‘ফ্রেন্ডস রি-ইউনিয়ন’ সিরিজ দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। তবে পৃথিবী তোলপাড় করা বিষয়টি হলো, এই সিরিজে রস ও র্যাচেলের ভূমিকায় অভিনয় করা ডেভিড স্কিমার ও জেনিফার অ্যানিস্টনের ভালোবাসার প্রকাশ। টানা ১০ সিজন ধরেই একসঙ্গে দেখতে উদ্গ্রীব ছিল পুরো বিশ্ব। ফলে তাঁদের সম্পর্কের এ তথ্য সবাইকেই আলোড়িত করে। সিরিজের এই দুই লবস্টার তাহলে কেন কখনোই এক হলেন না? এর উত্তরে তাঁরা বলেন, পুরোটা সময়ই তাঁরা নিজেরা অন্য কোনো না কোনো সম্পর্কে ছিলেন। ফলে ভালো লাগা কখনো অন্য মোড় নেয়নি।
সত্যি বলতে গেলে হ্যাঁ, খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তবে এই জায়গায় সবারই থাকে অনেক প্রশ্ন, অনেক জটিল চিন্তা এবং সবচেয়ে বড় কথা, এ ধরনের পরিস্থিতিগুলো সামলে নিতে না পারলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
মনে করুন, আপনি একটি সম্পর্কে থাকা অবস্থায় অন্য কাউকে আপনার একটু বেশিই মনে হতে থাকল কিংবা ভালোই লেগে গেল কিছুটা। এই ধরনের পরিস্থিতিকে চিট করা বা বিশ্বাসঘাতকতার মতো ভারী আর কঠিন শব্দে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। এ ধরনের অবস্থা তৈরি হওয়া খুবই সাধারণ। পরিসংখ্যান বলে, প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষই একটি সম্পর্কে থাকাকালে কোনো না কোনো সময় অন্য কারও জন্য দুর্বল হওয়া বা ভালো লাগার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করে নেয়।
এ ক্ষেত্রে আগে কিছু জিনিস জেনে নেওয়া অনেক বেশি জরুরি। সাধারণত, প্রেমের সম্পর্কগুলোর প্রথম অংশটা পুরোটাই একটা হরমোন আর ইমোশনের খেলা। তবে ২-৩ বছর পরে যখন ওই প্রাথমিক বাটারফ্লাই স্টেজটা পার হয়ে যায়, তখন দায়িত্ব কিংবা কাজের চাপে সম্পর্কটা রোজকার রুটিন কাজের একটা জায়গায় চলে আসে। মানুষ যেহেতু নতুন জিনিসের প্রতি খুব তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট হয়, তাই নতুন করে কাউকে চিনলে তাঁকে ভালো লেগে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ভালো লাগা, ক্রাশ কিংবা ইনফ্যাচুয়েশন পর্যন্ত এই জিনিসগুলো আসলে সময়ের সঙ্গে চলে যায় কিংবা অভ্যাসের আর নিজের মানুষের প্রতি ভালো লাগার থেকে মানুষ সরে যায়। তাই জিনিসটাকে খুব জটিল না করলেও চলে। তবে সবার জন্য সব পরিস্থিতি সমান না। খুব জটিল বা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাঁরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন, তাঁদের জন্য এই ধরনের ভালো লাগা তাঁদের দিনের পর দিন ধরে চলে আসা মানসিক অবসাদের চিহ্ন হতে পারে। হয়তো এখনই সময় নিজের সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা করার।
ডেভিড আর জেনিফারের মতো অনেক মানুষই ভালো লাগার পর্যায়ে নিজেদের কমিটেড সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করে সরে আসতে পারেন, যা কিনা সবচেয়ে যৌক্তিক ও স্বাভাবিক সমাধান। অনেকে দূরত্ব তৈরি করেন কিংবা নিজের সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করেও এ ধরনের পরিস্থিতি সামলে নিতে পারেন। সাধারণত ওই ভালো লাগার অনুভূতিকে প্রশ্রয় না দিলে সময়ের সঙ্গে এটি থেকে বেরিয়ে আসা সুস্থ সম্পর্কে থাকা মানুষের জন্য খুব একটা কঠিন হয় না। কিন্তু মুদ্রার অন্য পিঠও আছে। যেমন আমরা দেখি, বলিউডের মুভি ‘ককটেল’, ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ কিংবা বুদ্ধদেব গুহের ‘নগ্ন নির্জনে’র মতো উপন্যাসে। তাই ভালো লাগার আর ভালোবাসার মধ্যে ‘ফাইনলাইন’ বজায় রাখতে না পারলে তার ফল হতে পারে ভয়াবহ।
তবে এ ধরনের বিষয় শেয়ার করামাত্রই পার্টনারের সঙ্গে আরও দূরত্ব তৈরির কিংবা জটিলতা সৃষ্টির ভয়ে অনেকেই কাউকে বলতে পারেন না বলেই অনেক মনোবিজ্ঞানীর অভিমত। তবে নতুন একজনের কী ভালো লাগে, এই ধরনের বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কে আরও নতুন মাত্রা আনতে পারে, তাই বিষয়টিকে খুব একটা খারাপ নজরে দেখেন না সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা কোনো বিশেষজ্ঞই।
তাহলে সমস্যা কখন তৈরি হয়? এমন প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। সমস্যা তৈরি হয় যখন সঙ্গীর পেছনে সেই ভালো লাগা আরও বহুদূর এগিয়ে যায়। খুব সাধারণ নীতির কথা বলতে গেলেও অন্য কাউকে ভালো লেগে গেলে এবং এই সম্পর্ককে আর পছন্দ না হলে আগে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাই উচিত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, সম্পর্ক কিংবা অনুভূতি—এইগুলো সব সময়ই ব্যক্তিবিশেষে আলাদা। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আলাদাভাবে আসে, আশপাশের অবস্থা আলাদাই হয়। নিজেকে ও নিজের আবেগ-অনুভূতিকে তাই গুরুত্ব না দিয়ে চলা কখনোই উচিত নয়। কারও জন্য যেমন এই ভালো লাগা হতে পারে নিজের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার উপায়, কারও জন্য হতে পারে বেরিয়ে আসার ছোট্ট রিমাইন্ডার।
তাই নিজেকে সময় দেওয়া, নিজের আবেগ-অনুভূতিকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য একটু বিশ্রাম দেওয়া আর আবেগের বশে কিছু করে না ফেলার পরামর্শই দেন সবাই। নিজের সঙ্গীর সঙ্গে এই বিষয়ে খোলামেলা ও সহজ কথাবার্তাও হতে পারে সঠিক সিদ্ধান্ত। এর বাইরে বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া কিংবা মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করাও হতে পারে ভালো সিদ্ধান্ত।
লেখক: ছাত্র, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়