আজ ১২ আগস্ট 'মিডল চাইল্ড ডে' বা মেজ সন্তান দিবস। জানা যায়, এই দিবসটি আশির দশকে এলিজাবেথ ওয়াকার নামের এক মার্কিন নারী প্রবর্তন করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল পরিবারে মেজ সন্তানদেরকে আলাদা করে বিশেষ মনোযোগ ও স্বীকৃতি প্রদান করা।
কারণ তিনি মনে করতেন, তারা প্রায়ই অবহেলিত থাকে। এই বিশেষ দিবসের লক্ষ্য পরিবারের মেজ সন্তানদের বিশেষ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং প্রায়ই উপেক্ষিত বা অবহেলিত অবস্থান থেকে তাদের তুলে আনা।
পরিবারের বড় সন্তানরা সবসময়ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কর্তৃত্বটাও বেশি। মাতব্বরি বললেও ভুল হবে না। বিশ্বাস না হলে যে কোনো মেজ সন্তানকে জিজ্ঞেস করতে পারেন তার কোনো মতামত বড় সন্তানের বিপরীত মতের সামনে ধোপে টেকে কিনা। এদিকে ছোট সন্তান আসতেই মেজজন হয়ে যায় অবহেলার শিকার। হয়তো তা ইচ্ছাকৃত নয়। তবু এটাই বাস্তব। প্রায়ই এজন্য তারা ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী হয়।
তাদের চাওয়া-পাওয়া ও অনুভূতি পরিবারের সকলের কাছে থাকে অজানা। এ কারণে তাদেরকে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই মিডল চাইল্ড ডে। পরিবারে তারা প্রায়ই প্রথম অথবা শেষ সন্তানের মতো অনেক কিছুই পায় না। তাই আজকের এই বিশেষ দিনটি তাদেরকে স্পেশাল ফিল করানোর এক সুযোগ।
মেজদেরকে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তারা অনেক সময় নিজেকে অবহেলিত ও গুরুত্বহীন মনে করে। এর ফলে পরিবারের এই সদস্যরা ইনিসিকিওরড অনুভব করতে পারে। পরিবারে তাদের নিজের জায়গা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। একে অনেক সময় মিডল চাইল্ড সিনড্রোম বলা হয়, যেখানে তারা মনে করে বড় বা ছোট ভাইবোনের তুলনায় তাদেরকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। দেখা যায়, বড়দের ছোট হয়ে যাওয়া পোশাক ও জুতা পরে অনেকটা সময় পার করে দেয় মেজরা।
নিজের পছন্দমতো কিছু কেনার অবকাশ মেলে কম। এদিকে ছোট সন্তান আসতে আসতে সেগুলো অতি ব্যবহারের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। তাই নতুন জামাজুতার কমতি হয়না তার। এমন সব অনেক ছোট ছোট ঘটনা কিন্তু মনে দাগ কাটে মেজদের। অবশ্য ভালো দিক হচ্ছে, অনেকটা আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে ওঠে মেজরা। তাই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যায় তাদের অনেকেই।
চলুন এক নজরে দেখে নিই পরিবারের মেজ সন্তানদেরকে কী কী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়:
নিরাপত্তাহীনতা ও অবহেলার অনুভূতি
অভিভাবকের কম মনোযোগ পায় মেজরা। বড় সন্তান প্রথম আর ছোট সন্তান সবচেয়ে ছোট হিসেবে বিশেষ আদর-যত্ন পায়। এসব আহ্লাদ কিন্তু মাঝের সন্তানেরা তুলনামূলকভাবে কম পায়।
বাদ পড়ার অনুভব
পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে বা কথোপকথনে নিজেকে বাদ পড়া মনে হতে পারে। কোথায় ঘুরতে যাওয়া হবে, বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন এমনকী আজ কী খাবার অর্ডার দেওয়া হবে সেসব সিদ্ধান্তেও মেজদের মতামত কম নেওয়া হয়।
আত্মসম্মান কমে যাওয়া
কম মনোযোগ পাওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে কষ্ট হওয়া
অবহেলার ভয় বা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে অসুবিধা হতে পারে।
আত্মপরিচয় ও পারিবারিক ভূমিকা নিয়ে সমস্যা
নিজের জায়গা খুঁজে পেতে কষ্ট হয় অনেক সময় মেজ সন্তানদের। পরবর্তীতে নিজে পরিবার গঠন করলেও নিজের আলাদা পরিচয় বা উদ্দেশ্য ঠিক করতে সমস্যা হতে পারে।
নেতিবাচক আচরণ দিয়ে মনোযোগ চাওয়া
মনোযোগ পেতে কখনো নেতিবাচক আচরণ করতে পারে মেজরা, যা তাদের নিজেদের জন্যই খারাপ।
চাপ অনুভব করা
বড় ভাইবোনের সাফল্য বা আদর্শ আচরণ আর অপরদিকে ছোট সন্তানদেরকে দেওয়া বিভিন্ন ছাড়ের সঙ্গে তাল মেলাতে চাপ বোধ করতে পারে মেজরা।
মেজদের এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কিন্তু বাবা-মা আর পরিবারের অন্যান্য ভাইবোনদের ভাবা উচিত। আর অন্তত আজকের দিনে তাদেরকে স্পেশাল ফিল করানোর কিছু উপায় আছে। যেমন:
পরিবারের মেজ সন্তানকে সচেতনভাবে কিছুটা বেশি সময় ও ভালোবাসা দেওয়া
তাদের অবদান এবং ব্যক্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া
বড় বা ছোটজনের সঙ্গে তুলনা না করা
সূত্র: নিউজ এইটিন
ছবি: পেকজেলস