অনেক মানুষকেই দেখা যায় যে তাঁরা সরাসরি কিংবা ফোনকলে যতটা মনের ভাব প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তার চেয়ে বেশি পছন্দ করেন টেক্সট করে সব কথা বলতে। এ ধরনের মানুষকেই বলা হয় টেক্সট্রোভার্ট। তাঁরা টেক্সট করতে এতটাই স্বাচ্ছন্দ্য যে মাঝেমধ্যে কোনো চিন্তাভাবনা না করেই মেসেজেই অনেক কিছু বলে ফেলেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, এতে অনেক ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। আসলে এমন খুদে বার্তায় মনের ভাব সঠিকভাবে বোঝানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে সব কথা বলার জন্য টেক্সটিং বেছে নেওয়া মোটেও সঠিক নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, যেসব কথা টেক্সট মেসেজে বললে হতে পারে চরম ভুল-বোঝাবুঝি।
স্বীকারোক্তি
স্বীকারোক্তি হলো আপনি যখন কাউকে আপনার মনের কথাগুলো জানান। যেমন হতে পারে, আপনি কারও প্রেমে পড়েছেন আর তাঁকে সে কথা জানাতে চান। টেক্সট্রোভার্টদের জন্য এর উত্তম মাধ্যম হলো টেক্সট মেসেজ। কিন্তু এটি আসলে আপনার বার্তাকে অনেকখানি দুর্বল করে দেয়। আপনি যখন কারও সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন, তখন আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কাজ করে। সেই সঙ্গে চোখের ভাষাও আপনার স্বীকারোক্তিকে বেশ শক্তিশালী করে তোলে। এটি মেসেজে মোটেও সম্ভব নয়। তাই কাউকে এ ধরনের কথা বলার থাকলে অবশ্যই সরাসরি কথা বলুন। তা-ও সম্ভব না হলে কমপক্ষে সময় নিয়ে ফোন করে কথা বলতে পারেন।
কারও কাছে ক্ষমা চাওয়া
কারও কাছে যদি আপনি মন থেকে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবেন কিংবা ভুল-বোঝাবুঝির একেবারেই ইতি টানতে চান, তবে মেসেজের মাধ্যমে সরি না বলাই ভালো। এতে আপনার আবেগ তো প্রকাশ পাচ্ছেই না, অন্যদিকে অপরজনের কাছে এটি গুরুত্বহীন বা দায়সারা শোনাতে পারে। তাই কারও কাছে ক্ষমা পেতে চাইলে টেক্সট মেসেজ কখনোই ভালো কোনো মাধ্যম নয়। সংবেদনশীল কথাগুলো সরাসরি বলাই ভালো।
ব্রেকআপ
আমরা অনেক সময় কারও সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে চাইলে টেক্সট মেসেজকেই মাধ্যম হিসেবে বেছে নিই। তবে ব্যাপারটি বেশ অমানবিক। পাশাপাশি এটি অপরজনের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। এতে আপনার যে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি রয়েছে, এটিও প্রকাশ পায়। কারও সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করতে হলে অবশ্যই তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলুন। আপনার মনের ভাব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে প্রকাশ করুন। এতে দুজনের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকবে।
কোনো গোপন কথা
এই স্ক্রিনশট আর হ্যাকিংয়ের যুগে কোনো গোপন কথা বলার জন্য অবশ্যই টেক্সটিং বোকামির কাজ। কারণ, বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিও বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটি সব সময় মাথায় রাখতে হবে। আপনি মেসেজে এসব কথা বললে যাঁকে বলছেন, তিনি খুব সহজেই স্ক্রিনশট নিয়ে অন্য কাউকে পাঠাতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে আপনার মানসিক পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং প্রথম থেকেই সতর্ক থাকা ভালো।
সুসংবাদ
কোনো সুসংবাদ পাওয়ামাত্রই আমরা আমাদের আপনজনদের জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আর সামনেই পড়ে থাকে মুঠোফোন। খুব সহজেই একটি টেক্সট করে দিই। কিন্তু এতে আপনি একটি সুন্দর ও স্মরণীয় সময় থেকে বঞ্চিত হন। কারণ, যখন এ ধরনের সংবাদ কাউকে সরাসরি জানানো হয়, তখন আপনার ও তাঁদের মধ্যে যে এক আনন্দঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়, তা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে একেবারেই সম্ভব নয়।
টেক্সট মেসেজের মতো সুবিধাজনক যোগাযোগমাধ্যম আসলেই নেই। এখন এর জন্য রয়েছে অনেক ধরনের মেসেঞ্জার সেবা। তারপরও কিছু কথা আসলে চোখে চোখ রেখে বা হাতটি ধরে বলার জন্যই তুলে রাখা ভালো। এতে আমরা বেশ কিছু ভুল-বোঝাবুঝির হাত থেকে বেঁচে যাব।
ছবি: পেকজেলস ডট কম