শিশু মুনতাহার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে গোটা দেশের মানুষকে। বাবামায়েরা নিজেদের সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। এরই মাঝে উঠে এসেছে নতুন এক গা শিউড়ানো এক তথ্য। জানা গিয়েছে, প্রতিহিংসার জের ধরে হত্যা করা হয়েছে ছোট্ট মুনতাহাকে। প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ মানবজাতির ইতিহাসে নতুন নয়। তবে স্বভাবজাতভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষের একটি বড় লক্ষণ হচ্ছে তাদের সীমার বাইরে অযৌক্তিক আবেগ ও অতিরিক্ত মনোযোগ পাওয়ার ইচ্ছা। আরো কিছু লক্ষণ দেখলে বুঝবেন, আপনার আশেপাশের কোনো মানুষ সত্যিকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ । তাদের থেকে বেঁচে চলতে হবে, সাবধানে থাকতে হবে।
ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে তাদের ধারণা উগ্র পর্যায়ের
ফ্রান্সিস বেকন অনেক আগে বলে গিয়েছিলেন, প্রতিশোধকে আমরা এক ধরণের উগ্র ন্যায়বিচার পাওয়ার মাধ্যম বলতে পারি। যে ব্যক্তি প্রতিহিংসাপরায়ণ, সে বরাবর এভাবেই ভাবে। সে ভাবে, তার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। তখন সে ন্যায়বিচার আদায় করার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়। এজন্য কাউকে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না সে।
হতাশা নিতে পারে না তারা
সবসময় সবকিছু আমাদের ইচ্ছানুসারে হবে না। এটিই স্বাভাবিক। এতে আমরা হতাশ হই। আবার মানিয়ে নিতেও শিখি। তবে প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তির হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটে রাগ দিয়ে। হতাশ হলেই সে রাগে ফেটে পড়ে বা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। তার কথা, কাজ বা চাহনিতে তা ধরা পড়ে।
তাদের মধ্যে সহমর্মিতার অনুভূতি কম
মানুষ মানুষের জন্য তখনই হতে পারে যখন অন্য একজন মানুষের প্রতি তার সহমর্মিতার অনুভূতি থাকে। প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ সবসময় অন্যকে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে থাকে। তাই তার মধ্যে সহমর্মিতার অনুভূতি জন্মায় না বললেই চলে।
তারা জমিয়ে রাখা ক্ষোভের প্রবল প্রকাশ ঘটায়
আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি বিষয় খুব কমন। কোনো বিষয় নিয়ে রাগ বা দুঃখ হলে আমরা তা জমিয়ে রাখি। দীর্ঘদিন ধরে এমন ভাবে রাগ জমতে জমতে তা একদিন বিশালাকৃতি ধারণ করে। এরপর একসঙ্গে সব রাগের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে তার ফলাফল ভালো হয় না। প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষের জন্ম হয় এভাবে। তারা তাদের জড়ো করা ক্ষোভের প্রবল প্রকাশ ঘটায় এবং পন্থা হিসাবে প্রতিশোধকে বেছে নেয়।
সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাওয়ার প্রবণতা
প্রতিহিংসাপরায়ণ কিন্তু মানুষ একদিনে হয় না। আরও অন্য অনেক নেতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ তৈরি হয়। প্রথমত তার মধ্যে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা লক্ষ্যনীয়। এরপরের পদক্ষেপ হিসাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি চায় নিজের মতামত অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে। যখনই তা করতে না পারে, তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই ক্ষোভ পরবর্তীতে রূপ নেয় প্রতিহিংসায়।
ক্ষমার গুণ তাদের মধ্যে অনুপস্থিত
মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাই অনেকের অনেক কিছু ক্ষমা করে দিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়। তবে প্রতিশোধপরায়ণ মানুষের জন্য হিসাব ভিন্ন। তারা সহজে সবকিছু ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। অতীতের ভুলগুলো আঁকড়ে ধরে থাকে। সহজে তারা কিছু ভুলতে পারে না। এতে করে এমন মানুষেরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা
আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। মেজাজ খারাপ হতেই পারে। তবে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা চাই। এজন্য প্রয়োজন রাগ কমে এলে বিষয়টি নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবা। অনেক সময় সাধারণ একটি বিষয় পরিবেশ ও উপস্থাপনাভেদে অন্যরকম রূপ ধারণ করে। রাগের সময় যুক্তি কাজ করে না। ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে অনেক কিছুর সমাধান পাওয়া সম্ভব। প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ এ কাজটি করতে পারে না।
এ কথা বলা যায় না যে এই বৈশিষ্ট্যগুলোর দুয়েকটি থাকলেই কেউ প্রতিশোধপরায়ন হবে। কিন্তু সাবধানে থাকতে ক্ষতি কী!
সূত্র: মেন্টেসাবিয়ের্টাসাইকোলজিয়া ডট কম
ছবি: পেকজেলস ডট কম