সাইফ আলী খান ও তাঁর পরিবারের অন্যতম গর্ব পতৌদি প্যালেস হরিয়ানার গুরগাঁও শহরের কাছাকাছি অবস্থিত। এই বিশাল ও রাজকীয় প্রাসাদ শুধু একটি বিলাসবহুল বাড়ি নয়, বরং ভারতের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও উত্তরাধিকারের এক অপূর্ব জীবনচিত্র। প্রায় ১০ একর জমির ওপর অবস্থিত এই প্রাসাদের বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকা।
প্রাসাদের একদিকে শ্বেতপাথরের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী, অন্যদিকে বিস্তীর্ণ সবুজ উদ্যান মনকে প্রশান্তি দেয়। এই প্রাসাদে ১৫০টির বেশি কক্ষ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজকীয় ডাইনিং হল, লাইব্রেরি, ড্রইংরুম, অতিথিশালা ও বিশাল দরবার হল। প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের চিহ্ন। এই প্রাসাদকে বর্ণনা করা হয় ‘ইন্ডিয়ান হেরিটেজ হ্যাভেন’ হিসেবে, যেখানে প্রাচীনতা মিলেমিশে আছে আধুনিক জীবনের সঙ্গে।
প্রাসাদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৩৫ সালে। এটি নির্মাণ করেন ব্রিটিশ স্থপতি রবার্ট টর রাসেল। তিনি দিল্লির ‘কনট’ প্যালেসেরও স্থপতি। তাঁর নিখুঁত স্থাপত্যনকশায় নির্মিত হয়েছে এই পতৌদি প্যালেস। সে সময় এই প্রাসাদ ছিল একমাত্র নবাবি শৌর্য ও অভিজাত্যের প্রতীক। নির্মাণের সময় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কিছু অংশে মার্বেল ও সিমেন্টের ফ্লোরিং ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে এটি যেন ইতিহাসের এক নিদর্শন।
প্রাসাদটির ইতিহাসের সবচেয়ে অনন্য দিক হলো এর নির্মাতার আত্মীয়স্বজন ও উত্তরাধিকার। সাইফের পিতামহ ইফতিখার আলী খান পতৌদি ১৯৩৫ সালে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন তাঁর স্ত্রী ভোপালের রাজকন্যা সাজিদা সুলতানকে উপহার দেওয়ার জন্য।
বর্তমানে এই প্রাসাদের মালিকানার অংশীদার হলেন সাইফ আলী খান। তিনি স্বীকার করেছেন যে প্রাসাদটি তিনি নিজের জন্য কেনেননি, বরং লিজ বাতিল করে মালিকানা ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাঁর ফিল্ম ক্যারিয়ার থেকে উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে এই স্বপ্নের প্রাসাদ তিনি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন এবং সংস্কারও করছেন।
২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি ছিল ‘নিমরানা হোটেল’-এর মালিকানাধীন। তারা এই প্রাসাদ লিজ নিয়ে হোটেল চালাচ্ছিল। পরে সাইফ নিজেই তাদের কাছ থেকে প্রাসাদটি অধিগ্রহণ করেছেন লিজ বাতিল করে। এই প্রাসাদের বিভিন্ন অংশে রয়েছে অবিস্মরণীয় সব স্মারক যেমন—সাইফের বাবা ও দাদার ক্রিকেটের স্মারক ব্যাট, জার্সি। সাইফ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে তিনি এই প্রাসাদ ক্রিকেট স্টাইলে সাজাতে চাইছেন, যেখানে লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বিখ্যাত লং রুমের অনুকরণে সাজানো হবে।
এক সাক্ষাৎকারে সাইফ বলেন, ‘আমি এটা কিনিনি, লিজ পরিশোধ করেছি। আমার ফিল্ম ক্যারিয়ারের আয়ে এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা ইতিহাস পেয়েছি, ছবি পেয়েছি, কিন্তু টাকা পয়সা নয়।’
এই প্রাসাদেই সমাধিস্থ আছেন সাইফের পিতা মনসুর আলী খান পতৌদি, তাঁর দাদা ও দাদি। তাই এই প্রাসাদ শুধু একটি বিলাসবহুল আবাস নয়, এটি তাঁর পারিবারিক উত্তরাধিকার ও ইতিহাসের প্রতীক। যদিও সাইফের বাবা মনসুর আলী খান পতৌদি প্রাসাদটিকে হোটেল হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন, তার দাদি চেয়েছিলেন, এটি কখনো হোটেল না হোক। সেই ইচ্ছাকেই সম্মান জানিয়ে এখন প্রাসাদটি শুধু তাঁদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ও শুটিং লোকেশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সাইফের বোন সোহা আলী খান জানান, প্রাসাদের জেনারেটর রুমটিকে একসময় দুটো বেডরুমের ফ্ল্যাটে রূপান্তর করা হয়েছিল, যা এখন তাঁরই মালিকানাধীন।
সাইফ আলী খান এই প্রাসাদকে কেবল একটি বাড়ি বা জমি হিসেবে দেখেন না, বরং এটি তাঁর পরিবারের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক। এই প্রাসাদের প্রতিটি ইট, করিডর ও কক্ষে রয়েছে ইতিহাসের গাথা, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকারের গল্প। তাঁর এই উদ্যোগ তাঁদের পারিবারিক ভালোবাসা ও দায়িত্বের স্বীকৃতি, যেখানে ঐতিহ্যের প্রতি গভীর সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশ পায়।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম ও উইকিপিডিয়া