ফিটনেসের এই নতুন ভাইরাল ট্রেন্ড অনুসরণ করে মাত্র দুই সপ্তাহে পেট কমাচ্ছেন অনেকেই
শেয়ার করুন
ফলো করুন

কয়েক বছর আগে জিমে বিশাল বিশাল জিম বল নিয়ে ব্যায়াম করছিল সবাই। এরপর ভাইরাল হয় পিলাটিস। সেটি অবশ্য এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয়। ফিটনেস দুনিয়ায় কিছুদিন পর পরই একেকটি নতুন ট্রেন্ড আসে। এই যেমন সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে এক নতুন ফিটনেস চ্যালেঞ্জ—১০০ কেটলবেল সুইং প্রতিদিন। টিকটকে ভাইরাল হওয়া এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছেন হাজারো মানুষ। নিজেদের শরীরের পরিবর্তনের বিফোর-আফটার লুক শেয়ার করছেন।

টিকটকে ভাইরাল হওয়া এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছেন হাজারো মানুষ
টিকটকে ভাইরাল হওয়া এই ট্রেন্ডে অংশ নিচ্ছেন হাজারো মানুষ
ছবি: পেকজেলস
অনেকেই দাবি করছেন, দাবি করছেন, মাত্র ২ সপ্তাহেই পেট কমে যাচ্ছে এই ট্রেন্ড সঠিকভাবে মেনে চললে
অনেকেই দাবি করছেন, দাবি করছেন, মাত্র ২ সপ্তাহেই পেট কমে যাচ্ছে এই ট্রেন্ড সঠিকভাবে মেনে চললে

যারা দ্রুত ওজন কমাতে বা শরীরটাকে টোন করতে চান, তাঁদের কাছে এই চ্যালেঞ্জ যেন এক নতুন আশার আলো। অনেকেই বলছেন এটা সহজ, সময় কম লাগে, আর ঘরেই করা যায়। ফলে বিভিন্ন বয়সের মানুষই এতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ছবি আর ভিডিও পোস্ট করে তাঁরা দাবি করছেন, মাত্র ২ সপ্তাহেই আর কিছু না হলেও পেট কমে যাচ্ছে এই ট্রেন্ড সঠিকভাবে মেনে চললে।  

বিজ্ঞাপন

কী এই কেটলবেল সুইং

কেটলবেল সুইং হলো একটি হাই-ইন্টেনসিটি ওয়ার্কআউট, যা কার্ডিও এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিংয়ের চমৎকার সমন্বয়। এই অনুশীলনে ব্যবহার করা হয় কেটলবেল নামক একটি ভারী লোহার ওজনদার বস্তু, যা দেখতে অনেকটা হাতলযুক্ত গোল বলের মতো।অনুশীলনের পদ্ধতিটি হলো- দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে কেটলবেলটিকে পেছনে নেওয়ার পর তা সামনে দুলিয়ে শূন্যে ভাসাতে হয়, সেই সঙ্গে শরীর থাকে স্কোয়াট ভঙ্গিমায়। এই মুভমেন্ট বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয় নির্দিষ্ট সংখ্যায়। এই ব্যায়াম মূলত শরীরের কোর মাংশপেশি, লোয়ার অ্যাবডোমেন, পিঠ, হিপস ও পায়ের পেশিতে সরাসরি কাজ করে। ফলে এটি ক্যালরি বার্ন, শরীর টোনিং ও পেশি শক্তিশালী করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর বলে বিবেচিত।তবে ঠিকভাবে না করলে এটি বিপজ্জনকও হতে পারে, বিশেষ করে কোমর ও পিঠের জন্য। এজন্য সঠিক ভঙ্গি ও নির্দেশনায় করা জরুরি।

কেটলবেলটিকে পেছনে নেওয়ার পর তা সামনে দুলিয়ে শূন্যে ভাসাতে হয়
কেটলবেলটিকে পেছনে নেওয়ার পর তা সামনে দুলিয়ে শূন্যে ভাসাতে হয়
 সেই সঙ্গে শরীর থাকে স্কোয়াট ভঙ্গিমায়
সেই সঙ্গে শরীর থাকে স্কোয়াট ভঙ্গিমায়

কেটলবেল ট্রেন্ডে কেন ঝুঁকছেন নেটিজেনরা

সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা এই চ্যালেঞ্জ অনুসরণ করছেন, তাঁদের মতে, ১০০ কেটলবেল সুইং প্রতিদিন একটি সহজ, সময়সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী এক্সারসাইজ রুটিন। অনেকেই বলছেন, দিনে মাত্র ১০–১৫ মিনিট এই ব্যায়ামে সময় দিলেই কিছু না কিছু পরিবর্তন আসছে শরীরে। টিকটকের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মাত্র দুই সপ্তাহেই পেটের চর্বি চোখে পড়ার মতো কমে গেছে, শরীরের টোনিংও হয়েছে লক্ষণীয়ভাবে।বিফোর–আফটার  ভিডিও ও ছবি দেখে অনেকেই নতুন করে ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এই ট্রেন্ড যেন এক নতুন মোটিভেশন ওয়ার্ক আউট শুরু করার
এই ট্রেন্ড যেন এক নতুন মোটিভেশন ওয়ার্ক আউট শুরু করার

ফিটনেসে যাঁরা অনিয়মিত ছিলেন, তাঁদের জন্য এই ট্রেন্ড যেন এক নতুন মোটিভেশন। সামাজিক মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারীর বয়ানে, 'সকালটা শুরু করি কেটলবেল সুইং দিয়ে, এখন আর জিমে না গেলেও মন খারাপ হয় না'।  অন্য একজন বলেছেন, 'দুই সপ্তাহে শুধু শরীর নয়, আত্মবিশ্বাসও ফিরে পেয়েছি। এই চ্যালেঞ্জ আমাকে চালিয়ে যেতে প্রেরণা দিচ্ছে।'

বিজ্ঞাপন

তবে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞ ও ফিটনেস ট্রেইনাররা এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট নাটালি ফ্লেচার বলছেন, '১০০ কেটলবেল সুইং দৈনিক করা মানে আপনার কোমর, পিঠ ও হ্যামস্ট্রিংয়ের উপর প্রচণ্ড চাপ ফেলা। ভুল ভঙ্গিতে করলে এতে সহজেই কোমরের ব্যথা বা মাসল স্ট্রেইনের ঝুঁকি থাকে।'এ ছাড়া কেটলবেল সুইংয়ে কোর স্ট্যাবিলিটি ও হিপ হিঞ্জিংয়ের সঠিক টেকনিক জানা না থাকলে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যেকোনো ট্রেন্ড অনুসরণের আগে ব্যক্তিগত ফিটনেস লেভেল , শারীরিক সক্ষমতা এবং এক্সারসাইজের টেকনিক সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুবই জরুরি।পাশাপাশি, যেকোনো নতুন ফিটনেস রুটিন শুরু করার আগে চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ফিটনেস চ্যালেঞ্জ দেখতে আকর্ষণীয় হলেও, শরীরকে ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগতভাবে পরিকল্পিত ও কৌশলগতভাবে সঠিক নিয়মে অনুশীলন।

অবশ্যই ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়ামটি করুন
অবশ্যই ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়ামটি করুন

মাল্টিজিম প্রিমিয়াম ও রেড জিমের ফিটনেস ট্রেইনার নাহিয়ান রানা বলেন, '১০০ কেটলবেল সুইং দৈনিক করা কোনোভাবেই যারা অ্যামেচার বা নতুন ব্যায়াম শুরু করছেন, যাদের কোর স্ট্রেংথ দুর্বল তাঁদের জন্য নিরাপদ নয়। কারণ ভুল ফর্মে বা অতিরিক্ত অনুশীলনে কোমর ও পিঠের ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু কেটেলবেল নয়, স্কোয়াট, লাঞ্জেস, ডেড লিফটের মতো বডি ওয়েট এক্সারসাইজ প্রতিদিন ১০০-১৫০ কিংবা ২০০ বার দুই বা চার সপ্তাহ ধরে করলে এমনিতেই ওজন কমাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়ামটি করুন।'

কীভাবে নিরাপদ থাকবেন এই ট্রেন্ড মেনে

শুরুতে ফর্ম শেখা জরুরি। প্রয়োজনে একজন ফিটনেস কোচের সাহায্য নিতে পারেন, প্রথম দুই দিন তাঁকে দেখিয়ে নিন আপনার ব্যায়ামের ভঙ্গিমা বা পশচার ঠিক আছে কিনা ।ওজনের মাত্রা কম থেকে শুরু করুন।বিভিন্ন ওজনের কেটলবেল থাকে প্রথমে অল্প ওজন দিয়ে শুরু করে দক্ষতা বাড়ার ভিত্তিতে ওজন বাড়ান। প্রতিদিনের বদলে বিকল্প দিন অনুশীলন করুন, যেন শরীর ও মাংসপেশি বিশ্রাম পায়।

অন্ধের মতো ট্রেন্ড না মেনে বুঝে-শুনে করুন এই ব্যায়াম
অন্ধের মতো ট্রেন্ড না মেনে বুঝে-শুনে করুন এই ব্যায়াম
ছবি: পেকজেলস

শরীরে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি অনুভব করলে ব্যায়াম বন্ধ রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যালেঞ্জগুলো অনেক সময় মোটিভেশন তৈরি করলেও, তা অন্ধভাবে অনুসরণ করা উচিত নয়। কেটলবেল সুইং একটি কার্যকর এক্সারসাইজ তবে নিয়ম, ধৈর্য ও ইনজুরির ঝুঁকি মুক্ত থাকলেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল। ফিটনেস হলো লাইফস্টাইলকেন্দ্রিক পরিবর্তনের ফল, যার কোন শর্টকাট নেই। আপনার শরীরের কথা শুনুন, সময় দিন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত  নিন। সোশ্যাল ট্রেন্ডকে নয়, নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দিন।

ছবি: হাল ফ্যাশন

মডেল: আহনাফুর রহমান

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন