যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির, লংজিভিটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও গবেষক অধ্যাপক ভাল্টার লঙ্গো রাতের খাবার খাওয়া নিয়ে দীর্ঘ সময় গবেষণা করেন। তার গবেষণার বিষয় ছাল দা হেদিয়েস্ট টাইম টু ইট ডিনার (The Healthiest Time to Eat Dinner)। এই গবেষণার ফলাফলে তিনি জানান, একজন সুস্থ মানুষের রাতের খাবার খাওয়া সর্বোত্তম সময় হলো ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে। অর্থাৎ আপনি যদি মধ্যরাতে ঘুমাতে যান, তবে রাত ৯টার মধ্যেই খাওয়া শেষ করতে হবে। এই গবেষণায় তিনি আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
রাতের খাবার দেরিতে খাওয়ার ফলে শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈব ঘড়ি বিঘ্নিত হয়। ফলে শরীর বুঝে উঠতে পারে না। এখন বিশ্রামের সময়, না কি কাজের। এর ফলে ঘুমে সমস্যা হতে পারে, বিপাক ক্রিয়া (metabolism) ব্যাহত হয় এবং ক্যালরি পোড়ানোর হার কমে যায়।
ইউনিভার্সিটি অব সুরিয়ে-এর পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক অ্যাডাম কলিন্স জানান, দিনে খাবার গ্রহণের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে খাওয়া। যেমন ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার শেষ করা। শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে এবং ফ্যাট বার্নিং প্রসেসকে ঠিক রাখে। এতে শরীর নিজেই নিজেকে প্রশিক্ষণ দেয়। যেমন খাবার পেলে কার্বস পোড়ায়, না পেলে ফ্যাট। এই পদ্ধতি ওজন কমাতে এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে দারুণ কার্যকর।
কলিন্স বলেন, “দিনের শুরুতে খাবার গ্রহণ বেশি হলে শরীর সেটিকে ভালোভাবে সামাল দিতে পারে।” অর্থাৎ সকালের দিকে বড় মিল অর্থাৎ বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। এবং সন্ধ্যার দিকে হালকা খাবার খাওয়ার রুটিনটাই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।
অধ্যাপক লঙ্গো তার গবেষণায় বলেন, “আমরা পুরোনো দিনের অনেক মানুষকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখব। তাদের একটি সাধারণ অভ্যাস রয়েছে। তারা সন্ধ্যায় ডিনার এবং পরের দিনের ব্রেকফাস্ট পর্যন্ত অন্তত ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কিছুই খান না। যা খুবই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। ”
যদিও সকালের ভারী খাবার খাওয়াটা বাস্তব জীবনে সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সকালে খিদে কম থাকে, অনেকেই দুধ-চিনি দেওয়া চা বা স্যান্ডউইচেই দিনের শুরু করেন। অফিস বা বাইরে থাকা মানুষদের পক্ষে দুপুরেও ভারী খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাতে বেশি খাওয়া হয়ে যায়।
অ্যাডাম কলিন্স বলেন, ‘‘কিন্তু তাতেও সমস্যা নেই। তবে একটি শর্ত মানতে হবে। অন্তত খাওয়ার পর কিছুটা "রেস্ট টাইম" দিন শরীরকে। সেই সঙ্গে ডিনারের পর ডেসার্ট হিসেবে চিপস, চকলেট, মিষ্টি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া যাবে হানা।
অধ্যাপক ভাল্টার লঙ্গোর পরামর্শ খুব স্পষ্ট:
* পুরো দিনের খাবার ১২ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এবং ১২ ঘণ্টা পেটকে বিশ্রাম দিতে হবে।
* ডিনার অবশ্যই ঘুমানোর কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা আগে
* কথনও কথনও ডিনার ভারী হতে পারে। তবে ঘুম, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ঠিক আছে কি না খেয়াল রাখতে হবে।
* কিন্তু ঘুমে সমস্যা, ওজন বা ডায়াবেটিসের মতো অসুস্থতা থাকলে। সকালের ও দুপুরের খাবার ভারী হতে পারে, কিন্তু ডিনার হালকা রাখার অভ্যাস গড়তে হবে।
* ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া
* দিনের শুরুতেই বেশি ক্যালরি গ্রহণ, রাতের দিকে কম
* শরীরকে অন্তত ১২ ঘণ্টার রেস্ট দেওয়া
* প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার রাতের বেলায় এড়িয়ে চলা
* ওজন, ঘুম এবং বিপাক ক্রিয়া ভালো রাখা
"কী খাচ্ছেন" এর পাশাপাশি এখন থেকে গুরুত্ব দিতে হবে ‘‘কখন খাচ্ছেন’’ সেই বিষয়েও। সময় মতো খাবার খাওয়ার অভ্যাসই হতে পারে আপনার দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।
সূত্র: জিকিউ ও হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলসডটকম