
কৈশোরকালে সন্তানদের সামলাতে সব বাবা-মায়েরই কম বেশি ঝক্কি পোহাতে হয়। কারণ এই সময়ে তারা শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়েও যায়। তাদের পরিচয় হয় নতুন এক জগতের সঙ্গে। যার ফলে একদিকে তাঁরাও হিমশিম খেতে থাকে। এই সময়টি বাবা-মা ও সন্তান, উভয়ের ক্ষেত্রেই বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই সন্তানদের নিয়ে এই সময়ে একটু সতর্ক থাকাই ভালো। কারণ যে কোনো ভুল পদক্ষেপ আপনার সন্তানের ওপর ফেলতে পারে বাজে প্রভাব। এমনকি সন্তানের সঙ্গে একধরনের দূরত্বও বেড়ে উঠতে পারে। একই কথা সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুণদের বেলায়ও প্রযোজ্য। তাদের পালস বুঝে এই সময়ে আপনি আপনার পরিবারের জেন-জি সদস্যদের জীবনে হয়ে উঠতে পারেন খুব কাছের মানুষ।

১. তাদের কাজে আগ্রহ প্রকাশ করুন
এই বয়সে সকলের মধ্যে নতুন কিছু করার আগ্রহ দেখা যেতে পারে। অনেক বাবা-মা এগুলোতে খুব বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন না। আবার পরিবারের বড়রা মনে করেন, এসব কাজ করে তাঁরা শুধু নিজেদের সময় নষ্ট করছে। এতে তাদের ভেতরে বিভিন্ন বিষয় গোপন করার একটি প্রবণতা তৈরী হতে পারে। এটি বাবা মায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে খারাপ করে৷ তাই আপনার সন্তান বা ছোট ভাই-বোন নতুন কোনো কিছু করলে এতে আগ্রহ প্রকাশ করুন।
২. খোলামেলা ভাবে কথা বলুন, যাকে বলে লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার
আপনার কিশোর বা তরুণ সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা ভাবে কথা বলুন। তারা যখন আপনাকে কোনো কিছু বলবে, তখন তাদের কোনো ভাবেই জাজ করবেন না। নিজেকে আপনার সন্তান বা ছোট ভাই-বোনের জন্য কথা বলার একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে তৈরী করুন। তারা যেন জীবনে ভালো কিছু হোক কিংবা খারাপ কিছুই হোক - খুব সহজেই আপনার কাছে এসে জানাতে পারে। এটি আপনার সঙ্গে তাদের বন্ধন আরও বেশি মজবুত করে তুলবে।

৩. তাদেরকে কোয়ালিটি টাইম দিন
আপনার ব্যস্ত জীবন থেকে কিছু সময় তাদের জন্য বের করুন৷ টিনএজে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ বয়সেও এই গুরুত্ব বাড়ে বৈ কমে না। এই সময়ে তাদেরকে কোয়ালিটি টাইম না দিলে এক ধরনের দূরত্ব দেখা দিতে পারে। মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে মুভি দেখতে যেতে পারেন। দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। যদি তা সম্ভব না হয়ে ওঠে, তবে বাসায় বসেই অনেক কিছু করে সময় কাটাতে পারেন। যেমন তার সঙ্গে রান্না করা, আপনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, গল্প করা ইত্যাদি।
৪. তাদেরকে প্রাইভেসি দিন
এই সময়টিতে কমবেশি অনেক বাবা মা-ই এই ভুলটি করে থাকেন। তারা না বুঝেই বা বুঝে সন্তানের গোপনীয়তাকে বিঘ্নিত করেন। এভাবে প্রাইভেসি ভাঙা ঠিক নয়। তাদেরকে একটু স্পেস দিন। সবসময় তাদের সব বিষয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো। এতে তারা আপনার ওপর বিরক্ত হয়ে যেতে পারে। এটি আপনাদের সম্পর্কে এক ধরনের তিক্ততা এনে দেয়। তাদের স্বাধীন ভাবে বাঁচতে সাহায্য করুন। এতেই সম্পর্কে বিশ্বস্ততা তৈরী হয়। সম্পর্ক ভালো থাকে৷ তবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সতর্ক থাকতে হবে, যেন তারা বিপথে না যায়, বিপদে না পড়ে।

৫.তাদের মতামতকে শ্রদ্ধা করুন
আপনার সন্তান বা অনুজটি ছোট হলেও তারা যখন কোনো মতামত দেয়, সেটিকে শ্রদ্ধা করুন৷ তাদের মতামতকে সবসময় তুচ্ছ করে দেবেন না। এতে তাদের মধ্যে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। আপনি যখন বাড়ির জেন জি সদস্যটির মতামতকে সমর্থন দিবেন কিংবা মন দিয়ে শুনবেন, তখন সে আপনার মতামতকেও গ্রাহ্য করবে। এতে পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ বজায় থাকবে।
জেনারেশন গ্যাপ সবসময় ছিল, থাকবে৷ কিন্তু এজন্য পরিবারের দুই প্রজন্মের সদস্যের মাঝে দূরত্ব বাড়তে দেওয়া যাবে না। কারণ দিনশেষে সুখে ও অসুখে পরিবারই সব। আর এজন্য এখন থেকে বড়দেরই এগিয়ে আসতে হবে, বুঝতে হবে এই জেনজি প্রজন্মকে।
সূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস ডট কম