
গত দুই-তিন দিনে যেন বাংলাদেশের, বিশেষ করে বৃহত্তর ঢাকার মানুষের জীবনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার ২১ নভেম্বর সকালের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প শুধু মাটি বা দালান নয়, আমাদের অন্তরও কাঁপিয়ে দিয়ে গিয়েছে প্রবলভাবে। এদিকে অনেক দেশেই কিন্তু এমন ভূমিকম্প হওয়া বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার বলে ধরে নেওয়া হয়। পৃথিবীর যে দেশগুলো ভৌগলিক অবস্থানের দিন থেকে সক্রিয় ফল্ট লাইনের ওপর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অফ ফায়ার অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়, যার ফলে সেসব দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভূমিকম্প একটি সাধারণ ঘটনা। এখানে এমন ১০টি দেশ উল্লেখ করা হলো যেগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ

চীন
একাধিক টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষস্থলের ওপর অবস্থিত হওয়ায় চীনে বহু গুরুতর ভূমিকম্প হয়েছে, যার মধ্যে ধ্বংসাত্মক ২০০৮ সালের সিচুয়ান ভূমিকম্পও রয়েছে। আর ছোটখাট ভূমিকম্প লেগেই থাকে এর পাহাড়ি অঞ্চলে।
ইন্দোনেশিয়া
প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অফ ফায়ারের অংশ হওয়ায় এই দ্বীপদেশে ১২০টিরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভূমিকম্প ঘটে থাকে।
ইরান
একাধিক প্লেট সীমান্ত ও ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত হওয়ায় ইরানে অনেক ভূমিকম্প হয়।
জাপান
প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট ও নর্থ আমেরিকান প্লেটের মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় জাপানে ভূমিকম্প খুবই ঘনঘন ঘটে, এবং দেশটি উন্নত ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
মেক্সিকো
মেক্সিকো বছরে সর্বাধিক ভূমিকম্প হওয়া দেশের তালিকায় প্রায়শই শীর্ষে থাকে। ২০২৪ সালেই ৪.০ মাত্রা বা তার বেশি প্রায় ২,০০০টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
ফিলিপাইন
প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অফ ফায়ারের আরেকটি দেশ ফিলিপাইন, যেখানে ঘনঘন এবং অনেক সময় শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়।
চিলি
দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর অবস্থিত, এবং নিয়মিতভাবে শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পসহ উল্লেখযোগ্য ভূকম্পন ঘটে।

তুর্কিয়ে
প্রধান ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থানের কারণে তুর্কিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি।
গুয়াতেমালা
একাধিক টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় গুয়াতেমালায় প্রচুর ভূমিকম্প ঘটে।
পেরু
পেরুতে প্রতি বছর বহু ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়, যা দেশের ভূমিকম্প সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থান নির্দেশ করে।
কীভাবে ঘন ঘন ভূমিকম্পের সঙ্গে মানিয়ে নেন এই দেশগুলোর মানুষ
এই দেশগুলো উন্নত নির্মাণবিধি ও জনসচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে শিখেছে। তাঁরা ভূমিকম্প মোকাবিলা করেন প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়ের মাধ্যমে। এর মধ্যে আছে ভূমিকম্প-সহনশীল স্থাপনা তৈরি, ব্যক্তিগত ও কমিউনিটি জরুরি পরিকল্পনা তৈরি, বাড়িকে ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত করা, এবং নিয়মিত মহড়া করে নিরাপত্তা অনুশীলন করার অভ্যাস গড়া। ভূমিকম্প হলে মানুষকে ড্রপ, কভার, অ্যান্ড হোল্ড অন করতে হয় আর সেই সঙ্গে তথ্য জানতে থাকা, আঘাতের যত্ন নেওয়া, এবং পুনরুদ্ধারের সময় একে অন্যকে সহায়তা করা জরুরি।
বাড়ি সুরক্ষিত করা: লম্বা আসবাবপত্র ও ভারী জিনিসপত্র দেয়ালে আটকে রাখা, ওয়াটার হিটার ও গ্যাসের যন্ত্রপাতি সুরক্ষিত করা, ভারী বা ভঙ্গুর জিনিস নিচের তাকে রাখা
জরুরি কিট তৈরি করা: পানি, শুকনো খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স, টর্চলাইট, ব্যাটারি চালিত বা হাত-ঘোরানো রেডিও, এবং অতিরিক্ত ব্যাটারি—এগুলো সংগ্রহ করা
পরিবারের সবাই পরিকল্পনা তৈরি : আলাদা হয়ে গেলে কোথায় দেখা করবেন এবং কীভাবে যোগাযোগ করবেন তা আগে থেকেই ঠিক করেন ও নিয়মিত এই পরিকল্পনা অনুশীলন করেন এসব দেশের অনেকেই।

স্থাপনা নির্মাণ ও শক্তিশালীকরণ: ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় এসব দেশের সরকার ও কমিউনিটিগুলো সাধারণত এমন বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে যেখানে ভবনগুলোকে ভূমিকম্প-সহনশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুরোনো ভবনগুলোকে সংস্কার করে আরও মজবুত করা হয় নিয়মিত।
সবচেয়ে বড় কথা, এসব দেশের মানুষেরা ঘন ঘন হওয়ায় ভূমিকম্পের সঙ্গে অভ্যস্ত। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে তারা।
সূত্র: আইল্যান্ডস ডট কম, ন্যাশনাল জেনারেল
ছবি: ইন্সটাগ্রাম