
জনসংখ্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় রাতে বিদ্যুৎ–ইন্টারনেট থাকবে বন্ধ। গোমড়ামুখো বলে পরিচিত এই দেশের সরকারের বিতর্কিত প্রস্তাব ঘিরে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে।
এমনিতেই এই দেশের মানুষ গোমড়ামুখো বলে পরিচিত। সহজে নাকি হাসেনই না রাশিয়ানরা। এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় রোমান্টিক নীতি নিয়ে হচ্ছে তুমুল আলোচনা।
উন্নত বিশ্বজুড়ে যখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমেই নিম্নমুখী, তখন রাশিয়ায় উঠে এসেছে এক ব্যতিক্রমী ও বিতর্কিত ধারণা। সাম্প্রতিক সময়ে জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে রাতের নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হতে পারে এই দেশে। ধারণাটির পেছনে যুক্তি, গভীর রাতে স্ক্রিনে ডুবে থাকার প্রবণতা কমলে মানুষ বেশি বিশ্রাম নেবে, পরিবারকে সময় দেবে, যা পরোক্ষভাবে পারিবারিক সম্পর্ক ও সন্তান জন্মদানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রস্তাবটির সমর্থকরা বলছেন, আধুনিক জীবনধারায় স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস আমূল বদলে দিয়েছে। রাত জেগে স্ক্রিনে সময় কাটানো শুধু ঘুমের ক্ষতিই করছে না, বরং পারিবারিক যোগাযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে জীবনমানের অবনতি এবং জন্মহার হ্রাসের সঙ্গে জড়িত। তাই জনসংখ্যাগত সংকট মোকাবিলায় জীবনযাত্রার ছন্দে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ হিসেবেই এমন ভাবনার জন্ম। সমর্থকদের চোখে বিষয়টা একেবারে বৈজ্ঞানিক। তাঁদের মতে, আধুনিক মানুষ রাত জেগে রিলস দেখে, সিরিজ বিঞ্জ করে, মিম দেখে হাসে কিন্তু বংশবিস্তার আগ্রহ কম। তাই স্ক্রিনটাই আসল শত্রু। বিদ্যুৎ গেলে মানুষ মোমবাতি জ্বালাবে, নীরবতায় কথা বলবে, আর সেই আবহে নাকি প্রেম আপনাতেই হাজির হবে। যেন সুইচ টিপলেই রোমান্স অন।
তবে সমালোচকরা এই প্রস্তাবকে বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন বলে মনে করছেন। তাদের যুক্তি, জন্মহার কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট নয় বরং আবাসন সংকট, উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়, চাকরির অনিশ্চয়তা, সন্তানের শিক্ষা ও লালন-পালনের খরচের মতো বাস্তব অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই পরিবার পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা রাখে। রাতের ইউটিলিটি সীমিত করলে কর্মঘণ্টা, অনলাইন কাজ, শিক্ষা কার্যক্রম এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও ব্যাহত হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

অনেকেই বলছেন, ভাবুন তো রাতের শিফটে কাজ করা মানুষ, অনলাইন ক্লাস করা ছাত্র, ফ্রিল্যান্সার, চিকিৎসক তাঁদের জন্য এই প্রেমময় অন্ধকার কতটা রোমান্টিক হবে? অনেকের কাছে রাত মানেই কাজ, মানেই নেট। সেখানে হঠাৎ রাষ্ট্র বলছে, “এখন প্রেম করুন” ব্যাপারটা যেন সরকারি নির্দেশে আবেগের উৎপাদন। তবু আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে জন্মহার কমছে, আর সরকারগুলো নানান পদ্ধতি অবলম্বন করছেন কোথাও আর্থিক প্রণোদনা, কোথাও মাতৃত্ব–পিতৃত্ব ছুটি, কোথাও বিনামূল্যে শিশুসেবার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে আর কোথাও সুইচ অফ রোমান্স।
এই বিতর্ক শুধু রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা দেশেই জন্মহার কমে যাওয়া এখন একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। কোথাও আর্থিক প্রণোদনা, কোথাও মাতৃত্ব পিতৃত্বকালীন ছুটি, আবার কোথাও বিনামূল্যে শিশুসেবার মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার এই প্রস্তাব তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে- জনসংখ্যা বাড়াতে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত জীবনের ওপর কতটা হস্তক্ষেপ করতে পারে?

এই মুহূর্তে রাতের বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সীমিত করার ভাবনাটি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। বরং এটি একটি বৃহত্তর নীতিগত বিতর্কের অংশ। তবে একথা নিশ্চিত, জনসংখ্যা সংকট মোকাবিলায় কেবল প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা এই সব কিছুর সমন্বিত সমাধানই দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হতে পারে।
সূত্র: লাইভ মিন্ট
ছবি: ইন্সটাগ্রাম