সম্প্রতি রাজশাহীর তালাইমারীতে আমার মামি নাসিবা খাতুনের বাসায় বেড়াতে গেলাম। মামি তাঁর ছাদবাগানে যত্ন করে ফুটিয়েছেন নানা শীতের ফুল। অনেক বছর হলো মামি নিয়মিত শীতে এসব ফুলের গাছ লাগান। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার তিনি লাগিয়েছেন বেশ কয়েক ধরনের গাঁদা। হলুদ, বেগুনি আর লাল চন্দ্রমল্লিকা, সাদা আর গোলাপি ছটার পিটুনিয়া, সিলভিয়া, ন্যাস্টারশিয়াম ফুলের আধিক্য বেশি এবার তাঁর বাগানে। ন্যাস্টারশিয়াম ফুলটি নতুন দেখলাম।
ন্যাস্টারশিয়াম একটি উজ্জ্বল সবুজ ছাতা আকৃতির বৃত্তাকার (অনেকটা থানকুনি বা শাপলাপাতার মতো) পাতাবিশিষ্ট বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। যার রয়েছে চমৎকার রংবেরঙের ফুল; যা টব অথবা ল্যান্ডস্কেপে সাজালে দেখতে দারুণ লাগবে। সাধারণত শীতের সময় এই ফুল ফোটে। এই উদ্ভিদের কাণ্ড লম্বা, চিকন ও দুর্বল, যা লতানো অবস্থায় মাটিকে ঢেকে রাখে। বীজ থেকে চারা হয়, তাই একবার এই গাছ রোপণ করলে সেই গাছ থেকেই বীজ সংগ্রহ করা যায়। গাছটি আড়াই থেকে তিন মাসে ফুল দেয়।
অনেকে বাগানের সীমানায় লম্বা সারি আকারে এই ফুলের গাছ রোপণ করেন। বাগানে যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পৌঁছে, সেই স্থান এই গাছের জন্য বিশেষ উপযোগী। ন্যাস্টারশিয়ামের আদি নিবাস পেরু ও মেক্সিকো। কোনো কোনো অঞ্চলে এই উদ্ভিদের পাতা ও ফুল সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। বুকের ঠান্ডা নিরাময়ে এবং রক্তের নতুন কোষ তৈরিতে এটি উপকারী বলে মনে করা হয়। পরিপাকতন্ত্র এবং মূত্রথলির সংক্রমণের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয় ন্যাস্টারশিয়াম।
পাতায় সালফারযুক্ত যৌগ গ্লুকোসিনোলেটস থাকায় এই উদ্ভিদ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্যাথোজেনিক জীবাণুর বিস্তারকে বাধা দেয়। ন্যাস্টারশিয়ামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা সর্দি-কাশির বিরুদ্ধে চমৎকার সুরক্ষা দেয়। এই ফুল সুস্বাদু ও খাওয়ার যোগ্য। হালকা গোবর মাটি, পানি আর একটু যত্নে আপনিও ফুটিয়ে তুলতে পারেন এসব ফুল।
ছবি: লেখক