আপনিও কি শীতের রাতে ঘুমাতে গেলে এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন?
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বর্তমানে দেশে শীতের দাপট বেড়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডায় রাতে কম্বল কিংবা লেপের মধ্যে পা লুকিয়ে রাখার পরও পা যেন জমে বরফ হওয়ার জোগাড় হয়, এ অবস্থায় ঘুমাতেও কষ্ট হয়। শীতকালে পা বেশি ঠান্ডা থাকার জন্য শরীরের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালন শিথিল থাকে। এই অস্থির ঠান্ডায় অনেকেরই মাথায় একটা সাধারণ প্রশ্ন, মোজা পরে রাতে ঘুমানো ঠিক কি না। অনেকেই মনে করে থাকেন, রাতে মোজা পরে ঘুমানো উচিত নয়। কিন্তু আসলে আপনি নিশ্চিন্তে রাতে মোজা পরে ঘুমাতে পারেন। তবে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া জরুরি। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, রাতে ঘুমানোর আগে পায়ের উষ্ণতা ঠিক রেখে ঘুমালে ঘুম গভীর হয়, শরীর ফুরফুরে থাকে। আর এ ক্ষেত্রে মোজা সব থেকে কার্যকর ও সহজতর উপায়।

বিজ্ঞাপন

রাতে মোজা পরে ঘুমানোর উপকারিতা

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়: শীতকালে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যখন ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা, তখন মোজা পরলে পা গরম থাকে; এটি সারা শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ জন্য শীতে পা গরম রাখা খুবই জরুরি।

শীতে মোজা পরে ঘুমালে ঘুম ভাল হয়
শীতে মোজা পরে ঘুমালে ঘুম ভাল হয়

ভালো ঘুম হয়: পায়ের তাপমাত্রা ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, শীতের রাতে ঘুমানোর সময় মোজা পরে ঘুমালে ঘুম গভীর ও দীর্ঘ হয়। কারণ, পা গরম থাকে। যাঁদের রাতে ঘুমের সমস্যা, তাঁরা মোজা পরে ঘুমালে উপকার পেতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখা: শীতকালে মানবদেহের রক্ত সঞ্চালনের গতি স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। এর ফলে শরীরে ঝিমঝিম ভাব, আলসে ভাব থাকে। মূলত ঠান্ডা এর জন্য দায়ী। তাই শরীর উষ্ণ থাকলে এই সমস্যা থেকে সহজেই বাঁচা যায়। মোজা এ ক্ষেত্রে অনেক কার্যকর একটা সমাধান। পা গরম থাকলে উষ্ণতা আস্তে আস্তে সারা শরীরে ছাড়ায়। কারণ, রক্ত সঞ্চালনের গতি বাড়ে।

মোজা পরলে পায়ের গোড়ালিতে ঠান্ডা কম লাগবে
মোজা পরলে পায়ের গোড়ালিতে ঠান্ডা কম লাগবে

পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া কমায়: শীতকালে অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। তাই মোজা পরলে পায়ের গোড়ালি অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়, তাপমাত্রা ঠিক রাখে, আর্দ্রতা ঠিক থাকে। এর ফলে এটি ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া রোধ করে।

রাতে মোজা পরে ঘুমানোর অপকারিতা

পা ঘেমে অস্বস্তি হওয়া: অনেক সময় বেশি টাইট মোজা পরা উচিত নয়। বিশেষ করে সিন্থেটিক, তাহলে পা ঘামতে পারে। এর ফলে মোজা ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মোজা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ওই ঘাম কাপড়ের সংস্পর্শ থেকে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস উৎপন্ন হতে পারে এবং পায়ের ত্বকে ঘা, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এর ফলে পায়ে চুলকানির সমস্যা দেখা দেয়। তা ছাড়া অনেকের শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে।

মোজা পরলে স্বাভাবিকভাবেই পায়ের ত্বকে বাতাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটে
মোজা পরলে স্বাভাবিকভাবেই পায়ের ত্বকে বাতাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটে

বায়ু চলাচল কমে যাওয়া: মোজা পরলে পা আটকে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই পায়ের ত্বকে বাতাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এর ফলস্বরূপ পা ঘামতে থাকে। তাই একটানা মোজা না পরে থাকাই উত্তম। তা ছাড়া খুব বেশি টাইট বা ঢিল মোজা না পরে একদম সঠিকভাবে পায়ের উপযোগী বা ফিট মোজা পড়া উচিত। তা ছাড়া মোজার কাপড়ের গুণগত মান যেন ভালো হয়। একই মোজা একটানা ব্যবহার না করে কয়েক জোড়া পরিষ্কার, শুষ্ক মোজা ব্যবহার করা উচিত। তাহলে কোনো ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হবে না এবং শীতে পা সুরক্ষিত থাকবে।

যেসব মোজা প্রাকৃতিক নরম আঁশ দিয়ে তৈরি। যেমন মেরিনো উল, কাশ্মীরি মোজা। এসব উলের তৈরি মোজা ব্যবহার করা শীতকালের জন্য সবচেয়ে উপকারী ও উপযোগী। এসব মোজা রাতে ঘুমানোর সময় অনায়াসে পরে ঘুমাতে পারেন। যদিও–বা ন্যাচারাল কটন বা আর্টিফিশিয়াল কটনের মোজার চেয়ে এসব মোজার দাম একটু বেশি, তা–ও এই মোজা শীতকালে ব্যবহার করা যথোপযুক্ত। আর অবশ্যই পায়ের সাইজ অনুযায়ী মোজা যেন ফিট থাকে, বেশি টাইট বা ঢিলা মোজা পরে ঘুমানো উচিত নয়।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, নিউজ এইটিন

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন