একতরফা প্রেম নিয়ে তো অনেক কথা হয়। তবে একতরফা বন্ধুত্ব নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হতে দেখা যায় না বললেই চলে। তাহলে বন্ধুত্ব কি একতরফা হতে পারে না? জেনে অবাক হবেন, প্রেমের চেয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের বন্ধুত্বগুলোই একতরফা হয়ে থাকে। এর চেয়ে বড় ব্যাপার, প্রেম একতরফা কি না, তা যত সহজে বোঝা সম্ভব; বন্ধুত্ব একতরফা কি না, এটি তত সহজে বোঝা সম্ভব নয়। আর এ ধরনের ভারসাম্যহীন বন্ধুত্বগুলো একসময়ে গিয়ে জীবনে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই সম্পর্কগুলো থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে আসা যায়, ততই ভালো। জেনে নিন, আপনিও কোনো একতরফা বন্ধুত্বের বোঝা বইছেন কি না।
আমাদের জীবনের ছোট থেকে বড় সব ঘটনাই কিন্তু কাউকে না বললেও বন্ধুদের বলি। আবার এতে তাঁদের মধ্যে আগ্রহ কিংবা কৌতূহল, যা–ই বলি না কেন, সেটি ভরপুর থাকে। পরবর্তী সময়ে আবার দেখা বা কথা হলে তাঁরা সেটির খোঁজ রাখেন। প্রকৃত বন্ধু আপনার সুখে যেমন আনন্দিত হন, তেমনি আপনার দুঃখেও সমব্যথী হন। কিন্তু যদি দেখেন, আপনার জীবনের সবকিছুই তাঁর কাছে অপ্রাসঙ্গিক কিংবা অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, তবে বুঝে নিন, বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক একতরফা।
বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো সব সময় স্বতঃস্ফূর্ত হয়। কিন্তু যদি দেখেন, আপনার বন্ধু কেবল নিজের প্রয়োজনেই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে এটি কোনো ভারসাম্যের ইঙ্গিত দেয় না। কেবল কোনো সুবিধা নিতে চান বলেই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায় না, ব্যাপারটি যদি এমন হয়, তবে এমন বন্ধু থেকে দূরে থাকাই ভালো।
বন্ধুত্ব কিন্তু কোনো দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়। একজন আরেকজনের পাশে থাকার সম্পর্ক। তবে একতরফা বন্ধুত্বে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক পক্ষ সব সময় সুবিধা নেয় এবং অন্য পক্ষ কেবল দিয়ে যায়। আপনি হয়তো সব সময় তাঁর পাশে দাঁড়ান, তাঁর সমস্যার সমাধান খুঁজে দেন, অথচ আপনার দরকারে তাঁকে পাশে পান না। এটি কেবল বন্ধুত্বের ভারসাম্যহীনতাই নয়, এটি একসময় মানসিক চাপেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কথা বলার আগ্রহ উভয় পক্ষ থেকেই থাকা উচিত। কিন্তু যদি দেখেন, আপনার বন্ধু সব সময় কথোপকথন এড়িয়ে যান, ব্যস্ততার অজুহাত দেখান অথবা শুধু নিজের ইচ্ছা হলে কথা বলেন, তবে এটি একতরফা বন্ধুত্বের লক্ষণ। এটি এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করে, যেখানে আপনি সব সময়ই চেষ্টা করছেন সম্পর্কটি বজায় রাখতে, কিন্তু অপর পক্ষের কোনো আগ্রহই নেই।
একতরফা বন্ধুত্বে আপনার প্রতি গুরুত্বের অভাব প্রকাশ পাবে। আপনার বন্ধু হয়তো অন্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশি আগ্রহী, তাঁদের প্রতি বেশি যত্নশীল। হয়তো আপনি তাঁর জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পাশে থেকেছেন, কিন্তু তিনি কি কখনো আপনার পাশে থেকেছেন? নাকি সব সময় আপনার নিজেকে কিংবা অন্যদের বেছে নিয়েছেন। যদি সব সময় এমনই হয়, তবে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব শুধু আপনার দিক থেকেই, তাঁর দিক থেকে কিছুই নেই।
সম্মানজনক বন্ধুত্বে দুই পক্ষেরই সময়ের মূল্য থাকে। যদি দেখেন, আপনার বন্ধু সব সময় তাঁর নিজের সুবিধামতো পরিকল্পনা করেন এবং আপনার সময়ের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেন না, তবে এটি একতরফা বন্ধুত্ব। এমন বন্ধুরা হয়তো আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় আপনাকে বিরক্ত করবেন, কিন্তু যখন আপনি তাঁর কাছে সময় চাইবেন, তখন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাবেন।
বন্ধুত্ব একটি মূল্যবান সম্পর্ক, যা উভয়ের ভালোবাসা, যত্ন ও সম্মানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। তবে যদি ওপরের লক্ষণগুলো আপনার বন্ধুত্বে দেখতে পান, তবে নিজেকে প্রশ্ন করুন—এই সম্পর্ক কি আপনার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে? একতরফা বন্ধুত্ব শুধু মানসিক কষ্টই বাড়ায়। তাই এমন সম্পর্ক থেকে সরে এসে নিজেকে গুরুত্ব দিন এবং প্রকৃত বন্ধু খুঁজে নিন, যাঁরা আপনার সময়, অনুভূতি ও ভালোবাসাকে সত্যিকার অর্থে মূল্য দেবে।
ছবি: চ্যাটজিপিটি