শরীরে জমে থাকা ধুলোবালি, ঘাম ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে গোসলের কোন বিকল্প নেই। সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ কাটাতে একটি ভালো গোসল শরীরে আনতে পারে প্রশান্তি। তবে, রাতে গোসল করার কথা শুনলে অনেকেই ভ্রূ কপালে তোলেন। তার কারণ হলো অনেকেরই ধারণা রাতে গোসল করলেই ঠাণ্ডা লেগে যাবে। কিন্তু সকালে ওঠার অভ্যাস নেই অনেকেরই। সেজন্য সকালেও গোসল করা হয়ে ওঠে না অনেকের। আবার কেউবা আছেন যারা সকালে এবং রাতে—দিনের দুই সময়ই গোসল করে অভ্যস্ত। এখন প্রশ্ন হলো, ঠিক কোন সময়ের গোসল স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী? আসুন জেনে নিই।
১. সারাদিনের ময়লা পরিষ্কার
রাতে গোসল করার সবচেয়ে বেশি সুবিধা হল সারাদিনের ময়লা ও জীবাণু শরীর থেকে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। আমাদের শরীর সারাদিনে পরিবেশ থেকে ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করে, যা ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর হয়ে থাকে। এগুলো না ধুয়ে ঘুমোতে গেলে পরবর্তীতে ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হতে পারে। ডার্মাটোলজিস্ট ড. অলোক বিজ বলেন, রাতে গোসল না করলে ত্বকে নানান ধরণের জ্বালাপোড়া বা ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে।
২. আরামদায়ক ঘুম
রাতে গোসল করলে মানুষের মস্তিষ্ক শরীরকে সিগনাল দেয় যে এখন বিশ্রামের সময়। ঘুমবিষয়ক পরামর্শক ড. ডেভিড রোজেনের বলেন, মানুষের শরীর স্বাভাবিকভাবে সন্ধ্যার দিকে ঠান্ডা হতে শুরু করে, যা ঘুমের প্রস্তুতির একটি অংশ। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল এই প্রক্রিয়াকে আরও এক্টিভ করে দেয় ও রাতে ভালো ঘুম হয়।
৩. উষ্ণ পানি দিয়ে গোসলে যা হয়
রাতে যখন আমাদের ঘুমানোর সময় হয়, তখন শরীরের সারকাডিয়ান রিদম বা জৈবছন্দ শরীরের অভ্যন্তরীণ মূল তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এই তাপমাত্রা হ্রাসের ঘটনা আমাদের মস্তিষ্কককে ঘুম আনয়নের তাগিদ দেয়। মার্কিন চিকিৎসক ও ঘুমবিষয়ক পরামর্শক ড. রবার্ট ওয়েক্সমেন বলেন, রাতে ঘুমের আগে উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করে নিলে শরীরের অভ্যন্তরীণ মূল তাপমাত্রা কমে যেতে শুরু করে। ফলে ঘুম আসে দ্রুত এবং ঘুমটা হয় আরামদায়ক।
ত্বকের সুস্থতার জন্য তা পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য একটি বিষয়। সারাদিনের ঘাম, ময়লা, সানস্ক্রিন বা মেকআপের অবশিষ্টাংশ ত্বকের পরস বন্ধ করে দিতে পারে যা পরবর্তীতে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রাতে গোসল করলে এগুলো পরিষ্কার হয়ে যায় এবং ত্বককে সারারাত ধরে রিপেয়ার হতে সাহায্য করে।
৫. পেশির চাপ কমানো
যারা ব্যায়াম করেন বা দিনের শেষে পেশিতে ক্লান্তি অনুভব করেন, তাদের জন্য উষ্ণ গোসল খুব উপকারী সল্যুশন হতে পারে। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পেশির চাপ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের পর রাতে উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর আরাম পায় এবং এতে ভালো ঘুম হয়।
৬. অ্যালার্জি ও নাক বন্ধজনিত সমস্যা দূর করা
যাদের অ্যালার্জি বা সর্দি-কাশির সমস্যা রয়েছে,তারা রাতে উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম পেতে পারেন। উষ্ণ পানির বাষ্প নাক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং ঘুমানোর সময় আরাম দেয়। যদিও এটি সরাসরি অ্যালার্জি নিরাময় করে না, তবে সাময়িকভাবে উপশম দিতে পারে।
তাই সকালের গোসলের কিছু সুবিধা থাকলেও রাতের গোসলের আছে বিশেষ উপকারিতা যা ভালো ঘুম,সুস্থ ত্বক ও সঠিক বিশ্রাম নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। যদি আপনি সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে চান এবং রাতে আরামদায়ক ঘুম উপভোগ করতে চান, তাহলে রাতের বেলা গোসল আপনার জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।
তথ্যসূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট
ছবি: পেকজেলস ডট কম