সর্বকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি দাবানল
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দাবানল মূলত একটি আগুনের স্রোতের মতো যা মুহূর্তে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে বিরাট অঞ্চল। বিভিন্ন কারণে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে। মূলত কোনো এলাকায় দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে খরা হয়। খরা ও শুকনো গাছে ঘর্ষণ দাবানল তৈরি করে। শুকনো জায়গায় দ্রুত আগুন ধরে। তখনই হয় দাবানল। আর এখন তো লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলের ভয়াবহতার প্রভাব বিশ্বজুড়ে সকলের মাঝে। দাবানলের ইতিহাস পৃথিবীতে নতুন নয়। দাবানল নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকলে  একে ইকোসিস্টেমের অংশ হিসেবেই ধরা হয়। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেই তা বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দাবানল বিধ্বংসী হয়ে ওঠার সবচাইতে বড় কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। চলুন তবে দেখে নিই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বিধ্বংসী দশটি দাবানল, যা প্রকৃতির ভয়ংকর শক্তির প্রকাশ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।

১. ১৯১০ সালের দ্য গ্রেট ফায়ার

১৯১০ এর এই দাবানলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচাইতে বড় দাবানল। এটি দ্য বিগ বার্ন নামেও পরিচিত।

দ্য গ্রেট ফায়ার
দ্য গ্রেট ফায়ার
ওয়িকিপিডিয়া
এতে পুড়ে যাওয়া পাইনের বন
এতে পুড়ে যাওয়া পাইনের বন

আইডাহোর ওয়ালেস শহরের পূর্বদিকটিকে এটি পুরোপুরি পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে। প্রায় ১ মিলিয়ন একরের মতো জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এতে। মারা যান ৮৭ জন মানুষ। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন দমকলকর্মী।

২.  সাইবেরিয়ান তাইগা ফায়ারস

দাবানল যে একবারে সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে বা কিছুদিনের ব্যবধানেই নিবে যাবে এমনটি একেবারেই নয়। এর সবচাইতে বড় উদাহরণ হচ্ছে সাইবেরিয়ার তাইগা ফায়ারস।

পুড়ছে সাইবেরিয়ার বনভূমি
পুড়ছে সাইবেরিয়ার বনভূমি
ইন্সটাগ্রাম (ইকো অ্যাওয়েরনেস)
জ্বলছে তো জ্বলছেই তাইগা
জ্বলছে তো জ্বলছেই তাইগা
ইন্সটাগ্রাম

এই দাবানল ক্রমানুসারে ছোট ছোট স্ফুলিঙ্গের আকারে ২০২২ সালের মে মাস থেকে শুরু হয়ে এখন অবধি জ্বলছে। এর ফলে সবচাইতে বড় যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ, তা হলো, এটি প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃস্বরণ করেছে বাতাসে, যা যুক্তরাজ্যের এক বছরের কার্বন নিঃসরণের সমানুপাতিক।

বিজ্ঞাপন

৩. ব্ল্যাক ফ্রাইডে বুশফায়ারস  

অস্ট্রেলিয়ার ব্ল্যাক ফ্রাইডে বুশ ফায়ারসের কথা আজও ভুলতে পারেনি কেউ। ১৯৩৯ সালের এ দাবানল দেশটির তৃতীয় ভয়াবহ দাবানল হিসেবে পরিচিত। ১৯৩৯ এর ১৩ জানুয়ারি তারিখ থেকে শুরু করে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ছিল এ দাবানলের স্থায়ীত্ব।

৬৮ বছর পর বুশ ফায়ারসের জায়গায় গাছ জন্মায়
৬৮ বছর পর বুশ ফায়ারসের জায়গায় গাছ জন্মায়
উইকিপিডিয়া

৪. চিনচাঙ্গা ফায়ার

চিনচাঙ্গা ফায়ারের আরেক নাম ফায়ার নাইন্টিন। এটি ১৯৫০ সালের জুন থেকে শুরু হয়ে হেমন্তকাল পর্যন্ত কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ১.৭ মিলিয়ন একর বোরিয়াল বনাঞ্চল পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। চিনচাঙ্গা নদীর তীরে শুরু হয় এই আগুন।

বিজ্ঞাপন

৫. টমাস ফায়ার

টমাস ফায়ারও এবারের মতো ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যকে জ্বালিয়ে ছাই করে। তবে এটি লেগেছিল মূলত ভেঞ্চুয়া কাউন্টিতে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই দাবানল মাত্র একমাসের ব্যবধানে প্রায় ১০৬৩ টি অবকাঠামো পুড়িয়ে ধ্বংস করে।

টমাস ফায়ার
টমাস ফায়ার
উইকিপিডিয়া

৬. চেডার ফায়ার

ক্যালিফোর্নিয়ারই আরেকটি বড় দাবানল এটি। ক্লিভল্যান্ড ন্যাশনাল ফরেস্ট থেকে সূত্রপাত এর। এরপর সান ডিয়েগো কাউন্টির প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৬ একর জমি পুড়িয়ে ফেলে এই দাবানল।

ক্যালিফোর্নিয়া আরেকবার পড়েছিল রাশ ফায়ারের কবলে
ক্যালিফোর্নিয়া আরেকবার পড়েছিল রাশ ফায়ারের কবলে
উইকিপিডিয়া

৭. রাশ ফায়ার

দীর্ঘকালীন খরার থাবায় থাকা ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। ২০১২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া আরেকবার পড়েছিল রাশ ফায়ারের কবলে। ল্যাসেন কাউন্টি থেকে শুরু হওয়া এই দাবানল ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে ১৯৩২ সালের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানলে পরিণত হয়। ধ্বংস করে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৭ একর জায়গা।

৮. বিশে বিষ-এর দ্য টু জিরো টু জিরো ক্যামেরন পিক ফায়ার

দুই হাজার বিশের ক্যামেরুন পিক ফায়ার কলোরাডোর নথিভুক্ত ইতিহাসের সবচাইতে বড় দাবানল হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৩ একর জমি, ৪৬৩ টি আবাসন ও আরো অনেক স্থাপত্যের অস্তিত্ব পুড়িয়ে নাই করে দিয়েছিল।

দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরন পিক ফায়ার
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরন পিক ফায়ার
উইকিপিডিয়া

৯. উইচ ফায়ার

২০০৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল নামেই শুধু ডাইনি নয়, এটি আধুনিক ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে অষ্টম বৃহত্তম দাবানল। গোটা যুক্তরাষ্ট্রের হিসেবে এর অবস্থান সপ্তম। সে বছরের ২১ অক্টোবর ক্রিক ক্যানিয়ন থেকে এর সূত্রপাত ঘটেছিল।

উইচ ফায়ার
উইচ ফায়ার
উইকিপিডিয়া
গ্রীক ফরেস্ট ফায়ার
গ্রীক ফরেস্ট ফায়ার
উইকিপিডিয়া

১০. গ্রিক ফরেস্ট ফায়ার  

ক্যালিফোর্নিয়া যে বছর আগুনে ঝলসে যাচ্ছিল, সেই ২০০৭ এই দাবানলের সৃষ্টি হয়েছিল গ্রীসেও। এই আগুনে ধ্বংস হয়েছিল ৬লাখ ৭০হাজার একর জমি, প্রায় ১হাজার ঘরবাড়ি। প্রাণহানি হয়েছিল প্রায় ৮৪ জন মানুষের। এর মধ্যে শুধু আগস্ট মাসেই মারা যান ৬৭ জন। এটি গ্রীসের ইতিহাসের সবচাইতে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানো দাবানল হিসেবে বিবেচিত।

সূত্র: গিকস ফর গিকস

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ১৪
বিজ্ঞাপন