম্যাগনেশিয়াম ডেফিসিয়েন্সি দেখা দিচ্ছে। এনার্জি প্রোডাকশন, মাসল ফাংশন, মুড ভালো রাখার জন্য ম্যাগনেশিয়াম খুবই জরুরি। এই ক্রেভিং কমাতে হলে খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার, যেমন বাদাম, শস্যবীজ, সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে।
হুট করেই চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো লবণযুক্ত খাবারের ক্রেভিং হচ্ছে? তাহলে বুঝতে হবে আপনি সোডিয়াম ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন। সোডিয়াম খুবই জরুরি একটি ইলেকট্রোলাইট, যেটি আমাদের শরীরের ফ্লুইড ব্যালেন্স করে এবং নার্ভ ও মাসল যেন ঠিকমতো কাজ করে, সেটি নিশ্চিত করে। এই ক্রেভিং যেন না হয় সে জন্য খাবারে লবণের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে। অতিরিক্ত লবণ খেলে ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যগত নানা ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
যখন সুগার ক্রেভিং হয়, তখন বুঝতে হবে শরীরে ক্রোমিয়াম, কার্বন, ফসফরাস, সালফার ও ট্রিপটোফানের মতো কয়েক ধরনের ডেফিসিয়েন্সি হচ্ছে। বিশেষ করে সুগার ক্রেভিং বাড়ানোর জন্য ক্রোমিয়াম ডেফিসিয়েন্সি বেশি দায়ী। ক্রোমিয়াম আমাদের শরীরে সুগার লেভেলকে নিয়মিত রাখে। আর এর কমতি মানেই মিষ্টি খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া। রক্তে এই খনিজগুলোর কমতি হলেই মস্তিষ্ক তা পূরণ করার ইঙ্গিত দেয়। আর তখন মিষ্টি খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। এই ক্রেভিংকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে শস্যজাতীয় খাবার, ফলমূল, শাকসবজি খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে।
মাঝেমধ্যে আপনার যদি ব্রেড, পাস্তা বা রাইসের ক্রেভিং হয়, তখন বুঝতে হবে আপনি নাইট্রোজেন ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন। নাইট্রোজেন অ্যামাইনো অ্যাসিড সমন্বয়ের জন্য জরুরি; আর এই অ্যাসিড মূলত প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক। নাইট্রোজেন ডেফিসিয়েন্সি বাড়ছে মানেই কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। একে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি নিয়মিত খেতে হবে।
মাংসের ক্রেভিং যদি হয়, বিশেষ করে মুরগির মাংস, তখন বুঝতে হবে আপনি আয়রন ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন। পুরো শরীরে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং এনার্জি লেভেল মেইনটেইন করার জন্য আয়রন খুবই জরুরি। মাংসের ক্রেভিং হলে তাই খাদ্যতালিকায় আয়রনযুক্ত বিভিন্ন খাবার যুক্ত করে ফেলুন।
চর্বিযুক্ত বিভিন্ন খাবার খাওয়ার ক্রেভিং যদি বাড়তে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ক্যালসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছেন। এ জন্য ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার, যেমন বাদাম, দুধ, পালংশাক, ব্রকলি ইত্যাদি খেতে হবে।
দিনে তিন-চার কাপ কফি না খেলে আপনার চলেই না? জানেন, এই ক্রেভিং আপনার শরীরে কী কী ঘাটতি বোঝাচ্ছে? আপনি ভুগছেন লবণ, সালফার, ফসফরাস ও আয়রন ডেফিসিয়েন্সিতে। লবণের ঘাটতি পূরণে পরিমাণমতো লবণ খাবারে মেশাতে হবে। সালফারের ঘাটতি পূরণে রসুন, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, ব্রকলি খেতে হবে। ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ করতে খাবেন শিম, ডাল, কুমড়ার বীজ ও বাদাম। আয়রন ডেফিসিয়েন্সি দূর করতে খাবেন পালংশাক, ড্রাই ফ্রুট, চেরি ইত্যাদি।
নানা সময়ে নানা খাবারের ক্রেভিং হতে পারে। এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বরং খাদ্যতালিকা সুষমভাবে মেনে চললে এই ক্রেভিংকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
হিরো ইমেজ – মডেল: সাদিয়া রশ্নি সূচনা, ছবি: সাবিনা ইয়াসমীন
ছবি: পেকজেলসডটকম