নতুন অভ্যাস শুরু করতে প্রথমে ইচ্ছাশক্তি কাজ না–ও করতে পারে। তবে ধ্যানে যে মুক্তি মেলে, সেটা ঋষি বা মনীষীরাই প্রমাণ। তৎক্ষণাৎ ফল না পেলেও সেটা পাওয়া যাবে নিয়মিত অনুশীলনেই। তাই ধ্যানকে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বানিয়ে ফেলতেই পারেন। এতে আদতে নিজেরই লাভ।
অল্প সময় দিয়ে শুরু করা
অনুশীলনই সাফল্যের চাবিকাঠি, এটা ধ্যানের জন্যও সত্য। প্রতিদিন ধ্যান করতে পারলে জীবনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। কিন্তু নতুনদের জন্য হুট করেই সেটা রপ্ত করা সম্ভব না–ও হতে পারে। প্রথমে পাঁচ মিনিট সময় বের করতে হবে ধ্যানের জন্য। শুরুতে খুব শান্ত বোধ না–ও করতে পারেন। তাই ইউটিউবে পাঁচ মিনিটের গাইডেড মেডিটেশন দিয়ে শুরু করলে ভালো। রুটিনের একটি ধারাবাহিক অংশ হয়ে উঠলে ধীরে ধীরে মিনিটের স্থায়িত্ব বাড়াতে হবে। ৫ মিনিটের পর চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন ১০ বা ১৫ মিনিটের জন্য ধ্যান করা। এরপর সেটা ৩০ মিনিটে স্থায়ী করতে পারলে খুবই ভালো।
সঠিক সময় নির্ধারণ
সকালবেলার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে। বাতাস থাকে অনেকটাই দূষণমুক্ত। তাই সকালকে বেছে নেওয়া যেতে পারে ধ্যানের উপযুক্ত সময় হিসেবে। নিজের জন্য যে সময়টা উপযুক্ত ও নির্ভেজাল মনে হয়, সে সময় ধ্যান করতে পারলে ভালো। ঘুমানোর ঠিক আগেও সেটা হতে পারে। যে সময়ই বেছে নিন, একমাত্র অভ্যাসের ধারাবাহিকতাই পারবে ধ্যানকে দৈনন্দিন রুটিনের অংশ করতে।
আরাম
ধ্যানের কথা উঠলেই সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কেউ একজন পদ্মাসনে বসে আছেন চোখ বন্ধ করে। কিন্তু ধ্যান করার ক্ষেত্রে এই আসন সবার জন্য আরামদায়ক না–ও হতে পারে। এমন কোনো কিছুই করা উচিত নয়, যেটা শারীরিকভাবে অস্বস্তির কারণ। সফলভাবে ধ্যান করার জন্য একটি নির্দিষ্ট আসনেই বসতে হবে, এমনটা নয়। বরং যেভাবে বসতে নিজের আরাম বোধ হয়, সেটাই করতে হবে। চাইলে চেয়ারে বসে বা শুয়ে থেকেও ধ্যান করা সম্ভব। যদি স্থির হয়ে বসে থাকতে সমস্যা হয়, তাহলে হাঁটা অবস্থায় বা দাঁড়িয়েও ধ্যান করতে পারেন। ধ্যানের পরিবেশকে উন্নত করতে মোমবাতি, শান্তিপূর্ণ সংগীত বা প্রিয়জনের ফটোও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
ধ্যানের পডকাস্ট শুনুন
কীভাবে ধ্যান করবেন, তা নিয়ে এখনো কিছুটা অনিশ্চিত বোধ করছেন? সন্দেহ হলে, স্মার্টফোনের প্লে স্টোরে গিয়ে ধ্যানবিষয়ক পডকাস্ট ইনস্টল করতে পারেন। আজকাল বেশির ভাগ বিষয়ের ওপরই অ্যাপ রয়েছে, ধ্যানও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য, যেমন শান্ত শব্দ, শ্বাসের ব্যায়ামসহ নানা ধরনের অ্যাপ রয়েছে।
নতুনদের জন্য
প্রথমে এমন একটি জায়গা খুঁজতে হবে, যেখানে আরাম করে ধ্যান করতে পারবেন দিনে বা রাতের কিছুটা সময়। এরপর তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য একটি টাইমার সেট করে শ্বাসের ওপর ফোকাস করা শুরু করুন। প্রতিটি শ্বাস গ্রহণ করা ও শ্বাস ছাড়ার সংবেদন লক্ষ করুন। ধীরে ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিন।
এমনভাবে, যেন সেটা স্বাভাবিক মনে হয়। নানা ধরনের চিন্তার ঘুরপাক থেকে বেরিয়ে আবার আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসে ফোকাস করুন। সময় শেষ হলে এবার আস্তে আস্তে চোখ খুলতে হবে। আপনার চারপাশ, শরীর আর অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দিন। লক্ষ করবেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন। প্রতিদিনের ধ্যানে এই অনুভূতিগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ছবি: হাল ফ্যাশন