জীবনে কতবার আমরা ভুল পথে যাই, আবারও নতুন করে পথ তৈরি করি। এরপরও দেখা যায় জীবনের জটিলতা কমে না, কখনো না কখনো বড্ড হতাশ লাগে। কাজ ভালো লাগে না, মানুষ ভালো লাগে না। এরপরও আমাদের বাঁচতে হয়। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবে। নতুন করে কি সব আবার শুরু করা যায়? বদলানো যায় নিজেকে? উত্তর হবে যায়। কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো মাত্র ৩০ দিন নিয়মিত মেনে চললে জীবন অভূতপূর্বভাবে বদলে যাবে। নিজেকেই যেন আর চিনতে পারবেন না আপনি। এবারে সেই অভ্যাসগুলো সম্পর্কে জানা যাক।
নিজেকে বদলানোর প্রথম ধাপ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এ জন্য স্মার্ট (SMART) মেথড ফলো করতে হবে। লক্ষ্য হতে হবে নির্দিষ্ট (Specific), পরিমেয় (Measurable), অর্জন করা যায় এমন (Achievable), প্রাসঙ্গিক (Relevant) ও নির্ধারিত সময়ে পূরণ করার মতো (Time Bound)। বড় বড় লক্ষ্যগুলোকে প্রতিদিনের জন্য ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। এতে আপনি কাজের প্রতি মনোযোগী হবেন, অনুপ্রেরণা পাবেন এবং নিজেকে বদলানোর জন্য সঠিক পথে থাকবেন।
নিজেকে নিয়ে ভাবা বড় হওয়ার খুব শক্তিশালী একটি মাধ্যম। প্রতিদিন নিজের ভাবনা, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা জার্নাল হিসেবে লিখে রাখুন। এতে আপনি আপনার মানসিক শক্তি, দুর্বলতা, গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনগুলো করতে হবে—সব সম্পর্কে অবহিত থাকবেন, যা আপনাকে বদলাতে সাহায্য করবে।
যে ব্যক্তি ভাবে তাকে বড় হতে হবে, তারা নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে নিজের যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তাকে বদলানোর ক্ষমতা রাখে। তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, হার থেকে শেখে, বড় হওয়ার পথে যত বাধা আসে, সব অতিক্রম করে। এমন মাইন্ডসেট তৈরির জন্য নেতিবাচক চিন্তাকে দূরে রেখে সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে।
২১/৯০ নামে একটি নিয়ম আছে। এ নিয়মে বলা হয় ২১ দিন লাগে কোনো নতুন অভ্যাস তৈরি করতে এবং ৯০ দিন লাগে সেই অভ্যাস জীবনে টিকিয়ে রাখতে। তাই প্রথমেই আপনি চিন্তা করুন কী ধরনের অভ্যাস আপনি তৈরি করতে চাচ্ছেন। যেমন প্রতিদিন ব্যায়াম করা, হাঁটা, বই পড়া অথবা মননশীলতা চর্চা করা। এবার এই অভ্যাসগুলোকে রুটিন বানিয়ে ফেলুন। যেকোনো ছোট ছোট সফলতাকে উদ্যাপন করতে শিখুন।
কোনো কাজকে ভয় পাওয়া এবং নতুন কাজ শিখতে চাওয়া আপনাকে বড় ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে। খুব ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, যেগুলো আপনাকে কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলবে, যেমন অচেনা কারও সঙ্গে হুট করে নিজের শখ নিয়ে কথা বলতে থাকা। নিজের ভেতরের এই অপ্রস্তুত ভাব যদি দূর করে ফেলতে পারেন, তাহলে বড় বড় চ্যালেঞ্জ নেওয়া আপনার জন্য সহজ হবে।
আপনার আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা আপনার ব্যক্তিগত উন্নতিতে সাহায্য করবে। খুঁজলেই এমন মেন্টর, রোল মডেল ও সাপোর্টিভ বন্ধু পেয়ে যাবেন যারা আপনাকে আপনার ভালোর জন্য উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করবে। এ জন্য নানা ধরনের কর্মশালায় যোগ দিন, ক্লাবে জয়েন করুন বা এমন পছন্দের কাজ করুন, যেগুলো আপনাকে বড় হতে সাহায্য করবে।
আপনি যখন নিজেই নিজের যত্ন নেবেন, তখন দেখবেন স্ট্রেস কন্ট্রোল করতে পারছেন, ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারছেন এবং লক্ষ্য অর্জন করতে পারছেন। স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, ইয়োগা ও ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন।
বড় হতে হতে হেরে যাওয়া জীবনের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। ভয় পাওয়ার বদলে শিখতে পারবেন এটি বিশ্বাস করুন। যখনই কোনো ভুল হবে, তখনই ভাববেন, ‘এই ভুল থেকে আমি কী শিক্ষা পেলাম?’ অথবা ‘এর চেয়ে ভালো আমি কীভাবে করতে পারি?’ নিজের কাছে নিজে সৎ থাকুন এবং জেনে রাখুন হেরে যাওয়া মানেই হারিয়ে যাওয়া নয়।
সূত্র: থট ক্যাটালগ