মুসলিম স্থাপত্যকলার ইতিহাসে মসজিদের অবদান বিস্ময়কর। মুসলমানদের বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে মসজিদ নির্মিত হতে থাকে। এই সব মসজিদ নকশা, নির্মাণকৌশল, ভারসাম্য ও অলংকরণের দিক থেকে সৃজনশীল দক্ষতার অপূর্ব স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। উল্লেখ্য, দুই ধরনের মসজিদ নির্মিত হয়।
প্রথমটি সম্পূর্ণ নতুন ভিত্তির ওপর নতুন উপকরণের ব্যবহারে মসজিদ তৈরি করতেন মুসলিম স্থপতিরা, খলিফা অথবা শাসকবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায়। দ্বিতীয় প্রকার ছিল একান্ত প্রয়োজনে স্থানীয় অমুসলমান উপাসনালয় অথবা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে মসজিদ নির্মিত হতো। প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র এবং আরব ভৌগোলিক বিবরণ থেকে জানা যায় যে ত্রয়োদশ শতাব্দীর বহু আগ থেকে বাংলায় মুসলমানদের আগমন ঘটে।
বাংলাদেশে স্থাপত্যকলার ধারা ভারত উপমহাদেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক শিল্পরীতির তুলনায় ব্যতিক্রমধর্মী ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। পাথর ও মার্বেলের অভাবে এবং প্রচুর পলিমাটি দ্বারা ইট তৈরির সুযোগ থাকায় এই অঞ্চলে ইটের সৃষ্ট স্থাপত্যরীতি গড়ে উঠেছে। এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পাথরের আবরণ দেওয়া হতো।
ঢাকা নগরীতে অসংখ্য মসজিদ নির্মিত হওয়ায়, বিশেষ করে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত, এই শহরকে ‘মসজিদের নগরী’ বলা হয়। এক ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট আয়তাকার মসজিদ এক্ষেত্রেবিশেষ প্রাধান্য লাভ করেছে। মোগল স্থাপত্যগুলোতে চিনি টিকরি অর্থাৎ চিনামাটির রঙিন তৈজসপত্রের ভাঙা অংশগুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক, লতাপাতা ও ফুলফলের নকশা দেখা যায় অনেক।
খাঁজে নেহাল জামে মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিস্ট মোগল স্থাপত্যরীতির মসজিদ। খাঁজে মানে সম্পদ আর নেহাল মানে প্রজ্ঞা। সুন্দর অন্তর্নিহিত অর্থের এই মসজিদের নামকরণের নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই কারও।
স্থানীয় লোকজনের কাছে মসজিদটি খুবই জনপ্রিয় ছিল, সে কারণে প্রচুর মানুষ এখানে নামাজ পড়তে আসতেন। পুরোনো মসজিদটি অনেকখানি ভেঙে পড়ার উপক্রম হলে এর সংস্কার করা হয়। সে কারণে এর মিনার ও স্তম্ভগুলোতে আস্তর দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
এর অবস্থান ১৬ নম্বর আবুল হাসনাত রোড। মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করতে আসা রশিদ আকন্দের কাছ থেকে জানা যায়, এই মসজিদ অনেক পুরোনো, মোগল শাসন আমলের একেবারে শেষের দিকে এই মসজিদ নির্মিত হয়।
মসজিদটি ৩৭ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। পরবর্তী সময়ে সাত কাঠা বর্ধিত করা হয়। মসজিদের পেছনে একটি কবরস্থান রয়েছে। সাচ রওজা বড় মসজিদে আড়াই শ বছরের পুরোনো একটি দৃষ্টিনন্দন মিনারও আছে।
মূল মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট, মাঝে গম্বুজটি বড় এবং দুই পাশের দুটি ছোট। মসজিদের ওপরের বড় মিনারের সূক্ষ্ম কাজ খুবই দৃষ্টিনন্দন। মূলত ইসলাম খানের সময়ে চকবাজার বংশাল এলাকার প্রসার ঘটে। ধারণা করা যায়, মসজিদটি সে সময় নির্মিত।
নোট: বর্তমানে এই এলাকা সাত রওজা নামে পরিচিত। কিন্তু আসল নাম হলো সাচ রওজা। সত্যিকারের কবর। কিংবা সত্যপীরের কবর।
ছবি: শিশির চৌধুরী