বাঙালি হিসেবে আমাদের দুর্নামের শেষ নেই। কোথাও কোনো আইন না মানা, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, রাস্তা পারাপারের সময় জেব্রা ক্রসিং, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করা—এগুলো তো আছেই। তবে আমাদের সবচেয়ে বেশি বদনাম রাস্তার যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে নোংরা করা নিয়ে।
এই যে গত বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সময় আমাদের দেশে একটি ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় জাপানের দর্শকরা খেলা দেখা শেষ করে সব ময়লা পরিষ্কার করে স্টেডিয়াম থেকে বের হন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের কত ট্রল করেছি, লজ্জা দিয়েছি। কিন্তু এরপরও ঠিক হয়েছি?
না, তখনো আমাদের বিবেক জাগ্রত হয়নি। নিজেদের দেশ নিজেরাই নোংরা করেছি। কেউ রাস্তায় ময়লা ফেললে তাঁদেরও থামাইনি। তবে দিন এখন বদলেছে। মাত্র ২০ দিনে ভীষণ অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখানো নতুন প্রজন্মের হাত ধরে দেশ এগোচ্ছে সংস্কারের দিকে। ছাত্ররা এখন এগিয়ে এসেছে দেশ সংস্কারের কাজে। তাঁদের প্রথম কয়েকটি পদক্ষেপের অন্যতম ধাপ হলো, রাস্তাঘাট পরিষ্কার।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরাই এই ময়লা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েছে আর সাড়া জাগাচ্ছে সবার মধ্যে। যাঁদের হাতে এতদিন ছিল সংগ্রামে লাঠি, তাঁরাই কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই হাতে তুলে নিয়েছেন ঝাড়ু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য প্রাঙ্গণ, শহীদ মিনার, শাহবাগ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ইসিবি চত্বর, বাড্ডা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও এর আশেপাশের এলাকা, মিরপুর ১০ নম্বর ও উত্তরার বিএনএস সেন্টার—এই জায়গাগুলো লক্ষ্য করেই শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার অভিযান শুরু করে এবং তা সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।
এখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নয়, বরং সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের এক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। সেখানে শিক্ষার্থীদের তৈরি বিভিন্ন গ্রুপে পরিষ্কার অভিযানের খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগে বেশ খুশি ঢাকাবাসী। নতুন প্রজন্মের এই তরুণেরা যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, তা সত্যিই আমাদের জন্য কল্পনাতীত ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাঁদের পরবর্তী কার্যক্রমগুলো বারবার প্রমাণ করছে যে এই শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাঁদের হাত ধরেই আসতে চলেছে আমাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাংলাদেশ। দেশকে জঞ্জালমুক্ত করার প্রথম ধাপটি তাঁরা এর মাধ্যমেই পার করে ফেলেছে।
ছবি: ফেসবুক