দেশে আবার বইছে তাপপ্রবাহ। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ঢাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও বলা হচ্ছে 'ফিলস লাইক' টেম্পারেচার এখন ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। আসলে বাতাসের তাপমাত্রা ছাড়াও বাতাসের গতি ও আর্দ্রতার মতো বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই 'ফিলস লাইক' বা সত্যিকার অর্থে আমাদের শরীরে ও ত্বকে যেমন গরম অনুভূত হয় তার হিসাব করা হয়। জীবিকার প্রয়োজনে হোক, আর উৎসবের প্রস্তুতি পর্ব ও কেনাকাটা— বাইরে না বেরিয়ে উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে মানতে হবে কিছু নিয়ম, নিতে হবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা৷ এদিকে ঘরের ভেতরেও গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায়। শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সবার বাড়িতে তো নেই। ঘরে ও বাইরে এই তাপপ্রবাহ সামাল দিতে আজ রইল কিছু কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত টিপস।
পর্যাপ্ত পানি পান
তাপপ্রবাহ বইলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে দৈনিক চাহিদা মেনে পানি পান করার বিষয়টি। সারাদিন নিয়মিত বিরতিতে পানি বা যেকোনো স্বাস্থ্যকর তরল পান করা যায়। পানিশূন্যতার লক্ষণ প্রকট হলে অবশ্যই তৎক্ষনাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কুলিং কমপ্রেসর ব্যবহার
খুব সহজেই একটি ভেজা ছোট তোয়ালে ডিপফ্রিজে রেখে কোল্ড কমপ্রেস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গায়ে চেপে ধরলে এটি সঙ্গে সঙ্গে শরীর শীতল করে কার্যকরভাবে। বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে হলে একটি কুলিং আইসপ্যাক নিয়ে বের হওয়া যায় থার্মোস ফ্লাস্ক বা বাক্সে।
বিছানা বালিশ ঠান্ডা করা
দহনদিনের পরে রাতে বিছানা-বালিশ যেন আগুনে সেঁকা গরম হয়ে থাকে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বিছানার চাদর আর বালিশের ওয়াড় প্লাস্টিক ব্যাগে মুড়িয়ে ডিপ ফ্রিজে চালান করে দিলে দিন শেষে বের করে তাতে ঘুমানো যায় আরাম করে। আজকাল বড় ডিপ ফ্রিজ তো ঘরে ঘরেই আছে।
কুসুম গরম পানিতে গোসল
গরম পড়লেই আমরা ঠান্ডা পানির নিচে স্বস্তি খুঁজে পাই। দিনে দুই-তিনবার গোসল করলে আরাম মেলে বেশ। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, এ ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানিই উপযোগী। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরে তাপমান কমে যায় হঠাৎ। তখন শরীর আবার সেই হারানো তাপমাত্রা ফিরে পেতে জোর চেষ্টা করে। অপর দিকে কুসুম গরম পানি শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে আর রক্ত প্রবাহকে শীতল রাখে।
পায়ের আঙুল ঠান্ডা করা
পায়ের পাতা ও আঙুল শরীরের দ্রুত কুলিং স্পটগুলোর একটি। তাই তীব্র গরমে অস্থির হয়ে পড়লে যেকোনো উপায়ে পায়ের পাতা ও আঙুল বরফ, ঠান্ডা পানি বা যেকোনো উপায়ে ঠান্ডা করতে পারলে বেশ আরাম অনুভব হয়। মোজা ফ্রিজে ১০ মিনিট রেখে পড়লে দারুণ কার্যকর হয় তা।
মাথায় থাকুক টুপি আর ছাতা
বারান্দাওয়ালা কাউবয় হ্যাট বা বেসবল ক্যাপ মাথায় দিয়ে বের হলে রোদের তাপ চোখেমুখে কম লাগে। স্কার্ফ, ব্যান্ডানা বা যেকোনো ধরনের হেডগিয়ার এ ক্ষেত্রে কাজে দেবে। আর ছাতা মাথায় বেরোতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
টেনে রাখুন পর্দা ব্লাইন্ড
দিনের প্রখর রোদের তাপ রুখতে ঘরের পর্দা আর ব্লাইন্ড টেনে রাখলে ভালো। যেদিকে ছায়া পড়ে সেদিকে খুলে রাখা যায় অবশ্য। সূর্যাস্তের পরে খুলতে হবে জানালার পর্দা আর ব্লাইন্ড।
হালকা চায়ে চুমুক দেওয়া
গরম গরম চায়ে চুমুক দিলে শরীরে জমে থাকা তাপে সমতা আসে। মেলে স্বস্তি। অন্তত গবেষণা তাই বলে। তবে এ ক্ষেত্রে কড়া ক্যাফিন এড়িয়ে হালকা রং চা, গ্রিন টি বা অন্যান্য হার্বস ও ফুল-ফলের চা পান করতে হবে। ক্যাফিন তৃষ্ণার প্রকোপ বাড়ায় বলে এমন সময় ক্যাফিন কম গ্রহণ করাই ভালো।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
সারা দিন চুলার পাশে না থেকে দিনে চুলা কম জ্বালালে ঘর ঠান্ডা থাকবে। সালাদ, স্যান্ডউইচ আর র্যাপে কাজ সারা যায় বেশি গরম পড়লে। ভর্তা-ভাতে বা পান্তাভাতও বেশ উপযোগী। দিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে রসাল ফল, কাঁচা সবজি আর টক দই। এ সময় প্রাণিজ আমিষ, বেশি ভারি খাবার বা ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে।
সূত্র: গুড হাউসকিপিং, হেলথলাইন