সুখকে জানার চেষ্টা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় আছে, ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’র মতো আমরা অনেকেই সুখের খোঁজ করি অন্যের কাছে বা অন্য কোথাও কিন্তু এই সুখ যে নিজের মধ্যে আছে, তা আমরা কতটুকু জানি? আমাদের জীবনে অস্থিরতা, মানসিক চাপ, রাগ, অভিমান, হতাশা ইত্যাদির বিপরীতে সুখ বা শান্তি নামক বিষয়টি একটি সমাধানযোগ্য অনুভূতি, যার জন্য আমরা নিজের প্রাণটিকেও বাজি রাখি।

আমরা কি জানি সুখ বা শান্তি নামের অনুভূতির মূল শিকড়টি কোথায়? আর কীভাবে পাওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে হয়তো কেউ বলবেন; জানি আবার কেউ বলবেন জানি না। আবার কারও মতে, সুখ এমন একটা কিছু, যা বাইরে থেকে খুঁজতে হয়। যেমন: মনের কষ্টে দূরে চলে যাওয়া, অন্যকে পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা, নিজের শান্তির জন্য অন্যকে ভুল বোঝা বা দোষারোপ করা অথবা নিজের সুখ বা শান্তি পাওয়া খুব কঠিন ও পরিশ্রমসাধ্য ব্যাপার বলে মনে করা। আসলে কি তাই?

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতপক্ষে সুখ হলো একটি স্বাভাবিক অবস্থা বা অনুভূতি। এটা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে; কিন্তু আমরা বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণা বা সেই যন্ত্রণায় দৃষ্টি দিতে থাকলে শান্তি বা সুখ চাপা পড়ে যায়। ফলে সেই সুখ অনুভূতি আর অনুভব করা যায় না ।

চতুর্দশ শতাব্দীর বিখ্যাত শিল্পী মাইকেল অ্যাঞ্জেলোকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি কীভাবে একটি শক্ত মার্বেল পাথর থেকে ডেভিডের সূক্ষ্ম এবং শক্তিশালী মূর্তি তৈরি করেছিলেন? এই প্রশ্নের প্রতি উত্তরে শিল্পী বলেছিলেন যে, ‘ডেভিড আগে থেকে শক্ত মার্বেল পাথরের মধ্যেই ছিল আমি শুধু ডেভিডের মূর্তিটিকে পাথর থেকে বের করেছিলাম মাত্র।’

ঠিক তেমনিভাবে আমাদের নিজেদের সুখ নিজেদের মধ্যে থাকে কিন্তু শুধু সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বের করতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হলো আমরা কেন তা পারি না? তার কারণ হলো আমাদের উদ্বেগ, হতাশা, মানসিক চাপ, দুঃখ, রাগ, সন্দেহ ও অস্থিরতা ইত্যাদিতে সুখ ঢাকা থাকে। এই দুঃখের খোসা নিজে ছাড়িয়ে নিতে পারলেই শান্তি বা সুখের অনুভূতির দেখা মিলবে।

বিজ্ঞাপন

তাহলে চলুন আর্ট থেরাপির একটি অনুশীলনের মাধ্যমে শান্তি বা সুখ খুঁজি।
এর জন্য যা প্রয়োজন
• সাদা কাগজ বা আর্ট পেপার
• জার্নাল বা নোট বুক
• ক্রেয়ন, পেনসিল ও কলম

প্রক্রিয়া

ধাপ ১

প্রথমে সাদা কাগজ বা আর্ট পেপারে পেনসিল দিয়ে একটি মেঘের আউটলাইন আঁকি।

ধাপ ২

তারপর আঁকা আউটলাইন ধরে হালকা নীল রঙের ক্রেয়ন বা পছন্দের অন্য কোনো হালকা রং দিয়ে ভাসমান মেঘকে আঁকি। রং করার সময় মনে রাখতে হবে যে ভাসমান মেঘটি নিজের সুখ বা শান্তির প্রতিনিধিত্ব করে।

ধাপ ৩

আঁকা শেষ হলে কয়েক মিনিট মেঘটিকে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং মেঘ যে সুখের অনুভূতি দিচ্ছে তা মনে করতে হবে এবং ওই চিন্তায় নিজের মনোযোগ দিতে থাকি।

ধাপ ৪

তারপর চোখ বন্ধ করে আঁকা মেঘের ছবিটিকে কল্পনা করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে এবং ছাড়তে হবে। এভাবে কয়েক মিনিট অনুশীলন করতে হবে।

ধাপ ৫

অনুশীলনে অনুভূতিগুলোর আলোকে নিচের প্রশ্নের উত্তর জার্নালে বা নোটবুকে লিখে রাখতে হবে।
• ভাসমান মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে আপনি কি শান্তি বা সুখ অনুভব করতে পেরেছিলেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে সেটা কেমন ছিল তা নিয়ে লিখুন।
• যদি উত্তর না হয় তাহলে লিখুন যে আপনার শান্তি বা সুখ অনুভব করতে না পারার পেছনে বাধাগুলো কী ছিল।

ধাপ ৬

এবার আবার আঁকা মেঘের ছবিটিতে কিছু গাঢ় রং নির্ধারণ করি ও সেই রংগুলো দিয়ে মেঘের ছবির ওপর নিজের জীবনের নেতিবাচক বিষয়, ব্যক্তির ছবি, নাম, পরিস্থিতি, কষ্টের অনুভূতি যেমন: হতাশা, বিষণ্নতা, ক্ষোভ, রাগ ইত্যাদি লিখে মেঘগুলোকে ঢেকে দিই। মনে রাখতে হবে যে ছবিতে নিজের যতটা কষ্টের বিষয় ভাবতে পারি, ততটাই আঁকব।

ধাপ ৭

এইবার আঁকা ছবিটি দেখি আর কল্পনা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর নোট বুকে লিখি।
• কষ্টের অনুভূতি বা শব্দ দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাসমান মেঘ ঢেকে ফেলার ফলে কেমন অনুভব করছেন?
• আপনি উদ্বেগ বা কষ্টের চিন্তাভাবনাগুলোকে বেছে নিলে আপনি কীভাবে আপনার শান্তিপূর্ণ অবস্থাকে ঢেকে রাখেন, সে সম্পর্কে লিখুন।

এই অনুশীলন থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে কীভাবে আমরা নিজেকে কষ্ট নামক চিন্তায় ও বিষণ্নতায় হারিয়ে ফেলি। আবার অনেকেই মনে করে যে চিন্তাভাবনা শান্তি নষ্ট করে। আসলে চিন্তাভাবনাগুলো যখন কষ্টের কারণ হয় এবং সেই কষ্টে অবিরত মনোযোগ দেওয়া হয়, তখন শান্তি ক্যামেরার ভাষায় ডিফোকাসড হয়ে যায় এবং কষ্টের ছায়ায় শান্তি বা সুখ হারিয়ে যায়।

তাই নিজের কর্মব্যস্ত জীবনে যখন কোনো কষ্টের অনুভূতি গ্রাস করবে, তখনই এই অনুশীলন করুন। তাহলে জানতে পারবেন যে নিজের হতাশা বা কষ্টগুলো কীভাবে দূর করে নিজের ভেতর থেকে শান্তি বের করতে হয়। কষ্টের মেঘকে ভাসিয়ে দিয়ে সুখের রং খুঁজে পাওয়ার আত্মোপলব্ধির শুভকামনায়।

মূল ছবি: মডেল: আজিম, মাহেলেকা ও দাউদ; মেকআপ: পারসোনা, ছবি: সাইফুল ইসলাম

অন্যান্য ছবি: লেখক ও পেকেজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২২, ০৫: ৩০
বিজ্ঞাপন