সব সময় যে সঙ্গীর পাশে একই বিছানায় ঘুমাতেই হবে, এটি বাধ্যতামূলক নিয়ম সব দম্পতির জন্য ভালো না–ও হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত আরামের একদম মৌলিক বিষয় হচ্ছে ঘুম। আর সেই ঘুমের যদি ব্যাঘাত ঘটে কারও রাতভর নাসিকা গর্জনে, তবে সারা দিন ক্লান্তি ভর করবে। আবার বছরের পর বছর এমন চলতে থাকলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেওয়াও অস্বাভাবিক নয়। আবার ঘুমের আগে একটু বই পড়তে পছন্দ করেন আপনি। কিন্তু আপনার সঙ্গী রাত জাগেন না, আর ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলে তাঁর চলেই না। তাই নাইট লাইট জ্বালানোর কোনো অবকাশ নেই।
অগত্যা সারা জীবনের অভ্যাসটা জলাঞ্জলি দিতে হয়। আর একসময় মনে আসে অপূর্ণতার অনুভূতি। ঘুমের আরেকটি প্রভাবক হচ্ছে ঘরের তাপমাত্রা। এদিকে ফ্যানের স্পিড আর এসির তাপমাত্রা নিয়ে চলছে যুদ্ধ। শরীরের জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা না পেয়ে ঘুমের মধ্যে আপনি ঘেমে নেয়ে উঠলেন, অথবা শীতে থরথর কাঁপতে কাঁপতেই রাত পার করলেন। রাত জেগে কাজ করে এসে ঘুমালেন, আপনার প্রভাতবান্ধব সঙ্গী কাকডাকা ভোরে উঠে ঘরের পর্দা সরিয়ে দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলেন। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এমন হলে দুজন মানুষের মধ্যে সমস্যা তৈরি হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
প্রতিটি জুটি আলাদা। আর প্রতিটি মানুষের জীবনযাপন আর প্রয়োজনও। তাই বাঁধাধরা নিয়মকে বাধ্যতামূলক ধরে নিয়ে তিক্ততা না বাড়িয়ে বরং নিজেদের জন্য যেটা ভালো, সেটাই করতে হবে। আর হতে পারে তা আলাদা বিছানায় ঘুমানোর মতো বিষয়ও।
একসঙ্গে ঘুমালেও যে সমস্যা হবে সব সময়, সে রকম নয়। তবে নিজের মতো করে আরাম করে আলাদা বিছানায় ঘুমানোর রয়েছে কিছু বাস্তবসম্মত উপকারিতা৷ যেমন—
পূর্ণ বিশ্রাম পাওয়া
নিজেকে সময় দিতে পারা
বিছানায় আরাম করে যথেষ্ট জায়গা নিয়ে ঘুমানো
ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত না ঘটা
সারাক্ষণ একসঙ্গে না থাকায় আকর্ষণ বাড়া
ঘুমের সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খিটমিট লাগা থেকে বাঁচা
বিভিন্ন কারণেই অনেকে আলাদা ঘুমাতে পছন্দ করতে পারেন। তাঁর দিকটাও ভাবা উচিত। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে—
সঙ্গীর সশব্দে নাক ডাকা
এ রীতিমতো এক কমন সমস্যা। প্রায়ই আমরা শুনি যে এক পক্ষের নাক ডাকার শব্দে আরেক পক্ষ ঘুমবঞ্চিত হয় রোজ রাতেই। অনেকের ঘুম বেশ পাতলা হয়। আর গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের বেলায় শব্দের বিষয়ে সংবেদনশীল বেশির ভাগ নারী। আর এদিকে নাক ডাকার প্রবণতা পুরুষদের বেশি। সহজ হিসাব বলছে, নারীরা পারলে আলাদা বিছানায় গিয়ে অবশ্যই আরাম করে ঘুমাতে চাইবেন নাক ডাকা থেকে বাঁচতে। তবে সঙ্গীর স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্য সমস্যা আছে কি না, তা পরীক্ষা করাতে হবে এ ক্ষেত্রে।
একা ঘুমাতে আরাম লাগে
ঘুম তো আরামেরই জন্য। মানসিক আর শারীরিক ক্লান্তি একমাত্র রাতের পরিপূর্ণ ঘুমই দূর করতে পারে। সারা জীবন আলাদা নিজের মতো করে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে সব সময় সঙ্গীর পাশে ঘুমালে আরাম লাগে না অনেকেরই। নড়াচড়া বা ঘুমের মধ্যে গায়ে হাত–পা তুলে দেওয়া যে ভালো লাগতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই।
পছন্দসই বিছানা বালিশ বা ঠান্ডা–গরমের চাহিদা আলাদা
কেউ সাদা বেডশিট পছন্দ করেন। কেউ লেপ, কেউ কাঁথা। মশারি খাটালে কারও দমবন্ধ লাগে, আবার কেউ সেটি ছাড়া ঘুমাতেই পারেন না। ফ্যানের স্পিড আর এসির তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা তো আলাদা হতেই পারে। এত কিছু মানিয়ে নিতে গিয়ে ঘুমের বাজে বারোটা।
এমন সব কারণে জীবনের প্রয়োজনে আলাদা ঘুমালেই যে দাম্পত্য জীবনে সমস্যা আছে তা নয়। আলাদা বিছানা মানেই আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং অন্যান্য সময়ে দুজন কোয়ালিটি টাইম কাটিয়ে রাতের ঘুম আরামে নিজের মতো করে দেওয়া খারাপ কিছু নয়। এর পুরোটাই নির্ভর করে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপরে।
তথ্যসূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস ডট কম