গল্প কিংবা সিনেমায় কেউ মিথ্যা বললে দেখানো হয় সে চোখের দিকে তাকাতে পারছে না, কণ্ঠ কেঁপে উঠছে অথবা হাত কাঁপছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে কি এত সহজেই মিথ্যা ধরে ফেলা সম্ভব? মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মিথ্যা শনাক্তের বিষয়টি এতটা সরল নয়। তবে কিছু আচরণ বিশ্লেষণ করলে খানিকটা তো আঁচ করাই যায়৷ গবেষণায় দেখা যায়, সত্য বলার সময় মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সাধারণত স্বাভাবিক থাকে, যা মিথ্যা বলার সময় দেখা যায় না। মিথ্যা কথা বলার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও আচরণে বেশ কিছু ছোট ছোট অসামঞ্জস্য দেখা যায়। এইগুলো খুব সূক্ষ্ম, কিন্তু বেশ কার্যকর। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেউ মিথ্যা বললে তা কীভাবে বুঝবেন।
১. অতিরিক্ত হাত নেড়ে কথা বলা
মিথ্যা বলার সময় অনেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হাত নেড়ে কথা বলে। সাধারণত, মানুষ যখন আত্মবিশ্বাসী থাকে, তখন তাঁদের হাতের অঙ্গভঙ্গি বেশ স্বাভাবিক ও শান্ত থাকে। কিন্তু মিথ্যা বলার সময় কিছুটা অস্বস্তি তো কাজ করেই। তাই কেউ মিথ্যা বললে নিজের অজান্তেই এই কাজটি করে থাকে। আবার অনেক সময় কথার গুরুত্ব বাড়ানোর জন্যও অনেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবেও এই কাজটি করে থাকে।
২. অনেক বেশি চোখে চোখ রেখে কথা বলা
বলা হয়ে থাকে মানুষের মুখের কথার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলো চোখের ভাষা। আর মিথ্যা বলার সময় মানুষ সচরাচর চোখের দিকে তাকাতে পারে না, এটিই সর্বত্র প্রচলিত একটি ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা একটু আলাদা। গবেষণায় দেখা গেছে, মিথ্যাবাদীরা অনেক সময় অতিরিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। আর এটিতাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবেই করে থাকে, যা মূলত কথাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার একটি কৌশল।
৩. কথা বলার সময় অনেক বেশি মাথা নাড়ানো
মিথ্যা বলার সময় অনেকেই এই কাজটি করে থাকে। আর তা হলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাথা নাড়িয়ে কথা বলা। এই আচরণ অনেক সময় অস্বস্তি কিংবা চাপের অনুভূতির প্রকাশ। আবার মিথ্যা বলার সময় হয়তো নিজেই নিজেকে সমর্থন করতে কিংবা অন্যরা যেন তাঁদের কথায় আস্থা রাখে এইজন্যও এই কাজটি করে থাকতে পারে অনেকে।
৪. মুখের অভিব্যক্তি বদলে যাওয়া
মানুষ মিথ্যা বললে বেশিরভাগ সময় মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়। যেমন কথা বলতে বলতে ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। আবার অনেকে মিথ্যা বলার সময় ঠোঁট টিপে রাখে। অনেকের চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়। এমন অভিব্যক্তি বেশিরভাগ সময় মনস্তাত্ত্বিক চাপের কারণেই ঘটে থাকে। এসব আচরণ তাদের অস্থিরতা আর অস্বস্তিকেই প্রকাশ করে, যা সাধারণত সত্য বলার সময় দেখা যায় না।
৫.কথা বলার সময় উম, আমজাতীয় শব্দের আধিক্য
মিথ্যা বলার এক সুক্ষ্ম কৌশল হতে পারে কথার মাঝে অতিরিক্ত উম, আমজাতীয় শব্দ ব্যবহার করা। এই শব্দগুলো সাধারণত মানুষ কথার মাঝে একটু থামতে বা সময় নিতে ব্যবহার করে। বিশেষত যখন কেউ কিছু বলার আগে একটু সময় চায়। আর যারা মিথ্যা বলে তারা এই সময়টুকু ব্যবহার করে নিজের কথা সাজানোর চেষ্টা করে।
৬. বাক্যে ভাব বাচ্য ব্যবহার
মিথ্যাবাদীরা অনেক সময় নিজের কথা বলতে গিয়ে আমি বা আমরা না বলে কেউ বা কারাজাতীয় শব্দ ব্যবহার করে। এটি মূলত নিজের পরিচয় বা সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করার একটি কৌশল বলা যেতে পারে, যাতে পরবর্তীতে ঘটনার দায় তাদের ওপর না আসে।
সূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড
ছবি: পেকজেলস ডট কম