বিল গেটস বলছেন ১০ বছরে সাপ্তাহিক কর্মদিবস নেমে আসবে ২ দিনে, কিন্তু কীভাবে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বেশ কিছুদিন ধরেই সামনের দিনগুলোর কর্মজীবন কেমন হবে, কী কী পেশাদার স্কিল প্রয়োজন পড়বে, সেখানে এআইয়ের ভূমিকা ও প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে টেক বিলিয়নিয়ার বিল গেটস নিজের বিভিন্ন মতামত আর পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। আর তাঁর মতো একজন প্রাজ্ঞ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দূরদর্শিতা সম্পন্ন সফল প্রযুক্তি মোগলের প্রতিটি কথা আর ভাবনাই এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিল গেটসের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  বা এআই এমন এক সময় নিয়ে আসছে, যখন মানুষকে হয়তো সপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করতে হবে
বিল গেটসের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এমন এক সময় নিয়ে আসছে, যখন মানুষকে হয়তো সপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করতে হবে

তবে সম্প্রতি তিনি ভবিষ্যতের কর্মসপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করতে হবে বলে যে বিস্ফোরক পূর্বাভাস দিয়েছেন, তা নিয়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কাজ কমলে কি বেতন কমবে না? আর পেশাজীবী হিসাবে চাহিদাও? এই পূর্বাভাস কি সুসংবাদ নাকি দুঃসংবাদ? বিল গেটসের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  বা এআই এমন এক সময় নিয়ে আসছে, যখন মানুষকে হয়তো সপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

'স্বাগতম পাঁচ দিনের উইকএন্ডে': মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছেন, 'এআই খুব শিগগিরই প্রায় সবকিছু স্বয়ংক্রিয় করে ফেলবে, আর এর ফলেই আগামী দশকের মধ্যেই মানুষ সপ্তাহে মাত্র দুই দিন কাজ করবে'। যাঁরা ৯টা-৫টার একঘেয়ে রুটিনে ক্লান্ত, তাঁদের জন্য এটা সুখবর।বর্তমান উদ্ভাবনের গতিতে, গেটসের ধারণা মানুষকে বেশিরভাগ কাজের জন্য আর প্রয়োজন হবে না,তাই কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে হবে।

স্বাগতম পাঁচ দিনের উইকএন্ডে'- মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছেন
স্বাগতম পাঁচ দিনের উইকএন্ডে'- মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছেন

তিনি 'দ্য টুনাইট শো'-তে জিমি ফ্যালনকে বলেছিলেন,“ভবিষ্যতে চাকরিগুলো কেমন হবে? আমরা কি কেবল ২ বা ৩ দিন কাজ করব?”এটাই প্রথম নয় যে গেটস কাজের সময় কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন তিনি। ২০২৩ সালে, যখন চ্যাটজিপিটি একেবারে নতুন, তখন গেটস বলেছিলেন—সমাজ একসময় এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যেখানে সপ্তাহে তিন দিন কাজ করাই স্বাভাবিক হবে, আর তখন মানুষকে শিখতে হবে অবসর সময় কীভাবে ব্যবহার করবে। তিনি ট্রেভর নোয়ার “হোয়াট নাও?” পডকাস্টেও বলেছিলেন,“যদি একটু বৃহত্তর দৃষ্টিতে দেখা যায়, জীবনের উদ্দেশ্য শুধু কাজ করা নয়।”

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশের জন্য কোনোভাবেই দুশ্চিন্তার কারণ না হলেও প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে বিয়ে আর জন্মহার কমে আছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিল গেটসের কথা সত্য হলে ৫ দিনের উইকএন্ড জন্মহার বাড়াতে পারে, জীবনের ক্লান্তি কমাতে পারে। কাজের সময় কমানো অনেক কর্মীর কাছেই আশার খবর, বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ আর বিচ্ছিন্নতার মধ্যে আছেন — বিশেষত করোনা মহামারির পর।

সপ্তাহে একদিন কাজ কমানো উৎপাদনশীলতা ২৪ শতাংশ বাড়ায়
সপ্তাহে একদিন কাজ কমানো উৎপাদনশীলতা ২৪ শতাংশ বাড়ায়

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে একদিন কাজ কমানো উৎপাদনশীলতা ২৪ শতাংশ বাড়ায় এবং কর্মীদের ক্লান্তি অর্ধেকে কমিয়ে আনে। যদিও ছোট কর্মসপ্তাহ এখনো সর্বত্র গৃহীত হয়নি, কিন্তু পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে। যেমন টোকিওর মেট্রোপলিটন সরকার সম্প্রতি সপ্তাহে চার দিনের কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যার একটি উদ্দেশ্য হলো জাপানে জন্মহার বৃদ্ধি।  

গেটস স্বীকার করেছেন, এআই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে কিছু পেশায় পরিবর্তন অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হবে। ফ্যালনের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি ডাক্তার ও শিক্ষক পেশাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তবে তিনি বলেন এই পরিবর্তন হবে সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য।

গেটস এমন এক পৃথিবীর কথা কল্পনা করছেন যেখানে প্রায় সবকিছুই এআই করবে
গেটস এমন এক পৃথিবীর কথা কল্পনা করছেন যেখানে প্রায় সবকিছুই এআই করবে


তিনি আরও বলেন, “আগামী দশকে এআই-এর মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তা হবে সবার জন্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য — চমৎকার চিকিৎসা পরামর্শ, দারুণ শিক্ষা সহায়তা, সবই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।”গেটস এমন এক পৃথিবীর কথা কল্পনা করছেন যেখানে প্রায় সবকিছুই এআই করবে। তিনি বলেন, “কিছু বিষয় আমরা নিজেরা করব ঠিকই, কিন্তু জিনিস তৈরি করা, মুভ করা, খাবার উৎপাদন — সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো মূলত এ আই দিয়েই  সমাধান হয়ে যাবে।” শেষে বিল গেটস পরামর্শ দেন, “এআই-কে হারানো নয়, বরং গ্রহণ করাই হবে টিকে থাকার উপায়।” ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্রে যারা নতুন প্রযুক্তির যুগে সফল হতে চান, তাদের উচিত এআই-কে বাধা নয়, সহযাত্রী হিসেবে নেওয়া। এআই লিটারেসি বা এআই-দক্ষতা ২০২৫ সালের দ্রুততম-বর্ধনশীল দক্ষতা।

সূত্র: ফরচুন

ছবি: ইন্সটাগ্রাম ও পেকজেলস

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৫
বিজ্ঞাপন