সফলতার চাবিকাঠি আসলেই লুকিয়ে আছে নিজের প্রতি ভালোবাসায়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

কেমন আছেন আপনারা সবাই? ভালো আছেন আশা করছি। আপনাদের অনুরোধে এবার লিখব সম্পর্ক নিয়ে। সম্পর্ক অনেক রকম হয়। মা–বাবার সঙ্গে সম্পর্ক, ভাই-বোনের সঙ্গে সম্পর্ক, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। আবার আছে শিক্ষকের সঙ্গে, পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গে, পরিবেশের সঙ্গে, টাকাপয়সার সঙ্গে, আপনার ক্যারিয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক।

সম্পর্কে নানা ধরণ আর মাত্রা আছে; নিজেকে ভালবাসাও একটা সম্পর্ক
সম্পর্কে নানা ধরণ আর মাত্রা আছে; নিজেকে ভালবাসাও একটা সম্পর্ক

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক। আপনি জীবনে প্রতিটি সম্পর্কের সঙ্গে কতটা সফল বা কতটা ব্যর্থ হবেন, জীবনে একজন সফল মানুষ হবেন, নাকি ব্যর্থ মানুষ হবেন, তা সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে আপনি নিজেকে কীভাবে দেখেন, নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন, নিজেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন—তার ওপর। যে মানুষ নিজেকে নিজে মূল্যায়ন করতে পারে না, নিজেকে নিজেই ছোট ভাবে, নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারে না, সারাক্ষণ নিজের দোষ ধরে বেড়ায়, সে মানুষ তার নিজেকে মূল্যায়ন করে না।

বিজ্ঞাপন

বলতে গেলে যে নিজেকে নিয়ে নিজেই খুশি নয়, সে মানুষ কখনো সফল হতে পারে না। মানুষ সব সময় আশা করে, অন্য কেউ তাকে ভালো বলবে, অন্য কেউ তাকে প্রশংসা করবে। কিন্তু একবার কি ভাবেন যে আপনি নিজে কবে আপনাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ধন্যবাদ দিয়েছেন? কবে নিজের ভালো লাগে এমন একটি কাজ করেছেন? আপনি চিন্তা করলে হয়তো দেখবেন, আপনি চা পান থেকে শুরু করে, ঘরের এবং বাইরের সবকিছু করেন আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে।

কিছুটা সময় নিজেকে দিতে হয়; নিজেকে ভালবাসতে হয়
কিছুটা সময় নিজেকে দিতে হয়; নিজেকে ভালবাসতে হয়

আড্ডা দিতে গেলে চা বা কফি পান করেন। কিন্তু ঘরে যদি একা একা চা বা কফি পান করতে ইচ্ছে করে, হয়তো চান কেউ বানিয়ে দিক বা মনে হয় অমুক বন্ধুকে ডেকে তারপর বানাই। আবার কাউকে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলতে চা বা কফি পান করেন; কিন্তু একা ঘরে, একা নিজের সঙ্গে নয়। হয়তো কেউ কেউ করে থাকেন, যাঁদের কোনো চয়েস থাকে না, হয়তো একা থাকেন সে জন্য একা একা মন খারাপ করে চা বা কফি বানিয়ে নিজের একাকীত্বকে, নিজের ভাগ্যকে দুষতে দুষতে চা বা কফি পান করেন; নিজের সঙ্গ উপভোগ করে নয়।

বিজ্ঞাপন

সম্পর্ক হল মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের সংযোগ এবং আন্তসম্পর্ক, যা ব্যক্তির ভেতর শুরু হয় ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে। পরে তা ব্যক্তিগত থেকে পরিবর্তিত হয়ে পারিবারিক বা সামাজিক হতে পারে। সম্পর্কের বিভিন্ন স্তরে বন্ধুত্ব, প্রেম, পরিবার, পেশাগত জীবন এবং সামাজিক ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকে। সামাজিক শিক্ষা থেকে বিশ্বাস জন্মায় যে সম্পর্ক গঠন শুধু একজন ব্যক্তি বা একক মানুষের মধ্যে নয়, বরং দুটি বা তার বেশি মানুষের মধ্যে একে অপরের প্রতি অনুভূতি, বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তিতে তৈরি হয়।

সম্পর্কের নানা মাত্রা আছে
সম্পর্কের নানা মাত্রা আছে

এসব সম্পর্ক আমাদের শিখতে এবং বিকাশিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করে। মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠার মাধ্যমে তারা নিজেদের বিষয়ে এবং বাইরের বিশ্বে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে পারে। সম্পর্ক মানুষের মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। পরিবার, সমাজ, স্কুল, কলেজ কেউই ব্যক্তির নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বিষয়ে শিক্ষা দেয় না। যে মানুষ নিজেকে ভালোবাসে, তাকে স্বার্থপর বলে মনে করা হয়। মানুষ ভুলে যায় যে আত্মকেন্দ্রিকতা আর আত্মপ্রেমের মধ্যে পার্থক্য আছে।  

বর্তমান যুগে, যখন জীবনে নানান চাপ ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তখন আত্মপ্রেম বা সেলফ লাভের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। আমরা চাইলেও আমার শিশুটির জন্য আরেকটি সমমনা শিশু খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে শিশুরা বড় হচ্ছে একাকীত্ব নিয়ে। এই একাকীত্ব ডিপ্রেশনে পরিণত হয়, যদি না শিশুটিকে তার নিজেকে নিজের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে শেখানো হয়।

একাকীত্ব কাম্য নয়; এটা ডিপ্রেশনে পরিণত করে
একাকীত্ব কাম্য নয়; এটা ডিপ্রেশনে পরিণত করে

আমাদের মনের দিক ও অনুভূতির গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে সাবকনশাস মাইন্ডের প্রভাব আমাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সাবকনশাস মাইন্ড হলো মনের সেই অংশ, যা আমাদের অভিজ্ঞতা, স্মৃতি এবং আবেগের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের অনুভূতির কেন্দ্র, যা সচেতনভাবে উপলব্ধি না করেও আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে। সাবকনশাস মাইন্ড আমাদের প্রতিদিনের ঘটনা, দুর্ঘটনা, সফলতা, ব্যর্থতা থেকে প্রতিনিয়ত মস্তিষ্কের মিডিয়াল টেম্পোরাল লোব এবং অন্যান্য অঞ্চলে তথ্য ও অভিজ্ঞতাগুলোকে সংরক্ষণ করে রাখে, যা জীবনের নানা পরিস্থিতিতে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক ব্যক্তির যদি ছোটবেলায় তুলনায় বেশি সমালোচনা শোনার অভিজ্ঞতা থাকে, তবে তার সাবকনশাস মাইন্ড সেই অভিজ্ঞতাকে ধারণ করে। বড় হওয়ার পর অথবা নতুন কিছু করার সময় তাকে মনে করিয়ে দেয় যে তুমি তো পারবে না, তোমাকে দিয়ে হবে না। তার মনের অজান্তেই সে হেরে যায়। এতে করে সে তার ক্ষমতা বা আত্মবিশ্বাস নিয়েও সন্দেহে পড়ে যায়। কিন্তু মানুষটি নিজের সঙ্গে নিজে কথা বললে, নিজেকে ভালোবাসলে হার না মেনে বারবার কাজটি করার চেষ্টা করবে। মানুষের মন একটি গভীর ও রহস্যময় ক্ষেত্র; যেখানে চিন্তা, অনুভূতি আর অভ্যাসের জালে জড়ানো সম্পর্ক তৈরি হয়।

আপনি নিজেকে ভালোবাসতে পারছেন কিনা, তা নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। না পারলে কেন পারছেন না? আপনার ভালো দিক কি আছে? কেউ কি আছে যে আপনার প্রশংসা করে? যদি না করে, তাহলে তারা আপনার কি কি খারাপ দিক নিয়ে কথা বলে? ধরেন কেউ যদি বলে যে আপনি অলস, আপনি কি আসলেই অলস হয়ে গেলেন? আপনি কি দিন–রাত সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন? যদি না থাকেন তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি অলস নন। যদি আপনি সারা দিন শুয়ে থাকেন এবং প্রমাণিত যে আপনি অলস, তাহলে আগে ডাক্তার দেখিয়ে নিন যে আপনার কোনো শারীরিক অসুস্থতা আছে কিনা।

যদি না থাকে, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কেন সারা দিন শুয়ে থাকেন? নিজেকে অলস প্রমাণ করার জন্য, নাকি মানুষটা আপনাকে অলস বলছে, তাকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য? আপনি আপনার নিত্যদিনের রুটিনের ভেতর থেকে এমন কি কাজ করতে পারেন, যা একটু অন্যরকম? নিজের জন্য কি করতে পারেন, আজকের দিনটিতে যা দেখে মনে হবে, আমিতো আমাকে ভালোবাসতেই পারি। না পারলে একটু তো চেষ্টা করতে পারি। মনে রাখবেন সফলতার চাবিকাঠি হল সেলফ লাভ। নিজেকে ভালোবাসুন।

লেখক: একাধারে নেচারোপ্যাথিক ডাক্তার, পুষ্টিবিদ, কিনেজিওলজিস্ট, ট্রমা রিলিজ থেরাপিস্ট, অটিজম স্পেশালিস্ট, মাইন্ড সেট ট্রেইনার। তিনি কাজ করছেন লন্ডনের ১০, হারলে স্ট্রিট ক্লিনিক এবং অনলাইনেও আছে তাঁর উপস্থিতি।
ই–মেইল: [email protected] ওয়েবসাইট: https://shahmikaagoon.com

ছবি: পেকেজেলসডটকম

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৪৪
বিজ্ঞাপন