জন ডাবাচ তাঁর গবেষণা ও কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, বেশির ভাগ বিয়ে ভাঙে এমন একটি কারণে, যা অধিকাংশ মানুষ বুঝতেই পারে না। আর এই কারণকে তিনি বলছেন অব্যক্ত প্রত্যাশা বা আনকমিউনিকেটেড এক্সপেকটেশন।
“আমি আশা করেছিলাম তুমি বুঝবে”- এই কথাটিই অধিকাংশ সময় দাম্পত্য জীবন বা সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই মনে করেন, সম্পর্ক দীর্ঘ হলে, ভালোবাসা থাকলে, সঙ্গী নিশ্চয়ই একে অপরের প্রয়োজন বুঝে নেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভাব বিনিময় বা প্রয়োজনের বিষয়ে যত কম কথা হয়, তত বেশি ভুল বোঝাবুঝি জন্ম নেয়।
জন ডাবাচ ১৩ বছর ধরে দম্পতি ও যুগলদের কাউন্সেলিং করছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি মনে করেন, বিয়ে ভাঙে শুধু ঝগড়ায় নয়, বরং ছোট ছোট অপূর্ণ চাহিদায় থেকেও। অথচ এসব বিষয় নিয়ে কেউ কখনো কথা বলে না বা মুখে উচ্চারণই করে না।
যখন কোনো যুগল বা দম্পতির কথাবার্তা সীমিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ শুধুই দৈনন্দিন প্রয়োজনের মধ্যেই যখন তাদের কথাবার্তা আবদ্ধ হয়ে যায়। তখন বুঝতে হবে, সম্পর্ক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গা হারিয়ে গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জন বলেন, বিশেষভাবে বলতে হয় যখন দম্পতিদের মাঝে ‘বাচ্চাকে স্কুল থেকে এনেছ?’, ‘বাজার করেছ?’, ‘বিদ্যুৎ বিল জমা দিয়েছ?’— এ ধরনের কথার বাইরে আর কোনো কথা থাকে না। তখন বুঝতে হবে তাদের সম্পর্কের মাঝে অব্যক্ত প্রত্যাশা বা আনকমিউনিকেটেড এক্সপেকটেশনের পাহাড় জমে গিয়েছে; যা ভবিষ্যৎ বড় বিপদের লক্ষণ।
জন আরও বলেন, একজন ভাবছে, ‘সে তো এতদিনে আমার প্রয়োজন বোঝার কথা’, আর অন্যজন ভাবছে ‘সবই তো ঠিকঠাক চলছে’। কিন্তু এই নীরবতা আসলে দূরত্ব তৈরি করছে এবং একসময় দেখা যায় দুজন মানুষ এক ছাদের নিচে আলাদা জীবন কাটাচ্ছেন।
যখন এমন অপ্রকাশিত প্রত্যাশা বা অনুভূতি তৈরি হতে শুরু করে, তখনই প্রয়োজন খোলামেলা ও পরিষ্কার কথাবার্তা। জন পরামর্শ দেন, ‘একটা সময় এসে আপনাকে বলতে হবে। আমার মনে হচ্ছে আমরা নিজেদের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া নিয়ে সঠিক ভাবে কথা বলছি না। কাজটি খুব সহজ না হলেও খুব কঠিনও নয়। বড় বিষয় হচ্ছে এ নিয়ে কথা বলা খুবই কিন্তু প্রয়োজনীয়। এছাড়া সঙ্গীর কাছ থেকে নিয়মিত জানতে চাওয়া উচিত। —‘তুমি আমার কাছ থেকে কী চাও, যা আমি বুঝতে পারছি না?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ে বা সম্পর্ক বাঁচাতে শুধু ঝগড়া, মান-অভিমান এড়িয়ে চললে হবে না। একে অপরের সঙ্গে মন খুলে, স্পষ্ট ভাষায় সত্য কথাগুলো বলতে হবে এবং বোঝাতে হবে।’
ভালোবাসা বা সম্পর্কের বোঝাপড়া এমন কিছু নয়, যা একবার পেলেই চিরস্থায়ী হয়ে যায়। এগুলোর যত্ন নিতে হয়, চর্চা করতে হয় নিয়মিত। জন ডাবাচের মতে, এই যত্নের প্রথম শর্ত হলো-যা মনে আসে, তা বলা, শোনা ও বোঝা।
সূত্র: কসমপলিটন ও জন ডাবাচ–এর পডকাস্ট