বাঙালি ঐতিহ্যের একটি বিশাল অংশজুড়েই রয়েছে মাটির তৈজসপত্র। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগুলো বর্তমানে শৌখিন জিনিসের তালিকায় চলে এলেও একসময় সবাই নিত্যদিনই মাটির তৈরি এসব তৈজসপত্র ব্যবহার করতেন। এমনকি রেফ্রিজারেটরের প্রচলন শুরু হওয়ার কিছুদিন আগপর্যন্তও সবার ঘরে ঘরে দেখা যেত মাটির তৈরি মটকা। এসব মটকায় পানি রাখা হতো, যেন তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শীতল থাকে। তবে জেনে অবাক হবেন, মাটির পাত্রে পানি রাখলে শুধু যে শীতল থাকে, তা কিন্তু নয়। এতে পানির গুণাগুণও বৃদ্ধি পায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, মাটির পাত্রে পানি রেখে পান করলে মিলবে যেসব উপকার।
১. প্রাকৃতিকভাবেই পানি ঠান্ডা থাকে
মাটির পাত্রে পানি রাখার সবচেয়ে বড় উপকার হলো পানি প্রাকৃতিকভাবেই বেশ ঠান্ডা থাকে। কারণ, মাটির পাত্রে খুব সহজেই হাওয়া চলাচল করতে পারে, যা প্লাস্টিক কিংবা যেকোনো ধাতব পাত্রে সম্ভব নয়। এ ছাড়া প্লাস্টিকের পাত্রে পানি কিংবা খাবার রাখলে যেসব ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, মাটির পাত্রে পানি রেখে পান করলে সেসব আশঙ্কা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। তাই চাইলে বাসায় একটি মটকা রেখে দিতে পারেন। এমনকি আজকাল বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর মাটির গ্লাস ও মগ পাওয়া যায়, এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
২. স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়ায়
মাটির পাত্র থেকে পানি পান করলে পানিতে অন্য রকম এক স্বাদ ও সুগন্ধ যোগ হয়। এতে মাটির বিভিন্ন উপাদান পানিতে মিশে এক অনন্য পার্থিব স্বাদ পাওয়া যায়। যার কারণে পানি আরও সতেজ মনে হয়। এ ছাড়া মাটির বিভিন্ন খনিজ ও লবণ এতে যুক্ত হয়, যা অন্যান্য পাত্রে যেমন প্লাস্টিক, কাচ কিংবা অন্যান্য ধাতব পাত্রে রাখলে পাওয়া যায় না। তাই পানিতে পার্থিব স্বাদ ও সুগন্ধ পেতে চাইলে তা মাটির পাত্রে রেখে পান করতে পারেন।
৩. হজম শক্তিকে উন্নত করে
মাটির পাত্রে পানি রেখে পান করলে হজম শক্তি উন্নত হয়। মাটিতে উপস্থিত ক্ষার পানির অম্লতা নিরপেক্ষ করে, যা হজমের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। সেই সঙ্গে মাটিতে উপস্থিত খনিজ ও লবণ হজমের জন্য উপকারী হওয়ার পাশাপাশি অ্যাসিডিটি, ফোলাভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজমের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
৪. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
মাটির তৈরি তৈজসপত্রগুলোর রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা পানিকে পরিষ্কার করে পান করার জন্য নিরাপদ করে তোলে। এ ছাড়া মাটির পাত্রে এমন কিছু উপাদান থাকে, যেগুলো বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। ফলে পানি থাকে নিরাপদ। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত খনিজ ও লবণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের হাত থেকে বাঁচায়।
৫. পরিবেশবান্ধব ও টেকসই
পানি সংরক্ষণ ও খাওয়ার জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করা একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অনুশীলন। প্লাস্টিকের পাত্রের বিপরীতে মাটির পাত্রগুলো বায়োডিগ্রেডেবল ও পরিবেশের জন্য ভালো। এ ছাড়া মাটির পাত্র প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতেও সাহায্য করে। প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পরিবেশের কথা ভেবেও ব্যবহার করতে পারেন মাটির তৈরি তৈজসপত্র।
সূত্র: লিভ পিয়োর স্মার্ট
ছবি: মাটির মায়া