আজ শাশুড়ি দিবস, একজন ভালো শাশুড়ির যে ৫টি গুণ থাকতেই হবে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নারী হোন বা পুরুষ, আপনার বিবাহিত জীবনে স্বামী বা স্ত্রীর পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি কিন্তু আপনার শাশুড়ি। তিনিই চাইলে আপনার দাম্পত্যকে গড়তে পারেন, আবার ভাঙতেও পারেন। আজ ২৬ অক্টোবর শাশুড়ি দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই দিবসের উদ্ভব হলেও আমাদের জীবনে এই মানুষটির গুরুত্ব ও প্রভাব বিবেচনায় আজকে আপনার শাশুড়ির দিকে একটু মনোযোগ দিন। আবার আপনি যদি শাশুড়ি হন, তাহলে একটু দেখে নিন, একজন ভালো শাশুড়ির কোন ৫টি গুণ থাকতেই হবে। তবে তার আগে মাদার ইন ল ডে-র ইতিহাস দেখে নিই একটু।

বিবাহিত জীবনে স্বামী বা স্ত্রীর পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি কিন্তু আপনার শাশুড়ি
বিবাহিত জীবনে স্বামী বা স্ত্রীর পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি কিন্তু আপনার শাশুড়ি

মাদার-ইন-ল ডে কবে শুরু হলো

১৯৩৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এক সংবাদপত্রের সম্পাদক জিন হাউই প্রথম মাদার ইন ল ডে-র সূচনা করেন। তখন সেদেশে সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের সংস্কৃতি তুঙ্গে উঠেছে। আর সেই সমাজে স্বামী বা স্ত্রীর মাকে এড়িয়ে চলা আর সে নিয়ে নানা কৌতুকেরও প্রচলন ঘটে। এই বিষয়গুলো এখনও একই গুরুত্ব আর একই আবেদন রাখে সারা বিশ্বের সব সমাজেই। আমাদের সমাজও তার ব্যতিক্রম নয়। বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ এখানে খুবই কমন। অনেক সময় তা আর হাসি-কৌতুকের পর্যায়ে থাকে না। ভয়ংকর দাম্পত্য কলহ, অশান্তি, মানসিক ট্রমা থেকে শুরু করে হত্যা আর আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে পুরুষের জীবনেও একজন নেতিবাচক শাশুড়ি নিয়ে আসতে পারেন মহা বিপর্যয়। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এক তারকার হত্যা মামলায় উঠে এসেছে তাঁর শাশুড়ির নাম। আচ্ছা, শাশুড়ি কি সব সময় এমন ভিলেন হন? একদমই তা নয়। এ নিয়ে বরং আলোচনা খুব কম হয়। একজন ভালো শাশুড়ি দুজন জীবনসঙ্গীর দাম্পত্যকে অন্য লেভেলে নিয়ে যেতে পারেন সুখ-শান্তি আর ভালো থাকার দিক থেকে। কিন্তু কেমন হন এই ভালো শাশড়িরা?

বিজ্ঞাপন

আপনার কী মনে হয়? দেখুন তো এখানে যেই গুণগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোই একজন মাকে ভালো শাশুড়ি করে তোলে কিনা?

১. সীমারেখা স্থাপন

অদ্ভুত হলেও সত্য, এই একটি গুণ থাকলেই ভালো শাশুড়ি হওয়া যায়। জানতে হবে, কোথায় থামতে হবে। সেটা সবকিছুতেই। এই বাউন্ডারি ধরে রাখতে হবে প্রাইভেসির ক্ষেত্রে, মতামত প্রতিষ্ঠা করায় আর হুকুমজারিতে তো বটেই।

প্রাইভেসি থেকে শুরু করে সব ব্যাপারেই একটা সীমারেখা মেনে চললে ভালো
প্রাইভেসি থেকে শুরু করে সব ব্যাপারেই একটা সীমারেখা মেনে চললে ভালো

২. জামাই মানেই ছেলে আর বউ মানে মেয়ে- এই ধারনা থেকে বের হওয়া

মেয়ের জামাইকে ছেলে আর ছেলের বউকে মেয়েই হতে হবে কেন?ছেলে-মেয়ে হলে বায়োলজিকাল দিক থেকে আর এত বছরের সম্পর্কের কারণে মায়া, আদর আর পক্ষপাতিত্ব আসে ন্যাচারাল ভাবেই।

জামাই বা বউকে তার মতো করেই দেখুন, তার সঙ্গে সম্পর্ক গ.ড়ে তুলুন
জামাই বা বউকে তার মতো করেই দেখুন, তার সঙ্গে সম্পর্ক গ.ড়ে তুলুন

সেই জায়গা মুখে বললেও অন্তর থেকে কাউকে দেওয়া সম্ভব না। ছেলের বউ বা মেয়ের জামাই হিসেবেই কাউকে স্নেহ ও কেয়ার করা যায়, তার সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। মা-বাবার প্রতি ছেলে-মেয়ের সমান দায়িত্ব তো তাদের নয়।

বিজ্ঞাপন

৩. স্বাধীনতা ও ছাড় দেওয়া

ছেলে বা মেয়ে খুবই বাধ্যগত ও অনুগত হতেই পারে। সেই ফর্মুলা ছেলের বউ বা মেয়ের জামাইয়ের ওপর খাটাতে গেলেই বিপত্তি ঘটে। মনে রাখতে হবে, বউ আর জামাই, যারা নতুন এসেছে পরিবারে, তারা স্বাধীন স্বত্ত্বা। সবকিছুতে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা কাটিয়ে ছাড় ও স্বাধীনতা দিলে গড়ে উঠবে সুন্দর সম্পর্ক।

নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা কাটিয়ে ছাড় ও স্বাধীনতা দিলে গড়ে উঠবে সুন্দর সম্পর্ক
নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতা কাটিয়ে ছাড় ও স্বাধীনতা দিলে গড়ে উঠবে সুন্দর সম্পর্ক

৪. বউ বা জামাইকে প্রাপ্য সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া

সম্মান দিলেই সম্মান পাওয়া যায়। আর এই সম্মান শুধু ছোটরাই বড়দেরকে দেবে তা নয়। মেয়ের জামাই বা ছেলের বউকে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও গুরুত্ব দিন। তার মতামত শুনুন ও মাঝে মাঝে নিজের ভিন্নমত পাশে রেখে সেটিকেই গ্রহণ করুন। তার সব পছন্দ, আগ্রহ, বিশ্বাস বা মতামতকে ছোট করবেন না বা উড়িয়ে দেবেন না। প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, বলেছেন নিউটন। আর সেটা আপনি পারিবারিক জীবনেও টের পাবেন।

৫. বউ বা জামাইয়ের পরিবারকে সম্মান করা

নতুন পরিবারে বিয়ে করলেই কারও আগের পরিবার ছেড়ে আসে না কেউ। এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। তাকে বলবেন তুমি আপন, তুমি আমাদের পরিবারের সদস্য আর তাদের পরিবার, পরিবারের খাদ্যাভ্যাস, কালচার, ভাষা বা তাদের পরিবারের সদস্যকে সম্মান না করলে আপনিও আখেরে সম্মান পাবেন না।

শাশুড়িরা আছেন মানবজাতির শুরু থেকেই। শাশুড়ি অনেক সময় আপনার সম্পর্কের সবচেয়ে বড় শত্রু হতে পারেন। আবার উল্টোটাও হতে পারে। তিনিই হতে পারেন আপনার সবচেয়ে বড় সহায়ক, কঠিন সময়ে আপনাদের সম্পর্কের এক প্রকৃত সমর্থক। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মা তার সন্তানের মঙ্গলই চান।

বউ বা জামাইয়ের পরিবারকে অসম্মান করে কথা বললে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
বউ বা জামাইয়ের পরিবারকে অসম্মান করে কথা বললে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

কীভাবে উদযাপন করবেন মাদার ইন ল ডে

দূরে থাকলে শাশুড়িকে একটা ফোন দিন, আন্তরিকভাবে জিজ্ঞেস করুন কেমন আছেন। বাড়িতে থাকলে তো সামনে গিয়েই উইশ করা যায়, তার পছন্দের দিকগুলো খেয়াল রেখে সময় কাটানো যায়।

সব ব্যাপারে খোলামেলা ও সহজভাবে কথা বলুন, নিজেও শাশুড়িকে আপন করার উদ্যোগ নিন
সব ব্যাপারে খোলামেলা ও সহজভাবে কথা বলুন, নিজেও শাশুড়িকে আপন করার উদ্যোগ নিন

যদি আপনার শাশুড়ি আপনার জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে থাকেন, তাহলে তাঁকে বলুন আপনি তাঁর প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। তবে সব সম্পর্কই দ্বিপাক্ষিক। আপনিও জামাই বা বউ হলে শাশুড়ির সঙ্গে সহজ ও সুন্দর একটি স্নেহময় সম্পর্কের শুরুটা করতে পারেন প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে। কারণ সব শাশুড়িই একসময় বউ ছিলেন।

সূত্র: ডেইজ অব দ্য ইয়ার

ছবি: জেমিনাই এআই দিয়ে তৈরি

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৩৮
বিজ্ঞাপন