বিয়ে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর, তবে একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং সম্পর্ক। অনেকেই ভাবেন, শুধু ভালোবাসা থাকলেই একটি সম্পর্ক টিকে যাবে। যদিও ভালোবাসা এই বন্ধনের মূল ভিত, কিন্তু একে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন পড়ে প্রতিনিয়ত যত্ন, সচেতনতা এবং পারস্পরিক মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা। দাম্পত্য জীবন সুখকর রাখতে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর গুরুত্ব আমরা শুরুতে খুব একটা বুঝে উঠি না, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেগুলো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বিয়ে নিয়ে কিছু মৌলিক কিন্তু কঠিন বাস্তবতা আছে। যত দ্রুত এগুলো আমলে আনা যায়, সম্পর্ক ততটাই গভীর, মজবুত ও টেকসই হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এমনই ৫টি কঠিন সত্য সম্পর্কে যেগুলো যথাসময়ে উপলব্ধি করা গেলে দাম্পত্য জীবন হতে পারে সুখের।
১. শুধু ভালোবাসা দিয়ে বিয়ে টেকে না
ভালোবাসা যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু এটুকু নিয়ে একসঙ্গে পথচলা সম্ভব নয়। প্রতিদিনকার ছোট ছোট সিদ্ধান্ত, একে অপরের জন্য সময় বের করা, কোনো কিছু নিয়ে ঝগড়া হলে তা মিটিয়ে নেওয়ার দক্ষতা এসবই একটি সম্পর্ক স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি। দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর ও সাবলীল রাখতে প্রয়োজন পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা ও মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা।
২. কখনোই ঝগড়া হবে না এই মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসা
অনেকেই ভাবেন, আমরা তো তেমন ঝগড়া করি না, আমাদের সম্পর্কই পারফেক্ট। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ঝগড়া না হওয়া মানেই সব ঠিক, ব্যাপারটি মোটেও এমন নয়। বরং অনেক সময় ঝগড়া হওয়ার ভয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়াও একটি সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে ওঠে তখনই, যখন ঝগড়াগুলো হয় গঠনমূলক। একে অপরকে দোষারোপ না করে নিজের অনুভূতি জানাতে পারা এবং একে অপরের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার মানসিকতাই একটি সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনে।
৩. সঙ্গী আপনার সব চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না
একজন মানুষ কখনও আরেকজনের প্রতিটি মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না এবং এটি কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়াও এক ধরনের অন্যায়। নিজ নিজ জীবনের পছন্দ-অপছন্দ, শখ ও বন্ধুবান্ধব থাকা জরুরি। তবেই দাম্পত্য জীবনে একে অপরের জন্য একটি সুন্দর জায়গা তৈরি হয়। জীবনের সব কিছু একজনের ওপর চাপিয়ে দিলেই সম্পর্ক এক সময় বোঝা মনে হতে শুরু করে।
৪. নিয়মিত যত্ন ছাড়া সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়
একবার দাম্পত্য সম্পর্কে চলে এলে আমরা ভাবি বিয়ে তো হয়েই গেল এখন আর কিছু করার নেই। খেয়াল রাখতে হবে যে বিয়ে কোনো গন্তব্য নয়, বরং এটি একটি যাত্রার শুরু। তাই একে প্রতিনিয়ত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। যত্ন নিতে হয়।
মানসিক দূরত্ব অনেক সময় শারীরিক দূরত্বের থেকেও বেশি বিপজ্জনক। একটি সম্পর্ককে জীবন্ত রাখতে সপ্তাহে অন্তত একদিন কোয়ালিটি টাইম কাটানো, একে অপরের অনুভূতি ও চাহিদার খোঁজ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৫. পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো
আমরা মনে করি, একটি মানুষ যেমন ছিল, আজীবন ঠিক তেমনই থাকবে। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে তেমন নয়। সময়ের সঙ্গে মানুষ বদলায়, মূল্যবোধ বদলায়, স্বপ্ন বদলায়, চিন্তাভাবনা বদলায়। আপনি যাঁকে ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন, তিনি ৪৫ বছর বয়সে একেবারে আলাদা মানুষ হয়ে উঠতে পারেন। এটি অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। যদি দুইজন মানুষ পরস্পরের পরিবর্তন গ্রহণ করতে পারেন, একে অপরের নতুন দিকগুলো আবিষ্কার করার মানসিকতা রাখেন তবে সম্পর্ক কখনো পুরনো হয় না। বন্ধন থাকে অটুট।
দাম্পত্য এক জটিল সমীকরণ। তবে মাঝে মাঝে এর সাফল্য লুকিয়ে থাকে ছোট ছোট সাধারণ বিষয়ের মাঝে৷ আর এই বিষয়গুলো বুঝতে অনেক সময় দেরি করে ফেলি আমরা।
সূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস