বিশ্বাসের ওপরেই যেন টিকে থাকে সব। বিশ্বাস ছাড়া যেকোনো সম্পর্কই টিকিয়ে রাখা বেশ মুশকিল। প্রেম, পরিবার, বন্ধুত্ব কিংবা কর্মক্ষেত্র—সবখানেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সবাইকেই কী বিশ্বাস করা ঠিক? মোটেও নয়। কাউকে বিশ্বাস করার আগে অবশ্যই ভেবে নেওয়া উচিত মানুষটি প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কী না। তবে কে বিশ্বাসযোগ্য আর কে নয়, তা বোঝা মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়। অনেক সময় দেখা যায় কাউকে খুবই আন্তরিক লাগছে, কিন্তু সময় যত যেতে থাকে, তত-ই বের হয়ে আসতে থাকে অন্য এক রূপ। বেশিরভাগ সময় আমরা এগুলোকে এড়িয়ে যাই, খুব একটা প্রাধান্য দেই না। কিন্তু মানুষটির সঙ্গে যদি প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা অন্য যেকোনো সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ হতে চান, তবে এই ধরনের রেড ফ্ল্যাগগুলো আমলে নেওয়া বেশ জরুরি। অন্যথায়, পরবর্তীতে যখন আপনি তাঁর সঙ্গে আবেগে জড়িয়ে যাবেন, এটি আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে ভোগাতে থাকবে। তাই এই রেডফ্ল্যাগগুলো দেখা মাত্রই সচেতন হওয়া জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এমন কয়েকটি রেড ফ্ল্যাগ সম্পর্কে যেগুলো বলে দেয় মানুষটি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
১. কথা এবং কাজে অমিল
কাউকে বিশ্বাস করার আগে যে বিষয়টির দিকে প্রথম খেয়াল রাখতে হবে তা হলো কথা ও কাজে মিল থাকছে কিনা। কেউ যদি আপনাকে বলে এক, আর করে আরেক, তবে সতর্ক হয়ে যাওয়াই ভালো। অথবা কেউ যদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা কখনোই রাখতে না পারেন —তখনই প্রশ্ন ওঠে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। অর্থাৎ, কেউ যদি বারবার নিজের বক্তব্য পাল্টান কিংবা কাজের সঙ্গে কথার সামঞ্জস্য না রাখেন, তাহলে তাঁকে বিশ্বাস না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশ্বাস গড়ে ওঠে যখন কেউ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করে কোনো কথা দিয়ে কথা রাখেন, এমন কোনো কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন, যা তাঁর কথার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
২. নিজের ভুল স্বীকার না করা
মানুষ মাত্রই ভুল। ভুল হবেই, তবে ভুল স্বীকার করার মানসিকতা থাকা জরুরি। যে ব্যক্তি নিজের ভুলের দায় নিতে চান না, সবসময় অন্যকে দোষারোপ করেন বা পরিস্থিতির অজুহাত দেন, তিনি বিশ্বাসযোগ্য নন। একজন সৎ মানুষ নিজের ভুল স্বীকার করে নিতে দ্বিধাবোধ করেন না এবং ভুল করলে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ভুলের দায় তাঁরাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন, যাঁরা নিজেকে শোধরাতে চান না।
৩. অন্যের নামে গুজব রটানোর প্রবণতা
এই ধরনের মানুষকে একেবারেই বিশ্বাস করা উচিত নয়। যিনি অন্যের গোপন কথা সহজেই বলে দেন বা গুজব ছড়াতে পছন্দ করেন, তিনি আপনার কথাও গোপন রাখবেন না, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ধরনের আচরণ শুধু যে অবিশ্বাসযোগ্য তা নয়, বরং ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই এই ধরনের মানুষের থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই ভালো।
৪. সবসময় নিজের প্রভাব খাটানো
এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা অন্যকে নিজেদের ইচ্ছামতো চালাতে চান। এমনকি নিজের প্রভাব খাটাতে তাঁরা অনেক সময় গ্যাসলাইটিং বা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার মতো কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য হলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষা। এ ধরনের আচরণ দেখলে সতর্ক হওয়া জরুরি। তাঁরা মোটেই ভরসার যোগ্য নন।
৫. সহমর্মিতার অভাব
একটি সম্পর্কে থাকলে একে ওপরের প্রতি সহমর্মী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাঁরা অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেন না বা ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করেন, তাঁরা কখনোই কোনো সম্পর্ককে মূল্য দেন না। তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা মানেই নিজের জীবনে ভোগান্তি ডেকে নিয়ে আসা ছাড়া আর কিছুই নয়। সহমর্মিতা না থাকলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়াও গড়ে ওঠে না, ফলে বিশ্বাস জন্মায় না।
৬. সততা নেই
যাঁদের মধ্যে সততার অভাব রয়েছে তাঁদের বিশ্বাস করা মোটেও উচিত নয়। যিনি সৎ নন, তিনি কোনো ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারেন না। কেউ যদি আগেও বহুবার অন্যকে ঠকিয়ে থাকেন, মিথ্যা বলে থাকেন বা অনৈতিক আচরণে যুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁর প্রতি অতিরিক্ত আস্থা রাখা উচিত নয়। যদিও মানুষ বদলাতে পারে, তবে অতীত আচরণ ভবিষ্যতের একটি ইঙ্গিত দেয়।তবে খেয়াল রাখতে হবে এই ছয়টি লক্ষণ কাউকে পুরোপুরি বিচার করার একমাত্র মাপকাঠি নয়, বরঞ্চ এগুলো সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশ্বাস গড়ে ওঠে সময়, সততা এবং ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে। তাই কাউকে বিশ্বাস করার আগে তাঁর ব্যবহার ও মানসিকতা মূল্যায়ন করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস