সংসারের কাজ, অফিস, সন্তান লালন–পালন, পরিবারের সবার খেয়াল রাখা, অন্যের প্রয়োজনে ছুটে যাওয়া—এসব কাজে অনেকেই নিজেকে বিলিয়ে দেন অকাতরে। পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রয়োজন মেটাতে অনেকেই দিন-রাত এক করে কাজ করেন। কিন্তু এসবের ভিড়ে ভুলে যান নিজেকে একটু সময় দেওয়ার কথা। আর নিজেকে একটু সময় দেওয়া ও একটু ভালো থাকা আপনার প্রিয়জনদের ভালো থাকা ও তাঁদের ভালো রাখার জন্যই প্রয়োজনীয়।
অন্যদের ভালো রাখতে গিয়ে যদি নিজের জন্য সময় বের করতে না পারেন, তবে করুন এ ছয়টি কাজ। আর নতুন বছরে নিজে ভালো থাকতে এখন থেকেই এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন।
আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য শুধু আপনার প্রিয়জনদের জন্যই নয়; বরং আপনার নিজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সুস্থ থাকাই নিশ্চিত করে প্রিয়জনদের ভালো থাকা। আপনি সুস্থ থাকলে ভালোভাবে প্রিয়জনদের যত্ন নিতে পারবেন। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন, যাতে আপনি কাজ করার মতো যথেষ্ট শক্তি অর্জন করতে পারেন কিংবা একটি ক্লান্ত দিনের শেষে আবার পুনরুজ্জীবিত হতে পারেন নতুন করে কাজে নামার জন্য।
প্রতিদিনের কাজগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করতে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য দুই-ই ভালো থাকা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট হলেও খোলা বাতাসে হাঁটুন এবং জোরে নিশ্বাস নিন। ব্যায়াম করার জন্য একটু হলেও সময় রাখুন। স্মার্টফোনেই বিভিন্ন এক্সারসাইজের অ্যাপের সাহায্যে অনুসরণ করতে পারেন ১০ মিনিটের একটি যোগব্যায়ামের রুটিন। আপনি নিজে যখন শারীরিকভাবে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকবেন, তখন আপনার কাজেও সেই সতেজতা ফুটে উঠবে।
আমরা প্রায়ই নিজের জন্য কিছু করতে গেলে অপরাধবোধে ভুগতে থাকি। নিজের জন্য বেশি বা কম, যেটুকু সময় বরাদ্দ করতে পারেন, তা সম্পূর্ণ উপভোগ করার চেষ্টা করুন। অপরাধবোধের অনুভূতি আমাদের সময় ও শক্তি নষ্ট করে। তার চেয়ে বরং সে সময় নিজেকে সময় দিন ও যত্ন নিন।
কারও সাহায্য চাওয়াকে অনেকেই নিজের ব্যর্থতা ভাবেন। ভাবেন, সাহায্য চাইলে কাজ করতে না পারার অপারগতা প্রকাশ পাচ্ছে। কেউবা দ্বিধায় থাকেন কীভাবে সাহায্য চাইবেন। তবে সাহায্য চাওয়া যতই কঠিন কাজ হোক, এটিকে নিজের দুর্বলতা ভাববেন না। কোনো মানুষের পক্ষে সব কাজ সুচারুভাবে করা সম্ভব নয়। নিজে সবকিছু করার চেষ্টা আমাদের ক্লান্ত করে তোলে। দীর্ঘদিন এ রকম চলতে থাকলে তার প্রভাব পড়ে শরীর ও মনে।
আমরা প্রায়ই সময় কাটাতে, কখনো–বা নিজের অজান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ক্রল করি। মানুষের জীবনের রিলস ও পোস্ট দেখে আমাদের মনে ধারণা জাগতে পারে, ‘তাঁদের জীবন কি সুন্দর! একদম ছবির মতো!’ কিন্তু এ রকম একটা নিখুঁত ছবি বা ভিডিও মোটেও একটি ক্লিকে ধারণ করা হয় না। মনে করুন, বিছানায় কেউ চায়ের কাপ রেখেছে, পাশে খোলা বই, ফুল কিংবা একটি কমলালেবুর টুকরা। এ রকম একটা ছবি দেখে সাময়িক একটা মন খারাপ হতেই পারে। একবার ভাবুন, আসলেই কি কেউ বিছানায় চা, বই, ফুল, ফলের টুকরা রেখে ছবি তোলে? তারপরেও এই তুলনাগুলো আমাদের অপর্যাপ্ততার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, তবে এসব জিনিস না দেখাই ভালো। ক্লিক করুন আনফলো বাটনে।
নিয়মিত প্রার্থনা বা মেডিটেশন করলে আমাদের জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখতে সাহায্য করে। একটি শান্ত পরিবেশে ধ্যান বা প্রার্থনা আমাদের প্রতিদিনের কাজের যে তিক্ততা, তা থেকে বের করে আনে। এটি আমাদের আবেগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। প্রার্থনা করার পাশাপাশি আপনার চারপাশের সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমাদের জীবনকে ভালোবাসতে শেখায়। কাজের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, তখন একমুহূর্তের এই ইতিবাচকতাই আমাদের নতুন করে কাজ করার শক্তি দেয়। মানসিক চাপ কমায়। আবার নতুন করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উজ্জীবিত করে তোলে।
ছবি: পেকজেলসডটকম