ঈদের চাঁদ দেখা গেছে। কাল আমাদের দেশে উদ্যাপিত হবে ঈদ। এবারের ঈদ হয়তো হতে পারে খানিকটা অন্য রকম। এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। সাধারণত ঈদের আগের রাতে চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে শুরু হয়ে যায় উদ্যাপন। নারীরা হাতে মেহেদি দেন, সঙ্গে থাকে শিশুরাও। মজার মজার খাবার রান্না হয়। ঈদের দিনের ভোজনবিলাসের কথা তো না বললেই নয়! তবে ঈদের মেনুতে সকালবেলার পদ হিসেবে সব বাড়িতেই রান্না হয় সেমাই।
ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে এসে চলে সালামি আদান-প্রদান, নতুন জামা পরে আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়া। এই তো আমাদের ঈদ। কিন্তু আপনি কি জানেন, ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও সব জায়গায় একই রকমভাবে ঈদের খুশি উদ্যাপিত হয় না? তবে প্রতিটি সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক সীমারেখা অনুযায়ী ঈদ আলাদা আমেজে উদ্যাপন করা হলেও আবেগ কিন্তু একই থেকে যায়। চলুন তবে জেনে নিই বিশ্বের অন্য আটটি দেশে কীভাবে হয় ঈদ উদ্যাপন:
চাঁদ দেখে নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় সৌদিদের ঈদ উদ্যাপন। সকালে ঈদের নামাজ পড়ার পর আছে দাওয়াখাওয়া। এরপর সবাই মিলে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া তো আছেই। তবে তাদের উদ্যাপন সম্পূর্ণ হয় না উটের দৌড়, ঐতিহ্যবাহী নাচ–গান, বাজি পোড়ানোসহ নানা ধরনের আয়োজন ছাড়া।
বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম থাকে বেশ ওপরে। এই দেশে ঈদের আয়োজন শুরু হয় পরিবারের সবাই মিলে নতুন জামা পরে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে। এরপর যে যাঁর সাধ্যমতো দান করেন। সবশেষে ঈদের দিনের মজাদার খাবারের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই! গোটা শহর সাজানো হয়। ফলে বিরাজ করে উৎসবের আবহ।
ঈদ উদ্যাপনে মিসরীয়দের ঐতিহ্যবাহী পদের নাম ‘কাহক’। এটি মূলত একধরনের বিস্কুট, যার ওপরে ছড়ানো থাকে পাউডার্ড সুগার বা চিনির মিহি গুঁড়া। এর ভেতরে থাকে বাদাম, ঘিসহ অনেক কিছু। এই বিস্কুট ছাড়া মিসরীয়দের ঈদ থেকে যায় অসম্পূর্ণ।
আমাদের ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’ মতো ইন্দোনেশিয়ায়ও ঈদ মানে হচ্ছে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনে শিকড়ের টানে ছোটে মানুষ। তাঁদের ভাষায় একে বলে ‘মুদিক’। লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন শহর থেকে ফেরে গ্রামে। আমাদের মতো সেখানেও যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক কষ্টও হয়। তবে শেষমেশ মেলে সেই আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে।
ইন্দোনেশিয়ানদের সঙ্গে ভাষার কিছুটা মিল আছে বলেই বোধহয় ঈদ উদ্যাপনও মিলে যায় মালয়েশিয়ার। এই দেশের মানুষও বাড়ি ফেরার যাত্রায় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ কাটাতে অংশ নেয় ‘বালিক কামপুং’–এ। অর্থাৎ তারা বাড়ি ফেরে। এ ছাড়া ঈদের দিন সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য তাঁদের বাড়ির দরজা থাকে খোলা। যে কেউ ঈদ উদযাপনে অংশ নিতে পারে। তারা সবাই মিলে একসঙ্গে খায়। সেখানে দুটি পদ থাকতেই হবে। রাইস পুডিং বা কেটুপাট আর র্যানডাং বা গরুর মাংসের স্টু।
ইউরেশিয়ার দেশ তুরস্কে ঈদকে বলা হয় ‘শেকের বাইরেমা’ বা 'সুগার ফিস্ট'। অনেকটা পশ্চিমা সংস্কৃতির হ্যালোইনে যেমন হয়, তেমনই ঈদের দিন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে ক্যান্ডি নিয়ে জড়ো করে শিশুরা, এমনকি বড়রাও। এটাই তাঁদের ঈদ উদ্যাপন!
আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়া অন্যতম। বেশ জমজমাটভাবেই এইদেশে হয় ঈদ উদ্যাপন। গাড়ি, ঘোড়া, বাজনা নিয়ে ঈদের দিন একত্রে মিছিল করে রাস্তায়। এটাকে বলা হয় দরবার উৎসব। নাইজেরিয়ার সংস্কৃতি যে কতটা সমৃদ্ধ, সেটি তাদের এই উদ্যাপন না দেখলে ধারণা করা যাবে না।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ হলেও সেখানে কিন্তু ঈদের উদ্যাপন থেমে থাকে না। ঈদ উপলক্ষে জায়গায় জায়গায় মেলা বসে। মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে এই মেলায় ঘুরতে গিয়ে ঈদের দিনটা আনন্দমুখরভাবে কাটায়।
আমরা যেমন সেমাই খেয়ে ঈদের সকাল শুরু করি, পাকিস্তানে তেমনই ঈদের সকাল শুরু হয় ‘শির খুরমা’ খেয়ে। এটাকে একধরনের সেমাই বলা চলে। মানুষ প্রতিবেশীদের বাড়িতে এই শির খুরমা নিয়ে ঈদের দিন বেড়াতে যায় বলে তাঁদের মধে৵ আন্তরিক সম্পর্ক বজায় থাকে।
আমাদের তো স্বপ্ন বাড়ি যায়। না হলে যে ঈদ হয় না। শত ক্লেশ সত্ত্বেও মানুষ বাড়ি ফেরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে অসংখ্য মানুষ ফেরে শিকড়ে। কটা দিন কাটায় ফুর্তিতে। আত্মীয়পরিজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। চাঁদ দেখা থেকে শুরু হয় উদ্যাপন। বিশেষ শহরের মানুষের কাছে চাঁদরাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সবাই যেতে ওঠে। শেষমুহূর্তের কেনাকাটার চেয়েও সবাই মিলে হইচই করে বেড়ানোটাই হয় মুখ্য।
তবে এই রাতে গ্রাম–শহরে সব বাড়িতেই শুরু হয়ে যায় রান্না। আর অশব্যই মেহেদি দেওয়া। নতুন কাপড় গুছিয়ে রাখা। আর ভোরে উঠে নামাজ পড়তে যাওয়া। সবার সঙ্গে দেখা হওয়া। তারপর বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে বেড়াতে বের হওয়া।
নানা সময়ে নানা জাতির সংমিশ্রণ এই বাংলায় ঘটেছে। তাই আলাদা করে আমাদের কোন বিশেষ পদ নেই। বরং সেই অর্থে অভিন্ন পড় হল সেমাই। এটাই নানাভাবে রান্না হয়ে থাকে। তবে এলাকা ভেদে স্থানীয় কিছু পদ আছে। সেগুলো রান্না করা হয়। বাঙালির ঈদের সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সালামি। ছোটদের জন্য এই আনন্দ অপার।
ছবি: উইকিপিডিয়া ও প্রথম আলো