বিশ্বের একমাত্র মশামুক্ত দেশে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেল তিনটি মশা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পরিবেশ বিজ্ঞানীদেরকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আইসল্যান্ডে প্রথমবারের মতো মশা পাওয়া গেছে। আর দেশটি এই বছরের বসন্তে রেকর্ড গরমের অভিজ্ঞতা অর্জন করার পরই ইতিহাসে প্রথম তিনটি মশার দেখা মিলল এখানে।

এই প্রথম তিনটি মশা পাওয়া গেল এই ছবির মতো দেশে
এই প্রথম তিনটি মশা পাওয়া গেল এই ছবির মতো দেশে

পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ বিয়র্ন হ্যাল্টাসন গত সপ্তাহে কয়েক রাত ধরে লাল ওয়াইনে ভেজানো দড়ি ব্যবহার করে মথ ও প্রজাপতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তখনই তিনি মশাগুলো দেখতে পান। হ্যাল্টাসন দুটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ মশা খুঁজে পান, যেগুলো পরবর্তীতে কিউলিসেটা অ্যানুলাটা প্রজাতির বলে নিশ্চিত করা হয়। এটি এমন কিছু প্রজাতির মধ্যে একটি, যেগুলো শীতকালেও টিকে থাকতে পারে।এই প্রথম মশা আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত আইসল্যান্ড ছিল পৃথিবীর মাত্র দুটি মশামুক্ত স্থানের একটি। আর তা এর শীতল আবহাওয়ার কারণেই মূলত। অন্য মশামুক্ত অঞ্চলটি হলো অ্যান্টার্কটিকা। আসলে জনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে তাই আইসল্যান্ডকেই একমাত্র মশামুক্ত দেশ বলা হত এতদিন। মশাগুলো পাওয়া গেছে কিয়োস নামের একটি হিমবাহ উপত্যকায়, যা রাজধানী রেইকিয়াভিকের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

বিজ্ঞাপন

হ্যাল্টাসন স্থানীয় বন্যপ্রাণী বিষয়ক একটি ফেসবুক পেজে ছবিসহ এই আবিষ্কারের খবর শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “লাল ওয়াইনের ফিতায় এক অদ্ভুত মাছি”তিনি আরও বলেন, “আমি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গিয়েছিলাম যে, এটি আগে কখনও দেখিনি… মনে হচ্ছে শেষ মশামুক্ত দুর্গটিরও পতন হয়েছে।” পরে তিনি মশাগুলো আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক ইতিহাস ইনস্টিটিউটে পাঠান। সেখানকার পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস আলফ্রেডসন নিশ্চিত করেন যে এটি সত্যিই মশা।

কিউলিসেটা অ্যানুলাটা প্রজাতির মশার দেখা মিলেছে মশামুক্ত আইসল্যান্ডে
কিউলিসেটা অ্যানুলাটা প্রজাতির মশার দেখা মিলেছে মশামুক্ত আইসল্যান্ডে
ছবি: উইকিপিডিয়া


আলফ্রেডসনের মতে, এই প্রজাতি ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে সাধারণভাবে পাওয়া যায়, তবে কীভাবে এটি আইসল্যান্ডে এসেছে তা স্পষ্ট নয়।
বিশ্ব জনসংখ্যা পর্যালোচনার তথ্যমতে, আইসল্যান্ডের ঠান্ডা আবহাওয়া ও স্থির পানির অভাবের কারণে মশা ডিম পাড়তে পারে না। এটিই ছিল দেশটি মশামুক্ত থাকার প্রধান কারণ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এ বছর দেশটিতে তাপমাত্রার একাধিক রেকর্ড ভেঙে যায়। সাধারণত মে মাসে আইসল্যান্ডে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠে না, আর উঠলেও তা দুই-তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। কিন্তু এ বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা ১০ দিন ২০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করেছে।

এছাড়াও মে মাসে আইসল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে—২৬.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৭৯.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট), এগলিসস্টাধির বিমানবন্দরে। গ্লোবাল হিট হেলথ ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক প্রকাশিত জুন মাসের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এমন আবহাওয়াগত পরিবর্তন ঠান্ডা জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নেওয়া সূক্ষ্ম প্রতিবেশ ব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। গত বছর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর, এবং জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে মানুষের কার্যকলাপই নিঃসন্দেহে বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র ও স্থলভাগকে উষ্ণ করেছে।

মে মাসে আইসল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে—২৬.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৭৯.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
মে মাসে আইসল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে—২৬.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৭৯.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)


আলফ্রেডসন বলেন, আগামী বসন্তে আরও পর্যবেক্ষণ চালানো হবে, যাতে বোঝা যায় প্রজাতিটি সত্যিই আইসল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসতি গড়েছে কি না। অন্যদিকে হ্যাল্টাসন অনুমান করছেন, মশাগুলো হয়তো কাছের গ্রুন্দারতাঙ্গি বন্দর থেকে এসেছে। তিনি বলেন, “ওটা আমার বাড়ি থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে, জাহাজ ও কনটেইনারের সঙ্গে নানা কিছুই আসে-যায়, তাই হয়তো সেভাবেই এসেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “কিন্তু যদি তিনটি একসঙ্গে আমার বাগানে চলে আসে, তাহলে আশেপাশে আরও থাকতে পারে।”

সূত্র: বিবিসি

ছবি: ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ২৮
বিজ্ঞাপন