চিরকুমার সভার স্বঘোষিত সদস্য আর সিঙ্গেল লেডিস ক্লাবের অবিসংবাদিত সভাপতিরাও অনেক সময় হঠাৎ প্রেমের দেবতা কিউপিডের তীরে ঘায়েল হয়ে যান। রয়েসয়ে আর বুঝেশুনে যখন তাঁরা স্থির করেন যে এই মানুষের সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধবেন, সে ভাবনায় থাকে একধরনের দৃঢ়তা আর দায়িত্ববোধ। আসলে পরিণত বয়সের পরিণয়ে আছে বিভিন্ন ভালো দিক।
বিখ্যাত মার্কিন সমীক্ষাবিষয়ক সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সাম্প্রতিক গবেষণা বলে, মিলেনিয়ালদের ৫৬ শতাংশ এখনো অবিবাহিত। এদিকে এর আগের প্রজন্মে ৩০ হতে না হতেই দুতিনজন সন্তান হয়ে যেত বিয়ের পর। আবার বর্তমান জেনজি বা জুমার প্রজন্মের এক বড় অংশ আবার বিয়ের নামই শুনতে পারে না। এসব নিয়ে মা-বাবা আর সমাজ হাহুতাশ করলেও আসলে পরিণত বয়সের বিয়ে বেশি স্থায়ী আর শান্তিপূর্ণ, বলছে বিভিন্ন সমীক্ষা।
কিছু ক্ষেত্রে সন্তান হওয়া আর বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ইস্যু বাদ দিলে বুঝেশুনে চল্লিশের পরে বিয়ে করার রয়েছে নানা ফায়দা। এবারে এমন ৪টি সুবিধার কথা জেনে নেওয়া যাক।
১.আবেগ ও মানসিকতার পরিপক্বতা
প্রতিটি বিষয়ে সাফল্য পেতেই পরিশ্রম করতে হয়। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করতে হয়। দাম্পত্যও তাই। পরিণত চিন্তাভাবনা এ ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হতে পারে। বিশেষ দিন ভুলে যাওয়া বা বেড়াতে যাওয়ার সময় মনে করে সঙ্গীকে কেমন লাগছে, তা না বলার মতো অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে৷ অথচ তরুণ বয়সে এসব নিয়ে রোজই একচোট হয়ে যায়।
২.দ্বন্দ্ব আর অমিলের সঙ্গে আপসকামিতা
প্রতিটি মানুষ আলাদা। ভিন্ন তারা স্বভাবে, পছন্দের দিক থেকে, এমনকি আবেগের বহিঃপ্রকাশেও। কারও থাকতে পারে বিশেষ কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার জায়গা। এসব দ্বন্দ্ব আর অমিল নিয়ে তুলকালাম ঘটে দম্পতিতের মাঝে। মাঝেমধ্যে সঙ্গীর পছন্দের খাবার থাকে রাতের ভোজে। আমার প্রিয় মুভি, বই বা রাজনৈতিক দল তার প্রিয় না হলেও দুনিয়ায় কেয়ামত এসে যাবে নাএমন ভাবনা পরিণত বয়সে এসেই সম্ভব।
৩.পেশাগত স্থিতি
কম বয়সের বিয়েতে জীবিকার তাগিদে বা সন্তানসংসার দেখভালের প্রয়োজনে পুরুষ ও নারী উভয়কেই ক্যারিয়ার নিয়ে ছাড় দিতে হয়। প্রায়ই আরাধ্য লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না কেউ। এসব নিয়ে জীবনভর থেকে যায় অতৃপ্তির অনুভব। পড়াশোনা শেষ করে পেশাগত জীবনে একটি রেললাইনে নিজের রেলগাড়িটি চলতে দিয়ে বিয়ে করলে এদিক দিয়ে খুবই উপকারিতা পাওয়া যায়। তখন সময়ও পাওয়া যায় বেশি।
৪.আত্মিক ভারসাম্য
নিজের ভেতরের বক্তব্য শোনা, বুঝেশুনে সবদিক বিবেচনা করে জীবনের নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো আত্মিক ভারসাম্য কম বয়সে থাকে না। ফলে দাম্পত্য জীবন এক ভুলের ফুলে গাঁথা বহু লহরি মালায় পরিণত হয়। আর সে ভুলগুলোকে পেছনে ফেলে সামনে এগোনোর জন্যও প্রয়োজন পরিপক্বতা, ইমোশনাল ম্যাচিউরিটি যাকে বলে। আবার এই ভারসাম্য থাকলে সঙ্গী নির্বাচন করা যায় সবদিক ভেবে নিয়ে, যার সঙ্গে মেলে। আর এতে সম্পর্কের বন্ধন আখেরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, দাম্পত্য হয় সুখশান্তিময়।
ছবি: পেকজেলসডটকম