রোজায় আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

রোজা এলেই শারীরিক সমস্যা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন, বিশেষ করে যাঁরা একাধিক রোগে আক্রান্ত আছেন, তাঁদের বেলায় এটি বেশি সমস্যার হয়ে ওঠে, দিনরাত ওষুধ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। রোজা যদি ঠিকমতো রাখা যায়, সেই সঙ্গে  সাহ্‌রি–ইফতার খাওয়া যদি ঠিক থাকে তাহলে এই রোজা রেখেই আপনার অনেক ওষুধ খাওয়া কমাতে পারবেন। ডায়াবেটিস, অ্যাসিডিটিজনিত ওষুধ, আলসারের ওষুধ কমাতে পারবেন, অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজনই হবে না।

ইফতারে ফলও পানিশুন্যতার দারুণ সমাধান
ইফতারে ফলও পানিশুন্যতার দারুণ সমাধান

রোজা রাখার ক্ষেত্রে একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি আছে, যেটাকে অটোফিজি বলা হয়। দীর্ঘ সময় কোনো খাবার না খেয়ে আমরা আমাদের শরীর থেকে দূষণ (টক্সিন) কমাতে পারি; আর আমরা যদি বিষমুক্ত নিরাপদ খাবার খাই তাহলে আমাদের শরীরে নতুন যে কোষ তৈরি হবে, তা হবে সুস্থ ও টক্সিনমুক্ত, যা আমাদের দেহকে শক্তিশালী করে তুলবে, রোগবালাই থেকে দূরে রাখবে। আমাদের জানা উচিত যে আমরা যে ডিজেনারেটিভ রোগে ভুগি, তা আমাদের কোষের দূষণের কারণে। এই দূষণ থামাতে পারলে শরীরে কোনো রোগই থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু আমাদের মধ্যে রোজা রেখে অদ্ভূত ধরনের খাবার খাওয়ার রেওয়াজ আছে, যা আমরা অন্য সময় খাই না কিন্তু রোজা রেখে খাই; যেটা আসলেই স্বাস্থ্য বিরুদ্ধ। অধিক ভাজাপোড়া খাবার ইফতারিতে খাওয়া যেন রোজা রাখার একটি উপলক্ষ হিসেবে খেয়ে থাকি, যা পুরোপুরিই ভুল। সারা বছর আলুচপ, বেগুনি, নিমকি, শিঙাড়া, জিলাপি, হালিম, রোল, কাবাব ইত্যাদি খাবারগুলোর এই নাম ডাকি। কিন্তু রোজা এলেই এগুলো হয়ে যায় ‘ইফতার’। এগুলো সেখানে বিক্রি হয়, সেটাকে ইফতার বাজার হিসেবে বলে থাকি। এখানেই আমাদের মানসিক সমস্যা, আমরা এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারকে ইফতার নাম দিয়ে রোজা রাখার মূল বিষয় থেকে দূরে সরে গেছি। শুধু খাবার আর খাবার। ধর্মের নির্দেশ মতে রোজায় কম খেয়ে থাকার বিধান কিন্তু আমাদের বেশি খাওয়া হয়, অন্য মাসের চেয়ে রোজায় বেশি খরচ হয়, যার দরুণ খাদ্যদ্রবের দাম বেড়ে যায়। এতে করে রোজার মূল দর্শন হারিয়ে যায়।

ভাজাপোড়া পরিহার করা বাঞ্ছনীয়
ভাজাপোড়া পরিহার করা বাঞ্ছনীয়

যাঁরা শরীরে নানা ধরনের সমস্যায় আছেন, তাঁরা রোজা রেখে শরীরটাকে ঠিক করতে পারেন, যদি দিনভর রোজা রেখে ইফতারিতে পুষ্টিকর খাবার খাই সাহ্‌রিতে পুষ্টিযুক্ত খাবার খাই, তাতে কম খেয়েও শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারি।

বিজ্ঞাপন

ইফতারে কী খাওয়া উচিত

• ইফতারে প্রথমে আমরা এক গ্লাস পানি দিয়ে শুরু করে সরবত হিসেবে তুলসী বীজ, তোকমা অথবা চিয়া সিড (সকালে ভিজিয়ে রেখে) ইফতারে প্রথম খেতে পারি। তারপর ডালিমের জুস, বেলের সরবত বা আনারসের জুস খেতে পারি (যেকোনো একটা)। তারপর চার পাঁচ ধরনের ফল খাওয়া উচিত। কলা, পেঁপে, পেয়ারা, আপেল ইত্যাদি। এগুলো খেলে শরীর সঙ্গে  সঙ্গে শক্তি ফিরে পাবে, শরীরে কোনো ডিহাইড্রেশন থাকবে না। শরীরের পাচনক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করবে।

ইফতারে জুস শরীরের জন্য উপকারি
ইফতারে জুস শরীরের জন্য উপকারি

• সলিড খাবারের মধ্যে ছোলা সেদ্ধ খেতে পারি, ছোল ভেজানোও খেতে পারি, এই ছোলা সেদ্ধর সঙ্গে টমেটো, গাজর, কাঁচা পেঁপে, পেঁয়াজ, মরিচ দিয়ে মাখিয়ে নিতে পারি। এতে খাদ্যগুণ আরও বেড়ে যাবে। ফাইবার, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, সব কটির ভিটামিন, মিনারেল যোগ হয়ে যাবে। এতে প্রোটিন–ফ্যাট দুটোই পাবেন। ছোলা ফ্যাট লস করতে এটা এত বেশি কার্যকর। আপনি এতে লো ফ্যাট, লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, হাইফাইবার, সোডিয়াম ফ্রি, হাইপ্রোটিন হওয়াতে আপনার ফ্যাটের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে ক্যালোরি কম কিন্তু নিউট্রয়েন্ট বেশি, যার কারণে শরীরে ওজন কমাবে কোনো ধরনের শরীরের দুর্বলতা ছাড়াই। এটি একটি ব্যালান্স ডায়েট বলা যেতে পারে।

• যাঁরা উচ্চ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁরা এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ ছাতু মিশিয়ে খেতে পারেন। ছাতু লো জিআই খাবার, যা শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে হজম হবে, খিদা লাগবে না, লিভারের ওপর চাপ ফেলবে না।

• সবার শেষে নাটমিল্ক খেতে পারেন। ২০টা আমন্ড বাদাম, ২০টা কালো কিশমিস সকালে ভিজিয়ে রেখে ইফতারের আগে এক গ্লাস পানিতে ব্লেন্ড করে এই নাটমিল্ক তৈরি করে খেতে পারেন। এই নাটমিল্ক ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করে ওমেগা ৩ দেবে, হার্ট ঠিক থাকবে;  কিশমিশের কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। ইফতারের আধঘণ্টা পর গ্রিনটি খাওয়া যেতে পারে।

সাহ্‌রিতে ৫০ শতাংশ সবজি, ৩০ শতাংশ ভাত, ১০ শতাংশ মাছ, মাংস, ডিম, ১০ শতাংশ মুগ ডাল খেতে পারেন। অথবা ফ্রায়েড রাইসও খেতে পারেন। যাঁদের পেটে সমস্যা, তাঁরা লালচালের পান্তাভাত খেতে পারেন। যাঁরা আইবিএসের মতো সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা পান্তা খেয়ে দেখতে পারেন। অথবা সবজি সুপ খেতে পারেন।
এটা চমৎকার একটি ব্যালান্স ডায়েট, সারাদিন রোজা রেখে শরীরে যেসব ঘাটতি করেছেন, তার খুব সহজেই কোনো ধরনের ক্ষতি করা ছাড়া পূরণ হয়ে যাবে। এই খাবারে ডায়াবেটিস, আলসার, উচ্চরক্তচাপ, থাইরয়েড, অ্যাসিডিটির রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের এক মাসে ওষুধ খাওয়া কমে আসবে।
যা খাওয়া উচিত নয়

সব ধরনের ভাজাপোড়া খাবার, হালিম, মিষ্টি জিলাপি, ফাস্টফুড, চিনির শরবত, নানা নামে প্যাকেজ বা বোতলজাত ড্রিংকস, বিরিয়ানি, দুধ, চিনি ও গমের তৈরি সব খাবার এই রোজা রেখে খাওয়া উচিত নয়। এসব খেলে রোজার রাখার কোনো সুফল শরীর পাবে না।

রোজা শুধু না খেয়ে থাকার বিষয় নয়, শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক উন্নতিরও বিষয় বটে।

লেখক: খাদ্য ও পথ্য; প্রধান নির্বাহী,  প্রাকৃতিক নিরাময়কেন্দ্র

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ১৩: ১১
বিজ্ঞাপন