মার্কিন নির্বাচন: শেষ হাসি কার—টেলর সুইফট না ইলন মাস্কের
শেয়ার করুন
ফলো করুন

জমে উঠেছে মার্কিন নির্বাচন। দিন যত ঘনিয়ে আসছে, নানামুখী আলোচনাও তত পালে বাতাস পাচ্ছে। পক্ষে–বিপক্ষে আছে উতোর–চাপান। একদিকে কমলা হ্যারিস, অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প। একদিকে নারী, অন্যদিকে পুরুষ। ফলে দ্বিধাবিভক্ত ভোটাররা। উভয় পক্ষের সেলিব্রিটি সমর্থকেরাও পিছিয়ে নেই। এবারের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর দুই হেভিওয়েট সমর্থক টেলর সুইফট আর ইলন মাস্কও আছেন আলোচনায়। মূল প্রার্থীদের লড়াইয়ের চেয়েও তাঁদের লড়াই যেন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে জমেছে নারী–পুরুষের সমীকরণ।

টেলর সুইফট ও ইলন মাস্কের প্রভাব এবারের নির্বাচনে যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে
টেলর সুইফট ও ইলন মাস্কের প্রভাব এবারের নির্বাচনে যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে

টেলর সুইফট ও ইলন মাস্কের মধ্যে তুলনা এ জন্যই অবশ্যম্ভাবীরূপে এসে পড়ে। কারণ, এই নির্বাচনে উভয়ের প্রভাব অনস্বীকার্য। অতএব যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে তাঁদের প্রভাব বিশ্লেষণে আমরা নানা মাত্রা দেখতে পাই। কারণ, দুজনেই সেলিব্রিটি। শক্তিশালী ব্যক্তিত্বও। উভয়ের জগত আলাদা। ফলে উভয়ের সমর্থকদের পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে নিজের সমর্থকদের কাছে দুজনেই যথেষ্ট জনপ্রিয়। ফলে জনমত তৈরি এবং ভোটারদের মনোভাবে পরিবর্তন আনতে তাঁরা সক্ষম। ভোটযুদ্ধে এটাই বিশেষ প্রভাবক বা অনুঘটক হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাঁরা এই প্রভাবকে কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু সেই প্রভাবের স্বরূপ বিশ্লেষণ করা গেলে মন্দ হয় না।  

বিজ্ঞাপন

সমর্থক ও পরিসর

টেলর সুইফটের বিশেষত তরুণ
টেলর সুইফটের বিশেষত তরুণ

টেলর সুইফট: ভক্তগোষ্ঠী বিশাল। তাঁরা বিশেষত তরুণ। এই ভোটাররা (১৮-২৯ বছর বয়সী) বর্তমান সময়ের মার্কিন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বা করতে পারেন। তাঁর সামাজিক মাধ্যম, বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে ২৭০ মিলিয়নের বেশি অনুসারী আছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিশাল জনসমষ্টির কাছে পৌঁছাতে পারেন। প্রগতিশীল ভোটার তথা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁর শক্তিশালী প্রভাব স্পষ্ট। বিশেষ করে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকেন যাঁরা এলজিবিটিকিউপ্লাসের অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারী অধিকারের মতো বিষয়ে সচেতন। তাঁর আহ্বান যে কতটা কার্যকর, সেটা বোঝা গেছে  জাতীয় ভোটার নিবন্ধন দিবসের সময়। এই নিবন্ধনে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি সবাইকে অবাক করেছে।

ইলন মাস্কের সমর্থক প্রবীণ
ইলন মাস্কের সমর্থক প্রবীণ

ইলন মাস্ক: টেসলা, স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এবং এক্স (সাবেক টুইটার)–এর মালিক হিসেবেই পরিচিত। তিনিও একটি বিশাল পরিসরে পৌঁছাতে সক্ষম; বিশেষত প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়, উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিকভাবে বহুবিধ মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য আছে। মূলত ডানপন্থী রক্ষণশীল এবং বামপন্থী পরিবেশবাদীদের মধ্যে মাস্কের প্রভাব যথেষ্ট। সাম্প্রতিক কার্যক্রম তাঁকে রক্ষণশীলদের কাছেও জনপ্রিয় করেছে। মাস্কের এক্স-এ অনুসারী ১৫৬ মিলিয়নের বেশি। তিনি এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিতর্কে নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছেন; বিশেষ করে বাক্‌স্বাধীনতা, নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তি নীতির বিষয়ে তিনি প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছেন।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং বার্তাবাহক

সুইফটের প্রভাব তরুণদের ওপর অনেক বেশি
সুইফটের প্রভাব তরুণদের ওপর অনেক বেশি

টেলর সুইফট: সুইফটের রাজনৈতিক সক্রিয়তা মূলত প্রগতিশীল ইস্যুগুলোকে ঘিরে। এর মধ্যে আছে নারীর অধিকার, এলজিবিটিকিউ প্লাসের অধিকার, বর্ণগত ন্যায়বিচার এবং জলবায়ুসংক্রান্ত পদক্ষেপ। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের জন্য তাঁর সমর্থন এবং ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা তাঁকে উদারপন্থী ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করেছে। তাঁর বার্তা সাধারণত স্পষ্ট এবং সরাসরি। এর মাধ্যমে তিনি মূলত তরুণ ভোটারদেরই ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে থাকেন।

সিনিয়রদের প্রভাবিত করতে পারেন মাস্ক
সিনিয়রদের প্রভাবিত করতে পারেন মাস্ক

ইলন মাস্ক: মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আরও জটিল। প্রথম দিকে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপসহ (টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়ি) এমন বিষয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে তাকে দেখা হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান আরও রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সমালোচনা করেছেন, রন ডিস্যান্টিসের মতো ব্যক্তিত্বদের সমর্থন করেছেন এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এক্স-এর মালিক হিসেবে রাজনৈতিক আলোচনায় তাঁর বিশাল প্রভাবের কারণে মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাঁকে শক্তিশালী ভূমিকায় দেখা হচ্ছে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা

প্রগতিশীল ইস্যুতে তাঁর অবস্থান বেশ শক্তিশালী
প্রগতিশীল ইস্যুতে তাঁর অবস্থান বেশ শক্তিশালী

টেলর সুইফট: সুইফটের সাংস্কৃতিক প্রভাব ব্যাপক। কারণ, তিনি শুধু একজন সংগীত তারকাই নন, বরং একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করেন। তরুণদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এবং প্রগতিশীল ইস্যুতে তাঁর অবস্থান তাঁকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। ‘ইরাস ট্যুর’ অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলায় তাঁর প্রভাবকে এতে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

নানা মন্তব্যের কারণে উভয় শিবিরেই আছে তাঁর সমালোচক
নানা মন্তব্যের কারণে উভয় শিবিরেই আছে তাঁর সমালোচক

ইলন মাস্ক: মাস্কের প্রভাব মূলত প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা তাঁকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ ও অর্থনীতিবিষয়ক আলোচনার মূল ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। টেসলা ও স্পেসএক্সের মাধ্যমে পরিবেশনীতি, পরিবহন ও মহাকাশ–সংক্রান্ত নীতিতে তাঁর বিশাল প্রভাব আছে। তথাপি তাঁর প্রভাব কিছুটা বিভাজিত। ব্যক্তি মাস্ক ও তাঁর কার্যকলাপ, বিশেষত এক্স হ্যান্ডলে তাঁর বক্তব্য উভয় রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। একদিকে তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির পক্ষে, অন্যদিকে তিনিই চান সরকারের সীমাবদ্ধ নিয়ন্ত্রণ—এই পরস্পরবিরোধিতা তাঁকে ডানপন্থীদের কাছে প্রভাবশালী করে তুলেছে।

নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব

টেলর সুইফট: নির্বাচনে তাঁর সরাসরি প্রভাব লক্ষ করা গেছে ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে। এতে স্পষ্ট হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে তাঁর পোস্ট এবং কমলা হ্যারিসকে সমর্থনের সেটা স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের অংশগ্রহণে তার প্রভাব যে শক্তিশালী অনুঘটক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে তাঁর প্রভাব কার্যকর হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাঁর প্রগতিশীল মনোভাব ভোটারদের উজ্জীবিত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভোটারদের সমর্থনের পাল্লা ভারী হতে পারে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের পক্ষে।
ইলন মাস্ক: মাস্কের প্রভাব কিছুটা পরোক্ষ হলেও সমানভাবে শক্তিশালী। এক্সের মালিক হিসেবে তিনি রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা এবং তথ্য প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। রন ডিস্যান্টিসের মতো প্রার্থীদের সমর্থনের মাধ্যমে তিনি তহবিল সংগ্রহে ও টেক সম্প্রদায়ের সমর্থন বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে পারেন।

দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রভাব

টেলর সুইফট: তরুণ ভোটারদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বৃহত্তর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করতে পারে। তাঁর নাগরিক অংশগ্রহণের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে প্রগতিশীল ভোটারদের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ইলন মাস্ক: মাস্কের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব প্রযুক্তি ও নীতিনির্ধারণে থাকতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রভাব ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

অতএব, কে বেশি প্রভাবশালী—এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্তসার হলো, তরুণ ভোটারদের সংগঠিত করতে এবং প্রগতিশীল ইস্যুতে সম্পৃক্ততায় টেলর সুইফট সরাসরি ভূমিকা রাখতে সক্ষম। অন্যদিকে ইলন মাস্ক পরোক্ষভাবে প্রভাবশালী। তিনি প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থকদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা ধরেন।

ছবি: উইকিপিডিয়া, ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ০০
বিজ্ঞাপন