সাবুদানা উৎপাদিত হয় একপ্রকার পামগাছ থেকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম মেট্রোক্সিলেন সাগু। এই উদ্ভিদ প্রায় ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এতে একবারই ফুল ফোটে। আর ফল ধরার পর গাছ মারা যায়।
এ গাছের কাণ্ড চিরে ভেতরের নরম অংশকে ধারালো যন্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আলাদা করা হয়। এরপর এই পিথকে ভিজিয়ে রাখলে ভেতরের স্টার্চ পানির নিচে জমা হয়। তলানির এই অংশই আলাদা করে শুকিয়ে সাবুর পাউডার করা হয়। মেশিনের সাহায্যে তারপর ছোট ছোট দানায় রূপ দেওয়া হয়। একটি গাছ থেকে ১৪০- ৩৫০ কেজি পর্যন্ত সাবুদানা পাওয়া যায়।
এক সময় সাবু রোগীর পথ্য ও শিশুখাদ্য হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হতো। তবে এখন বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে দেখা যায় সাবুকে। ডেজার্ট ডেকোরেশনে সাবুর উপস্থিতি খাবারের সৌন্দর্যকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। সাবুর ক্ষীর বা পায়েস, সাবুর হালুয়া, লাড্ডু, জেলো মিল্ক সাবু, কোকোনাট মিল্ক সাবু, কাস্টার্ড আর ফালুদায় সাবু থাকা চাই-ই চাই।
শুধু কি ডেজার্ট! সাবুর সবজি খিচুড়ি, বাদাম ফলে বাসন্তী পোলাও, সাবুর স্যুপ—এমন অনেক পদ তৈরি করা হচ্ছে সাবু দিয়ে। এ ছাড়া নানি-দাদিদের সময়ের সাবুর পিঠা ও পাপড় তো আছেই।
সাবুদানার মধ্যে প্রোটিন ও ভিটামিন খুব বেশি থাকে না। তবে এতে থাকে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট আর ক্যালরি। এই কার্বস হলো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যার মধ্যে থাকে গ্লুকোজ মলিকিউলাস। এ উপাদান থেকে শরীর কাজ করার শক্তি পায়।
সাবুদানা শরীরে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পেশি সংকোচনেও সহায়তা করে এই খাদ্য উপাদান। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। দুধে দিয়ে ফোটানো হলে সাবু আরও সহজপাচ্য হয়ে ওঠে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে।
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় সাবু-দুধ রাখলে অস্টিওপোরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমে যায়। ব্লাডপ্রেশারও কমে। এমনকি ক্যানসারেরও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে সাবু।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ফোলেট থাকায় সাবুদানা ভ্রুণের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। তাই অন্তঃসত্ত্বাদের খাবারের তালিকায় সাবু রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে এই খাদ্য উপাদান।
মুখের স্বাদ ও রুচি বাড়ায় সাবু। তাই রোগীর পথ্য হিসেবে এত পরিচিত এটি। আর চর্বি কম থাকায় হার্টের রোগীদের জন্যও উপযোগী এই পথ্য।
ছবি: সেলিনা শিল্পী