ম্যান্ডালা শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো ‘বৃত্ত’। এই বৃত্ত দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও মহাবিশ্বের প্রতীকী উপস্থাপনাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ ছাড়া ম্যান্ডালা আর্ট মূলত বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতির শান্তিচর্চা প্রকাশের একটা মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। ম্যান্ডালা আর্ট সাধারণত তান্ত্রিক বৌদ্ধরা ধ্যানের সহায়তার জন্য ব্যবহার করতেন, যা এখনো করা হয়। যুগের পর যুগ এই চর্চা ভারত, চীন, জাপান, তিব্বত থেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ম্যান্ডালা আর্ট একটি শক্তিশালী আর্ট থেরাপির কৌশল হিসেবে বিবেচিত। প্রধানত ম্যান্ডালা আর্ট তিন ধরনের: ১. টিচিং ম্যান্ডালা, ২. হিলিং ম্যান্ডালা, ৩. স্যান্ড ম্যান্ডালা।
মানসিক স্বাস্থ্যর সঙ্গে ম্যান্ডালা আর্টের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়ুং ম্যান্ডালা আর্টকে ‘অবচেতন মনের প্রতিনিধিত্বকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তাই দিনের পর দিন সাইকো অ্যানালাইসিসে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে মানসিক যন্ত্রণা উন্নয়নে বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল ও তত্ত্বের সঙ্গে ম্যান্ডালা আর্ট ব্যবহার করা হয়, যেমন আর্টভিত্তিক কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (এসিবিটি), আর্টভিত্তিক মাইন্ডফুলনেস (ডিবিটি), আর্টভিত্তিক মানসিক আঘাত–পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, আর্টভিত্তিক শিথিলায়ন ইত্যাদি।
কোন কোন মানসিক সমস্যা উন্নয়নে ম্যান্ডালা আর্ট ভালো কাজ করে?
বিভিন্ন গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে ম্যান্ডালা আর্ট মানসিক চাপ, রক্তচাপ, হতাশা ও অস্থিরতা কমাতে যেমন কাজ করে, ঠিক তেমনি ঘুম ভালো হতে, মনোযোগ বৃদ্ধিতে, সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে ও মাদকাসক্ত চিকিৎসায় ভালো ফল দেয়। এ ছাড়া বাচ্চাদের অস্থিরতা কমাতে ও ক্যানসার রোগীর জন্য ম্যান্ডালা আর্ট থেরাপি ভালো কাজ করে বলে অনেক গবেষকেরা মত দিয়েছেন।
মানসিক চিকিৎসায় ম্যান্ডালা আর্টকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে মনে করা হয়, যা বৃত্তাকার ও প্রতিসম ইমেজ দ্বারা তৈরি। ম্যান্ডালা আর্ট ধ্যানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ম্যান্ডালা আর্ট সাধারণত মনকে আলোকিত করে এবং সমস্যা নিরাময়ে সহায়তা করে। এই পদ্ধতি মস্তিষ্কের সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করাসহ বিভিন্ন মানসিক বাধা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন ম্যান্ডালা আর্ট ২০ মিনিট বা তার বেশিক্ষণ ধরে করলে এর প্রভাব বুঝতে পারা যায়। যিনি আঁকতে পছন্দ করেন, এমন যে কেউ ম্যান্ডালা আর্ট করতে পারেন।
ম্যান্ডালা আর্টের কিছু ডিজাইন উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর ওপর রঙিন কলম বা পেনসিল দিয়ে আঁকার কাজটি করা যায় (চিত্র -১) বা নিজের মতো ম্যান্ডালা আর্ট ডিজাইন করে তার ওপর আঁকার কাজটিও চালিয়ে নেওয়া যায়।
অথবা ইন্টারনেট থেকে ম্যান্ডালার ছবিগুলো নিজের মতো ব্যবহার করতে পারবেন। ম্যান্ডালা আর্ট শুধু যে কলম, কাগজ, পেনসিল বা রংতুলিতে সীমাবদ্ধ থাকে, তা নয়, কেউ চাইলে তা বিভিন্ন সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপ দিয়ে করতে পারে। তাই কিছু অ্যাপের নাম দেওয়া হলো How to draw mandala, Magic mirror mandala drawing, Mandala coloring page, Coloring book for me & Mandala.
ম্যান্ডালা আর্টের উপকরণ
পেপার, রবার, কম্পাস, স্কেল, রঙিন পেনসিল বা প্যাস্টেল বা রঙিন কলম (আর্টিস্ট পেন), নোটবুক।
১. নিরিবিলি ও শব্দ কম হয়, এমন স্থান বাছাই করা।
২. ম্যান্ডালা আর্ট আঁকার আগে মনের অবস্থা কেমন, তা পরিমাপ (০-১০ মাত্রায়) করা।
৩. মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
৪. কয়েকবার বুক ভরে শ্বাস নেওয়া ও ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
৫. ম্যান্ডালা আর্টের জন্য রং নির্ধারণ করা।
৬. মনোযোগ দিয়ে ম্যান্ডালা ডিজাইনের কেন্দ্র থেকে আঁকা শুরু করে ধীরে ধীরে পুরো ম্যান্ডালা আঁকা শেষ করা।
৭. আরাম বা রিলাক্স করা।
৮. ম্যান্ডালা আর্ট আঁকার পর মনের অবস্থা কেমন, তা পরিমাপ (০-১০ মাত্রায়) করা।
৯. মূল্যায়ন করতে হবে কৌশলটি কী প্রভাব ফেলেছে নিজের ওপর এবং তা নোটবুকে বা জার্নালে লিখে রাখতে হবে।
১. আঁকা শুরুর আগে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন।
২. প্রতিটি আঁকায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিতে হবে।
৩. আঁকা শুরু হবে ম্যান্ডালা ডিজাইনের মাঝখান থেকে। পরে পুরো ম্যান্ডালা ছড়িয়ে পড়বে।
৪. পুনরায় আঁকার জন্য একই রং ব্যবহার করা ভালো।
৫. ম্যান্ডালা আর্ট শেষ করার জন্য কোনো নিদিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয় না, তাই দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার প্রয়োজন নেই।
৬. ম্যান্ডালা আর্ট করার জন্য কোনো পূর্ব–অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই।