সব সম্পর্কই যে ভালোবাসার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সম্পর্ক সুস্থ রাখতে আরও অনেকগুলো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেগুলোর কথা যেন খুব একটা ভাবা হয়ে ওঠে না। এমনই একটি ব্যাপার হলো, অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা। অনেকেই এসব ব্যাপার নিয়ে খুব একটা আলোচনা করতে চান না। কিন্তু সঙ্গীর সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা অনেক জরুরি। অনেক সময় সঙ্গী সব সময় টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা করার কারণে ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। তাই প্রথম থেকেই এসব বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকা ভালো। তা না হলে সম্পর্কে দেখা দিতে পারে নানা ভুল–বোঝাবুঝি। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার সঙ্গীর টাকাপয়সা–সংক্রান্ত ঝামেলাগুলো কীভাবে একটি সম্পর্কে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১. আয়ের হিসাব নিয়ে অস্পষ্টতা
সম্পর্ককে সুস্থ রাখতে স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার সঙ্গী তাঁর আয়, খরচ কিংবা সঞ্চয় সম্পর্কে অস্পষ্টতা বজায় রাখেন এবং বারবার ব্যাপারটি এড়িয়ে যান, তাহলে এটি ভবিষ্যতে একধরনের আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। অনেকেই বলে থাকেন, সম্পর্কে অর্থ টেনে আনা মোটেও ঠিক নয়। তবে যখন আপনি একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছেন, তখন এসব বিষয় নিয়ে অস্পষ্টতা যত কম রাখা যায়, ততই ভালো। তবে এসব গোপনীয়তা বজায় রাখা মানেই যে প্রতারণা করা হচ্ছে, তা নয়। তবে আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে স্বচ্ছতা না থাকলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি হতে পারে।
২. ঋণ নিয়ে মিথ্যা বলা
প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে ঋণের মধ্যে পড়তে পারেন। তবে এ নিয়েও স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। যদি আপনার সঙ্গী তাঁর ঋণের পরিমাণ গোপন রাখেন বা কমিয়ে বলেন, তাহলে এটিকে নিঃসন্দেহে একটি ‘রেড ফ্ল্যাগ’ বলা যেতে পারে। এটি আর্থিক দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রদান করে এবং সম্পর্কের ওপরও একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যদি ভবিষ্যতে একসঙ্গে বসবাসের পরিকল্পনা করেন, তাহলে এই ধরনের লুকোচুরি পরবর্তী সময়ে গিয়ে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৩. বাজেট মেনে চলতে না পারা
সঙ্গী যদি নিয়মিতভাবে বাজেটের বাইরে খরচ করে, তবে এটি ভবিষ্যতে গিয়ে একটি ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকা জরুরি, যাতে খরচের সঙ্গে সঞ্চয়ের ভারসাম্য বজায় থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, একজন সঙ্গী দায়িত্বশীলভাবে ব্যয় করছেন, কিন্তু অপরজন লাগামহীনভাবে খরচ করছেন। এটি একপর্যায়ে সম্পর্কের মধ্যে হতাশা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ বিষয়ে প্রথম থেকেই খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি।
৪. নিয়মিত বিল পরিশোধে গাফিলতি
যদি আপনার সঙ্গী নিয়মিতভাবে বিল পরিশোধে গাফিলতি করেন বা দেরি করেন, তবে এটি আর্থিক দায়িত্বশীলতার অভাবকেই নির্দেশ করে। এটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যাই নয়, বরং যদি একসঙ্গে থাকেন বা ভবিষ্যতে থাকার পরিকল্পনা করেন, তাহলে তা আপনার জীবনকেও প্রভাবিত করতে পারে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয়ের অর্থনৈতিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা জরুরি।
৫. সঞ্চয় বা বিনিয়োগে আগ্রহ না দেখানো
আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার সঙ্গী কখনোই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করেন এবং অর্থ সঞ্চয় বা বিনিয়োগে মোটেই আগ্রহী না হন, তবে তা ভালো লক্ষণ নয়। এটি পরবর্তী সময় গিয়ে আপনার দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একসঙ্গে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য ভালোবাসার পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা জরুরি। তাই সময় থাকতেই এ ব্যাপারগুলো নিয়ে সতর্ক হওয়া ভালো।
সূত্র: মানি কন্ট্রোল
ছবি: পেকজেলস ডট কম